• মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ০৯:০০ অপরাহ্ন

সিরাজদিখানে পল্লী বিদ্যুৎ মিস্ত্রির চিকিৎসার নামে করছে প্রতারণা

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৫

আনিসুর রহমান মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি:-  কয়েক বছর আগেও ছিলেন পল্লি বিদ্যুৎ অফিসের অস্থায়ী লাইনম্যান। যারা কাজ ছিল মানুষের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে মিটার লাগানো। মিটার দেওয়ার কথা বলে মানুষের কাছ হতে অবৈধভাবে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অনেক অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এখোন তিনি বনে গেছেন বিশাল কবিরাজ। তন্ত্রমন্ত্র, ঝাড় ফুক, পানিপড়া, চালপড়া ইত্যাদির মাধ্যমে চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা দেওয়া ওই ব্যাক্তির নাম শাহ জালাল।
বাড়ি সিরাজদিখান উপজেলার রশুনিয়া গ্রামে। নিজ গ্রামেই গড়ে তুলেছেন বিশাল ফকিরের আস্তানা। প্রসাশন করেকবার অভিযান চালিয়ে ওই আস্তানা গুড়িয়ে দিলেও পূণরায় আস্তানা গড়ে দিচ্ছেন অপচিকিৎসা। তার বিরুদ্ধে হয়েছে মামলা মোকদ্দমাও । তাতে দমে যাননি তিনি। স্থাণীয় প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে চালিয়ে যাচ্ছেন ওই অপ-চিকিৎসা। এ নিয়ে বিক্রমপুর চিত্র পত্রিকা ও অনলাইনে সংবাদ প্রকাশের পর ওই পান কবিরাজ নিজেকে একটি পত্রিকার উপদেষ্টা দাবী করে দিয়েছেন বিক্রমপুর চিত্র পত্রিকার প্রতিবেদককে হুমকিও।
প্রবাদ আছে ঝড়ে গাছ মরে ফকিরের কেরামতি বাড়ে। ফকির এখানে সুযোগ সন্ধানী ও মিথ্যাবাদী। নিজের পক্ষ কোন ঘটনাকে নেয়ার অপকৌশল করে থাকে ফকির। ফকির এখানে ফিকির বা ধান্দা করে যে। তন্ত্রমন্ত্র, ঝাড় ফুক, পানিপড়া, চালপড়া ইত্যাদির মাধ্যমে ফকিররা চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা করে থাকে। এসব ফকিরদের অনেকে আবার কবিরাজও বলে থাকেন। যদিও কবিরাজ বা হেকিম হচ্ছে গাছগাছালি, লতাপাতা, ইত্যাদি দিয়ে ভেষজ ওষুধ তৈরি করে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। তাদের ঔষধের বলে অনেক রোগও ভালো হয়।
কিন্তু কিছু ভন্ড ঝাড় ফুক দিয়ে নিজেকে কবিরাজ দাবি করেন। মানুষের অন্ধবিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে অপচিকৎিসার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেন টাকা। দুঃখজনক ব্যাপার হলো- এই আধুনিক যুগে বিশিষত গ্রামের মানুষ কবিরাজি বা ফকিরালী চিকিৎসা খুঁজে বেড়ায়। এসব কবিরাজরা আসলে ভণ্ড বা প্রতারক। এমন একজন ভণ্ড কবিরাজ মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার রশুনিয়া গ্রামের শাহ জালাল। তাকে এখন পান কবিরাজ বা পান ফকির বলে সবাই চেনে।
স্থাণীয়দের সাথে কথা বলে জানাযায়। কয়েক বছর আগেও ছিলেন তিনি পল্লি বিদ্যুৎ অফিসের অস্থায়ী লাইনম্যান। যারা কাজ ছিল মানুষের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে মিটার লাগানো। আর সেই ব্যক্তিই কিনা এখন মানুষের মন আর সংসার জোড়া লাগানোর কারিগর! রশুনিয়া গ্রামের শাহ জালাল কয়েক বছর আগেও এলাকায় কারেন্টের মিস্ত্রি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এখন তিনি পান কবিরাজ নামে পরিচিতি লাভ করেছেন। তিনি প্রচুর পান খান বলে তাকে পান কবিরাজ বলে লোকে। পল্লি বিদ্যুতের লাইন ম্যান থেকে পান কবিরাজ হয়ে ওঠা শাহ জালাল দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণার মাধ্যমে মানুষকে বোকা বানিয়ে ভুয়া কবিরাজি চিকিৎসা দিয়ে আসছে। তারপরও মানুষ তার কৌশল ও আচরণে ‘চুনকে দই’ ভেবে প্রতারিত হয়ে আসছে বহু আগে থেকেই। তার খপ্পরে পড়ে প্রতারিত হয়েছেন জেলার অন্তত কয়েক হাজার মানুষ। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় তেমন শিক্ষিতও নন তিনি। নেই কবিরাজি বা হেকেমি শিক্ষা। তারপরও নাকি তিনি কবিরাজ!
স্থানীয়দের ভাষ্য, পান কবিরাজ শাহ জালাল ২০১০ সাল স্বপ্নে সৃষ্টিকর্তার অলৌকিক আশীর্বাদ পেয়েছেন বলে তার কিছু দালালদের দিয়ে এলাকায় প্রচারণা চালায়। আস্তানা গড়ে তোলার পর সেখানে চিকিৎসার নামে চলে প্রতারণা। এর আগে কোরায়ানকে নিয়ে অবমাননা করায় স্থাণীয়রা গুড়িয়ে দেয় তার আস্তানা। কিন্তু সচতুর পান কবিরাজ রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় আবার গড়ে তুলেছেন আস্তানা।
শাহ জালাল পান কবিরাজ দীর্ঘদিন যাবৎ সংসারে অশান্তি, স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্দ্ব, বন্ধ্যাত্ব, পছন্দের মানুষকে পাইয়ে দেওয়া, অবাধ্য সন্তানকে বশীকরণসহ নানাবিধ সমস্যার মৌখিক সমাধান দিয়ে আসছিলেন। তিনি জ্বিন দ্বারা কবিরাজি চিকিৎসা করেন মর্মে প্রতারণার অভিনব কৌশল হিসেবে প্রতি রাতে তার নিজ বাড়িতে আসন বসান। এ কাজে তার কাছে থাকা জ্বিন তাকে সহযোগিতা করে বলে তিনি রোগীদেরকে বোঝান। এসব ক্ষেত্রে তিনি প্রতারণার অংশ হিসেবে প্রতি দিন তার নিজ বাড়িতে আসন বসান। নানা সমস্যা নিয়ে আগত রোগীদের ওই জ্বিনের আসর থেকে চিকিৎসা স্বরূপ কারো বাড়িতে শত্রুতাবশত তাবিজ, কারো বাড়িতে পুতুল পুঁতে রাখা আছে এবং এসব কারণেই তারা ভুগছেন মর্মে রোগীদের বাগে আনতেন। জ্বিনের সাহায্যে রোগীদের বাড়িতে পুঁতে রাখা তাবিজ বা পুতুল তুলে এনে সমস্যার সমাধান করে দেয়ার আশ্বাস দিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেন শাহ জালাল।
জ্বিনের আছড় ছাড়ানোর চিকিৎসায় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকাসহ এর সমপরিমাণ মালামাল নেন তিনি। এছাড়া বাড়ি বন্ধকরণ, জ্বিনের মাধ্যমে তাবিজ-কবজ তুলে আনার জন্য মোটা অঙ্কের টাকা নেন তিনি। সাথে এক নজর তাকিয়ে দেখার জন্য জনপ্রতি ১২০ টাকা করে নজরানা ফি নেন এই পান কবিরাজ। প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগী ফতুল্লা থানার গৃহবধূ রোসনা বেগম অভিযোগ করেন, আমার কিছু সমস্যা জনিত রোগের কারণে পান ফকিরের কাছে যাই। প্রথমে একশ এক টাকা ফি নেন। পরবর্তীতে তেল পড়া, পানি পড়া দিয়ে এক হাজার একশ টাকা হাতিয়ে নেন।
এতে কোনো সুফল না পেয়ে পুনরায় তার কাছে গেলে ছাগল গোসল দেয়ার নামে আমার কাছ থেকে আট হাজার ছয়শ টাকা হাতিয়ে নেন। কাজ না হওয়াতে আমি একথা তাকে জানাতে এসেছিলাম।
স্থানীয় রফিকুল, মোঃ রহমত উল্লাহ, পাপড়ি দেবনাথসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, পান ফকির স্বপ্নে আধ্যাত্মিক শক্তির বলীয়ান হয়েছেন এবং যেকোনো মানুষের অতীত ও ভবিষ্যৎ বলে দিতে পারেন মর্মে কথিত পান ফকিরের দালালরা এই বলে প্রচারণা চালান। এতে অসহায় অজ্ঞ লোকজন দূরদূরান্ত থেকে এই ভন্ড ফকির বা কবিরাজের কাছে আসেন। তার জিন দ্বারা তাবিজ-কবজ তুলে আনার বিষয়টিম প্রতারণার কৌশল মাত্র। প্রকৃত পক্ষে তিনি কোন জ্বিন বস করতে পারেননি, তিনি জীবনে কখনো জ্বিন দেখেছেন কিনা তা নিয়েও স্থানীয়দের সন্দেহ রয়েছে।
এ ব্যাপারে স্থাণীয় ইউপি সদস্য মোঃ ইকবাল দিদার বলেন, আমার জানামতে ও চতূর্থ থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করতে পারে। ও আগে পল্লি বিদুৎতের মিটারের কাজ করতো। মানুষকে মিটার দেওয়ার কথা বলে অনেকের টাকা আত্নসাৎ করছে। আমার বাড়ির পাশের মানুষের টাকা নিয়েও মিটার দেওয়ার নামে তালবাহান করলে আমার কাছে বিচার দিলে আমি বলে টাকা উঠাইয়া দিছি। এখোন প্রতারণার মাধ্যমে টাকা আয় করে এলাকায় দানশীল সাজছে।
এ ব্যাপারে রশুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সাইদ বলেন, পান কবিরাজ একটা ভন্ড ও প্রাইমারি স্কুলের গন্ডিও পেরায়নি। ও এর আগে কোরআনশরীফও অবমাননা করেছিল। কোরয়ান ছুড়ে ফেলার অভিযোগে স্থাণীয় জনগণ ওর আস্তানা ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয় । পরে দির্ঘদিন ও পালিয়ে ছিল। কিন্তু বিগত নির্বাচণে ও স্থাণীয় এক নেতার নির্বাচন করে প্রচারনায় নামে। পরে ওই নেতার ছত্রছায়ায় আবার এখোন আস্তানা গড়ে অপচিকিৎসা দিচ্ছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ