• শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ০৩:১০ অপরাহ্ন

বাম্পার ফলন পেঁয়াজ বীজের , ৫০০ কোটি টাকা বিক্রির আশা

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : শনিবার, ১৫ মার্চ, ২০২৫

এক যুগ ধরে পেঁয়াজ বীজের বাম্পার ফলন হচ্ছে ফরিদপুরে। দেশের সরকারি পেঁয়াজ বীজের চাহিদার অর্ধেকের বেশি সরবরাহ করেন এ জেলার চাষিরা। এই কৃষিপণ্যটি উৎপাদন করে অর্থনৈতিকভাবে জীবন মানের উন্নয়ন ঘটিয়েছেন তারা। এ জন্যই এই বীজকে ‘কালো সোনা’ বলেন এ অঞ্চলের মানুষ। সেই বীজ উৎপাদনে ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন এখন চাষিরা। চলতি মৌসুমে জেলায় কমপক্ষে ৫০০ কোটি টাকার পেঁয়াজ বীজ বিক্রির আশা করছে কৃষি বিভাগ।

পেঁয়াজ উৎপাদনে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ জেলা। পাটের পরে ধান ও পেঁয়াজ আবাদে এখানকার চাষিদের আগ্রহ বেশি। জেলার ফরিদপুর সদর, বোয়ালমারী, ভাঙ্গা, মধুখালী, সদরপুর উপজেলার মাঠগুলোতে যেদিকে চোখ যায়, সেদিকেই শুধু, সাদা রঙের পেঁয়াজ ফুলের সমারোহ।

সরেজমিন সদর উপজেলার অম্বিকাপুর ইউনিয়নে দেখা যায়, বিভিন্ন মাঠজুড়ে পেঁয়াজের সাদা ফুল। এই ক্ষেতগুলোতে এখন কৃষাণ-কৃষাণিরা পরিবারের সদস্য ও শ্রমিক নিয়ে হাত দিয়ে পরাগায়ণের কাজ করছেন। কোথাও আবার আগাছা পরিষ্কার ও কদম পচা রোধে ওষুধ স্প্রে করছে।

এ মৌসুমে পেঁয়াজের ভালো উৎপাদনের পর ফরিদপুরে বাম্পার ফলন হয়েছে পেঁয়াজ বীজ আবাদেও।

অম্বিকাপুরের কৃষাণি শাহেদা বেগম ও লাভলী জানান, কালো সোনা খ্যাত এই পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনে ছোট শিশুর মতো যত্ন করতে হয়। নভেম্বর-ডিসেম্বরে আবাদ শুরু হয়ে ফলন উঠবে এপ্রিল-মেতে। এরপর এক বছর বীজ সংরক্ষণ করে পরবর্তী বছরে করা হয় আবাদ ও বিক্রি। তবে চলতি মৌসুমে মৌমাছি না থাকায় হাত দিয়েই পরাগায়ণ করতে হচ্ছে।

পেঁয়াজের এই মৌসুমে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পেঁয়াজ বীজের ক্ষেতে কাজ করতে আসেন শ্রমিকরা। তারা জানান, বীজের ক্ষেতে কাজ করেই চলে তাদের সংসার ও সন্তানদের পড়ালেখা।

পাবনা থেকে ফরিদপুরে পেঁয়াজ বীজ ক্ষেতে কাজ করতে আসা আনোয়ার, কুষ্টিয়া থেকে আসা আব্দুর রহমান প্রামাণিক, রহিম মোল্লা, ইব্রাহিম শেখসহ বেশ কয়েকজন শ্রমিক বলেন, ‘মৌসুমে বিভিন্ন জেলা থেকে শ্রমিকরা পেঁয়াজ চাষাবাদের কাজে যুক্ত হতে ফরিদপুর অঞ্চলে গত এক যুগের বেশি সময় ধরে আসছেন। আমরা দিনরাত পরিশ্রম করি পেঁয়াজের বীজ ঘরে তোলা পর্যন্ত। ভালো দানা উৎপাদন করতে পারলে মালিকের যেমন লাভ হয়, তেমনি আমাদেরও আর্থিক পরিবর্তন আসে।’

এদিকে, মাঠের পর মাঠ বীজের সাদা ফুলের সৌর্ন্দয দেখতে প্রতিদিনই দর্শনার্থীরা আসছেন মাঠগুলোতে। তুলছেন ছবি, করছেন ভিডিও।

কৃষি বিভাগ জানায়, দেশের চাহিদার অর্ধেক বীজ উৎপাদন হয়ে থাকে এ জেলায়। এ বছর পেঁয়াজ বীজের আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৮শ ৫৪ হেক্টর জমিতে, যা থেকে উৎপাদিত বীজের বাজার মূল্যে প্রায় ৫শ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ফরিদপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘গুণগত মান ভালো হওয়ায় ফরিদপুরের বীজের চাহিদা সর্বত্র রয়েছে। এই কৃষিপণ্যটির বাজার মূল্য অধিক হওয়ায় কালোসোনা বলে অভিহিত করেন স্থানীয়রা।

‘কয়েক বছর হলো পেঁয়াজ বীজের ক্ষেতে মৌমাছির বিচরণ কমে গেছে, এ কারণে পরাগায়ণের সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে চাষিদের ফুলের ওপর হাত দিয়ে পরাগায়ণ কীভাবে করতে সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।’

ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. শাহাদুজ্জামান বলেন, ‘এ বছর আমাদের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে বীজের আবাদ হয়েছে। দিন দিন পেয়াঁজ বীজ আবাদের চাষির সংখ্যা বাড়ছে।

তিনি জানান, এবার আবহাওয়া ভালো থাকায় এক হাজার ৮৫৪ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ বীজের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯শ ৬৪ মেট্রিক টন। যার বাজার মূল্য আনুমানিক প্রায় ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ