• রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫, ০৪:১০ অপরাহ্ন

ফুলবাড়ীতে হিমাগারে আলু রাখতে কৃষকদের তোড়জোড়

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : রবিবার, ১৬ মার্চ, ২০২৫

অমর গুপ্ত, ফুলবাড়ী প্রতিনিধি:- কৃষক মোমিনুল ইসলাম বাড়ী দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার খট্টামাধবপুর ডাঙ্গাপড়া এলাকায়। এবার তিন বিঘা জমিতে আলু আবাদ করেছেন। এলাকার অন্য কৃষকদের সঙ্গে গত বুধবার (১২ মার্চ) দিবাগত রাত ১২টায় একটি ট্রাক্টরে ১৮ বস্তা আলু নিয়ে ফুলবাড়ী উপজেলার রাঙামাটিস্থ ফুলবাড়ী কোল্ড স্টোরেজে এসেছেন। গত বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত সিরিয়ালের কোনো ¯িøপ পাননি। আদৌ আলু হিমাগারে রাখতে পারবেন কি না? তা নিয়েও রয়েছে সংশয়। এতে একদিকে সময়ের অপচয়, অন্যদিকে গুনতে হচ্ছে বাড়তি গাড়ি ভাড়া।

কৃষক মোমিনুল ইসলাম মতো এমন ভোগান্তিতে পড়েছেন একই এলাকার কৃষক এরশাদ আলী, ডাঙ্গাপাড়া এলাকার জাকিরুল ইসলাম, কবির হোসেন, বড়পুকুরিয়া এলাকার মো. নূরুন্নবীসহ অন্তত দুই শতাধিক আলু চাষি।

সরেজমিনে ফুলবাড়ী ক্লোল্ড স্টোরেজ নামের হিমাগার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, হিমাগারের ভেতরে অন্তত শতাধিক ট্রাক্টর, ভটভটি ও ব্যাটারি চালিত ভ্যান ভর্তি আলু নিয়ে হিমাগারে ঢোকানোর অপেক্ষায় কৃষক। কৃষকের আলুর সাথে সাথে রয়েছে বেশ কিছু ব্যবসায়ীদেরও ট্রাক্টর ভর্তি আলু। হিমাগারের ভেতরের অংশের পাশাপাশি ভেতরের ঢোকার অপেক্ষায় বাইরেও অবস্থান করছে অন্তত শতাধিক ট্রাক্টর ভর্তি আলু।

মোমনিুল ইসলাম বলেন, ‘আলুর গাড়িতে ঘুমাতে হচ্ছে। ড্রাইভার-হেলপারও নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। একে তো এবার আলুর দাম কম, তার ওপর উৎপাদনও ভালো হয়েছে। ফলে পরবর্তী সময়ে দাম ভালো দাম পেতে সবাই হিমাগারে আলু রাখতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

অনেকেই অভিযোগ করেছেন, হিমাগারে আলু ভর্তি করতে কৃষকদের চেয়ে ব্যবসায়ীদের বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে হিমাগার কর্তৃপক্ষ। অনৈতিক সুবিধা নিয়ে দ্রæত সিরিয়াল পেতে সহায়তা করছেন হিমাগারের কমিশন এজেন্টরা। যদিও এমন অভিযোগ অস্বীকার করছেন ফুলবাড়ী কোল্ড স্টোরেজের ব্যবস্থাপক মাহামুুদুল হাসান।

দিনাজপুর জেলার দক্ষিণ-পূর্বাংশের ফুলবাড়ী, বিরামপুর, নবাবগঞ্জ, হাকিমপুর ও ঘোড়াঘাট এই পাঁচ উপজেলার মধ্যে একটি মাত্র হিমাগার রয়েছে ফুলবাড়ীতে। মৌসুমের শুরু থেকেই হিমাগারের সামনে আলু বোঝাই গাড়ির দীর্ঘ সারি থাকছে। কেউ উৎপাদিত আলু নিয়ে নিজে এসেছেন, কেউবা এজেন্টের মাধ্যমে পাঠিয়েছেন।

নবাবগঞ্জের আফতাবগঞ্জ এলাকার নারী কৃষক বিজলী রানী আগামী বছরে আবাদের জন্য বীজের জন্য ৫৫ কেজি ওজনের দুই বস্তা আলু নিয়ে বুধবার (১২ মার্চ) সকাল ১০ টার দিকে এসেছেন হিমাগারে। পরদিন বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) বিকেল পর্যন্ত সিরিয়াল পাননি তিনি।

লোহাচড়া ডাঙ্গাপাড়া এলাকার কৃষক মো. নূরুন্নবী বলেন, যে পরিমাণ জমিতে আলু আবাদ করেছেন তার বেশির ভাগ আলু হাটবাজারে বিক্রি করে উৎপাদন খরচ মিটিয়েছেন। শুনেছেন এবার হিমাগারে জায়গা নেই, তারপরও এলাকার কয়েকজন কৃষক তিন ট্রাক্টরে (৫৫ কেজি ওজনের) ১২০ বস্তা আলু নিয়ে এসেছেন ফুলবাড়ী কোল্ড স্টোরেজে। গাড়ী ভাড়া দ্বিগুণ পড়েছে, তারপরও লাভের আশায় আলু রাখতে চান। কারণ এখন বাজারে আলুর দাম প্রকার ভেদে প্রতি কেজি ১১ থেকে ১৩ টাকা।

ফুলবাড়ী উপজেলার পাকাপান গ্রামের কৃষক শাহজাহান আলী বলেন, চার বিঘা জমিতে আলু আবাদ করেছেন। ৫৫ কেজি ওজনের ২০ বস্তা আলু বীজ হিসেবে সংরক্ষণের জন্য মনস্থির করেছেন। এজন্য হিমাগারের অবস্থা দেখতে এসেছেন। কিন্তু কৃষক আর ব্যবসায়ীদের আলুর গাড়িতে হিমাগার ঠাসাঠাসি অবস্থা দেখে সিদ্ধান্ত পাল্টে বাড়ী ফেরেছেন। আগামীতে আলুর বীজ কিনেই আবাদ করবেন এমনটাই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত বছর জেলায় আলু আবাদ হয়েছিল ৪৫ হাজার ৮২৮ হেক্টর জমিতে। এবার সেখানে ৫৬ হাজার ৬৫১ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়েছে। আর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১১ লাখ ৩৫ জাচা ৬৪৯ মেট্রিক টন। এরমধ্যে ফুলবাড়ী উপজেলাতেই আলু আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৮২৩ হেক্টর জমিতে। আর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার ৫৭৫ মেট্রিক টন।

ব্যবসায়ীদের প্রাধান্য দিয়ে হিমাগারে আলু ঢোকানো হচ্ছে এমন অভিযোগ অস্বীকার করে ফুলবাড়ী কোল্ড স্টোরেজের ব্যবস্থাপক মাহমুদুল হাসান বলেন, সর্বোচ্চ পর্যায়ে কৃষকদের আগ্রাধিকার দিয়েই আলু সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কোল্ড স্টোরেজের ধারণ ক্ষমতা ৫০ কেজি ওজনের ১ লাখ ৬৫ হাজার বস্তা। কিন্তু সংগ্রহ করা হবে ১ লাখ ৭০ হাজার বস্তা। ইতোমধ্যে ১ লাখ ৬০ হাজার বস্তা আলু সংগ্রহ হয়ে গেছে। এরপরও অন্তত ৫০ হাজার বস্তা আলু নিয়ে অপেক্ষায় রয়েছে। এরপরও বিকল্প পন্থায় আলু সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরপরও জায়গার অভাবে ফেরত দিতে হবে বিপুল সংখ্যক কৃষকের আলু।

ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুম্মান আক্তার বলেন, ‘গত বছর এ উপজেলায় আলু আবাদ হয়েছিল ১ হাজার ৭৭০ হেক্টর জমিতে, সেখানে এ বছর আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৮২৩ হেক্টর জমিতে। এতে ৫৩ হেক্টর বেশি জমিতে আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকাসহ প্রাকৃতিক কোন দুর্যোগ না আসায় আলুর আবাদ ও ফলন দুই-ই ভালো হয়েছে।

দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরর অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) মো. আনিছুজ্জামান বলেন, ‘আলু দাম কমে যাওয়ায় ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি আলু সংরক্ষণের দিকে ঝুকেছেন কৃষকও। এতে করে প্রত্যেকটি হিমাগারের ওপর চাপ বেড়েছে। আলু সংরক্ষণের সক্ষমতা বাড়ানো গেলে আলুর আমদানি নির্ভরতা কমে আসবে, এতে কৃষকরা লাভবান হবেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ