অমর গুপ্ত, ফুলবাড়ী প্রতিনিধি:-দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলায় এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশ সস্তায় মিলছে সবজি। এতে সাধারণ ক্রেতাদের মাঝে স্বস্তি ফিরলেও লোকসানে পড়েছেন স্থানীয় কৃষকরা।
উপজেলার বেশ কয়েকটি পাইকারি ও খুচরা হাটবাজারের ব্যবসায়ী ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সব ধরনের সবজির দামই কমে গেছে। বিশেষ করে আলু, টমেটো, শসা, খিরা, কাঁচা মরিচ, গাজর, মিষ্টি কুমড়াসহ বাঁধা ও ফুলকপি চাষিরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। শখের বসে সবজি করতে গিয়ে অনেকেই বিপাকে পড়েছেন।
রমজানের শুরু থেকেই বাজারে বিভিন্ন সবজির দাম ছুটতে থাকে ক্রেতার নাগালের বাইরে। অল্প সময়ের মধ্যে সহনীয় পর্যায়ে আসতে শুরু করে এসব সবজির দাম। গত রমজানে প্রতিকেজি ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হওয়া টমেটো এবার বিক্রি হচ্ছে প্রকার ভেদে ৫ থেকে ৭ টাকায়। গাজর মিলছে ১০ থেকে ১৫ টাকা কেজির দরে। অথচ আগের বছরই প্রতি কেজি গাজর ক্রেতাদের কিনতে হয়েছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়।
এদিকে সবজির মৌসুম শেষ পর্যায়ে থাকায় কিছু কিছু সবজির একটু করে চড়তে শুরু করেছে বাজার। তবে রোজার শুরু থেকে কম দামে সবজি কিনতে পারায় ক্রেতা সাধারণ খুশি হলেও দাম কম পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন সবজি চাষিরা।
আজ সোমবার (২৪ মার্চ) ফুলবাড়ী পৌরশহরের প্রাণকেন্দ্র সুজাপুরস্থ সবজি বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরা বাজারে প্রতি কেজি টমেটো প্রকার ভেদে ৫ থেকে ৭ টাকা, আলু ১২ থেকে ১৪ টাকা, কাঁচামরিচ ২০ থেকে ২২ টাকা, গাজর ও শসা ৭ থেকে ১০ টাকা, ফুলকপি ১৫ থেকে ১৮ টাকা, সিম ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, করলা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, বেগুন ৩০ থেকে ৪০ টাকা, পেঁয়াজ ২২ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
পাইকারি সবজি ব্যবসায়ী জয়ন্ত সাহা বলেন, এবার সবজির উৎপাদন ভালো হওয়ায় হাটবাজারে সরবরাহ ভালো রয়েছে। এজন্য দাম কম রয়েছে। তবে মৌসুমের শেষ সময় এখন দাম কিছুটা বাড়তে পারে। তবে অনেক কৃষক টমেটো এবং ফুলকপি বাজারে আনলেও বিক্রি করতে পারছেন না।
সবজি কিনতে আসা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আব্দুল আউয়াল বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার সবজির দাম অনেক কম। বাজারের সবচেয়ে কম দামের সবজি এখন টমেটো, গাজর ও শসা-খিরা।স্থানীয় দীপা হোটেলের স্বত্বাধিকারী দুলাল সাহা বলেন, সবজি দাম কমে যাওয়ায় হোটেল ক্রেতাদের চাহিদা মতো সব ধরনের সবজি তরকারি সরবরাহ করা যাচ্ছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তর সূত্রে জানা যায়, এবছর এক হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি আবাদ করা হয়েছিল। এরমধ্যে ১০৮ হেক্টর জমিতে টমেটো, ১১০ হেক্টর জমিতে মরিচ, ৩৮ হেক্টর জমিতে শসা ও ২০ হেক্টর জমিতে খিরা রয়েছে। ৫ শতাধিক কৃষক প্রতি বছর বাণিজ্যিকভাবে টমেটোর চাষ করে থাকেন। উৎপাদন বেশি ও ক্রেতা সংকটের কারণে অনেকের উৎপাদিত টমেটো বিক্রি করতে পারেননি।
উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের গোয়ালপাড়া গ্রামের টমেটো চাষি রেবতি মোহন বলেন, এ বছর ১০ শতাংশ জমিতে টমেটো চাষ করতে প্রায় ৪০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে, তবে ২০ হাজার টাকাও বিক্রি আসেনি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রুম্মান আক্তার বলেন, সবজির উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় এবার বাজারে দর কম। চাহিদার চেয়ে বিভিন্ন ধরনের সবজির জোগান ও মজুদ বেশি। সবজি চাষিদের লোকসানের হাত থেকে রক্ষায় আগাম এবং শেষ পর্যায়ে সবজি বাজারে আনার ব্যবস্থা করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। #