মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় সমাবেশ ৫৮তম বিশ্ব ইজতেমা গতকাল শুক্রবার টঙ্গীর তুরাগ তীরে শুরু হয়েছে। লাখো মুসল্লির উপস্থিতিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে তুরাগের তীর। গতকাল শুক্রবার ইজতেমা ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়েছে সর্ববৃহৎ জুমার নামাজ। জুমার নামাজে দেশের লাখো লাখো মুসল্লি অংশগ্রহণ করেন। গতকাল শুক্রবার বাদ ফজর আম বয়ানের মাধ্যমে তাবলীগ জামাতের এই আয়োজনের মূল কার্যক্রম শুরু হলেও ইজতেমায় অংশ নিতে মানুষের ঢল নামে গত বৃস্পতিবার থেকেই। সেদিনই পরিপূর্ণ হয়ে যায় ইজতেমা ময়দান। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে দলে দলে মুসল্লিরা হাজির হচ্ছেন ময়দানে। ভোর থেকেই বিভিন্ন যানবাহনের মাধ্যমে টঙ্গী ও ঢাকার আশেপাশের জেলা থেকে মানুষকে টুপি পাঞ্জাবি পড়ে ইজতেমার ময়দানের দিকে ছুটতে দেখা গেছে। ইজতেমা মুখি মুসল্লিদের এই ঢল অব্যাহত থাকবে আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত।
তাবলিগ জামাতের শুরায়ী নেজামের মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ্ রায়হান জানান, গত বৃহস্পতিবার বাদ মাগরিব ভারতের মাওলানা ইব্রাহিম দেওলার আম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বিশ্ব ইজতেমার আনুষ্ঠানিকতা। গতকাল সকালে ফজরের নামাজের পর আম বয়ান করেন পাকিস্তানের মাওলানা জিয়াউল হক। তাৎক্ষণিকভাবে তা বাংলায় অনুবাদ করেন মাওলানা নুরুর রহমান। তিনি আরো জানান, গতকাল পৌনে ১০টা থেকে খিত্তায় খিত্তায় শুরু হয় তালিমের আমল। তালিমের আগে মোজাকেরা (আলোচনা) করেন ভারতের মাওলানা জামাল। এছাড়াও বিশেষ কিছু অনুষ্ঠান হয়। যেমন, সকাল ১০টা থেকে শিক্ষকদের বয়ানের মিম্বারে বয়ান করেছেন ভারতের মাওলানা ফারাহিম। ছাত্রদের সঙ্গে নামাজের মিম্বারে বয়ান করছেন প্রফেসর আব্দুল মান্নান খাওয়াছদের (গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ) মাঝে টিনশেড মসজিদে বয়ান করেছেন ভারতের মাওলানা আকবর শরিফ।
এছাড়া দুপুরে বিশ্ব ইজতেমায় দেশের বৃহৎ জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জুমার নামাজে ইমামতি করেন তাবলিগ জামাতের শীর্ষস্থানীয় মুরুব্বি মাওলানা জোবায়ের। জুমার নামাজে অংশ নিতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মুসল্লিরা সকাল থেকে আসতে শুরু করে। ইজতেমার আয়োজক কমিটির সূত্রে জানা গেছে, এই সর্ববৃহৎ জুমার নামাজে ২০ লক্ষাধিক মুসল্লি অংশগ্রহণ করেন। জুমার নামাজের পর বয়ান করেন জর্ডানের মাওলানা শেখ উমর খাতিব। বাদ আসর বয়ান করেন বাংলাদেশের মাওলানা জুবায়ের। এছাড়াও বাদ মাগরিব বয়ান করেন ভারতের মাওলানা আহমেদ লাট।
এদিকে, ইজতেমায় গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত ৭২টি দেশের ২ হাজার ১৫০ জন বিদেশি মেহমান ময়দানে হাজির হয়েছেন। তারা নির্ধারিত খিত্তায় অবস্থান করে দেশ-বিদেশের প্রাজ্ঞ আলেমদের বয়ান শুনছেন বলে জানান শুরায়ে নেজামের মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান।
এছাড়া, ইজতেমা ময়দানে আব্দুল কুদ্দুস গাজী (৬০) ও সাবেত আলী (৭০) নামে দুই মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। আব্দুল কুদ্দুস গাজী খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ডুমুরিয়া বাজার এলাকার লোকমান গাজীর ছেলে। গতকাল দুপুরে তাবলীগ জামাত বাংলাদেশ শুরায়ে নেজামের মিডিয়া সমন্বয়ক মো. হাবিবুল্লাহ রায়হান জানান, গতকাল সকালে গোসল করার সময় আব্দুল কুদ্দুস গাজী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে হাসপাতালে নেয়া হলে ১০টা ৫০ মিনিটে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ইজতেমা ময়দানে অপর মৃত্যুবরণকারী সাবেত আলীর বাড়ি শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার রানী শিমুল গ্রামে। ইজতেমা ময়দানের স্ট্রোক করে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
তাবলীগ জামাতের দুটি পক্ষ মাওলানা জোবায়ের এবং মাওলানা সা’দের অনুসারীদেরমধ্যে বিভেদের কারণে গত কয়েক বছর ধরে দুই পর্বে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়ে আসলেও এবার বিশ্ব ইজতেমা হচ্ছে তিন পর্বে। এর মধ্যে গত শুক্রবার থেকে মাওলানা জোবায়েরের অনুসারীদের অংশগ্রহণে শুরু হয়েছে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। এই পর্বটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে দুই ধাপে। প্রথম পর্বের প্রথম ধাপ গতকাল থেকে শুরু হয়ে আগামীকাল রোববার এবং দ্বিতীয় ধাপ আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ৫ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। এরপর ৮ দিন বিরতি দিয়ে সাদ অনুসারীরা তৃতীয় পর্বের ইজতেমায় অংশগ্রহণ করবেন। তৃতীয় পর্বের ইজতেমা আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে ১৬ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হবে বলে জানিয়েছেন ইজতেমা আয়োজক কমিটি। আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি বাদ মাগরিব প্রশাসনের নিকট ময়দান বুঝিয়ে দিবেন মাওলানা সাদের অনুসারীরা।