রংপুর প্রতিনিধি॥
জাতীয় দলের পাইপলাইনকে সমৃদ্ধ করতে ও জেলা এবং বিভাগীয় টুর্নামেন্ট জয়ের জন্য প্রতিভাবান ক্রিকেটারদের খুঁজে পেতে রংপুরে শুরু হয়েছে অনুর্ধ্ব ১৪ এর ক্রিকেট প্রশিক্ষণ ক্যাম্প। বিগত কয়েক বছরের ধারাবাহিক সাফল্যকে ধরে রাখতেই আগাম এই প্রশিক্ষণ ক্যাম্প শুরু করেছে রংপুর জেলা ক্রিয়া সংস্থার ক্রিকেট উপ-কমিটি। নিজ অর্থায়নে দীর্ঘমেয়াদী এ ক্যাম্পের মাধ্যমে ক্ষুদে ক্রিকেটারদের ফ্রি প্রশিক্ষণ দিচ্ছে এই কমিটি। প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে যারা ভালো পারফামেন্স করতে পারবে তাদের নিয়েই জেলা দল গঠন করা হবে বলে জানিয়েছে উপ-কমিটির কর্মকর্তারা। উপ-কমিটি সূত্রে জানা যায়, গত ৫ মে ২০১৮ রংপুর ক্রিকেট গার্ডেনে অনুর্ধ্ব ১৪ এর ক্রিকেট প্রশিক্ষণ ক্যাম্প শুরু হয়। ক্যাম্পের উদ্বোধন করেন, রংপুর জেলা ও বিভাগীয় ক্রিকেট সংস্থার সাধারণ সম্পাদক এবং বিসিবি’র পরিচালক এ্যাড. আনোয়ারুল ইসলাম। প্রাথমিকভাবে জেলার ৮ উপজেলার ১৬০ জন অনুর্ধ্ব ১২-১৪ ক্রিকেটারদের নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী এ ক্যাম্প শুরু করা হয়েছে। শুক্রবার বাদে সপ্তাহে ছয় দিন বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ক্ষুদে ক্রিকেটারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। আগামী জেলা ও বিভাগীয় টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রশিক্ষানার্থীদের মধ্যে যারা ভালো পারফামেন্স দেখাতে পারবে পর্যায়ক্রমে তাদের বাছাই করে ১৮ সদস্যের জেলা দল গঠন করা হবে। জেলা টুর্নামেন্টে মধ্যে যারা ভালো পারফামেন্স দেখাতে পারবে পরবর্তীতে তাদের নিয়েই বিভাগীয় কমিটি গঠন করা হবে। বিভাগীয় টুর্নামেন্টে বিসিবি’র নির্বাচকরা যাদের নির্বাচন করবেন তারা পরবর্তীতে বিভিন্ন জাতীয় লীগে খেলার সুযোগ পাবে। আরো জানা যায়, গত বছর অনুষ্ঠিত জেলা ও বিভাগীয় টুর্নামেন্টে অনেকটা দাপটের সঙ্গে চ্যাম্পিয়ন হয় রংপুর জেলা দল ও রংপুর বিভাগীয় দল। আর এই সাফল্যকে ধরে রাখতে এবং রংপুরের তৃণমূল থেকে প্রতিভাবান খেলোয়াড় খুঁজতে এ বছর আগাম ক্যাম্প শুরু করে রংপুর জেলা ক্রিয়া সংস্থার ক্রিকেট উপ-কমিটি। ক্যাম্প পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন, রংপুর বিভাগীয় কোচ মাসুদ পারভেজ রাজন, জেলা কোচ নাজিম আজাদ মুন্না, নাসিম উদ্দিন, এ.জেড.এম মোর্শেদুর রহমান সুমন, হাসানুজ্জামান চৌধুরী ময়না এবং সার্বিক পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন রুবায়েত হোসেন খান। এদিকে, খুদে ক্রিকেটাররা ক্যাম্পকে দেখছেন জাতীয় দলে জায়গা করে নেয়ার প্ল্যাটফর্ম হিসাবে। তাদের দু-চোখ ভরা স্বপ্ন। তারা দুঃসহ গরম উপেক্ষা করে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। লক্ষ্য একটাই, বড় খেলোয়ার হওয়া। আর এ জন্য একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে ব্যাট-বল করে কোচদের মন কাড়ার চেষ্টা করছেন তারা। ক্ষুদে প্রশিক্ষণার্থী রাজিব হোসেন বলেন, এই ক্যাম্প আমাদের জন্য বিশাল পাওনা। আমাদের স্বপ্ন পুরণের রাস্তা সহজ করে দিয়েছে এই ক্যাম্প। আমি এখান থেকে খুব মজা করে ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিংয়ের তালিম নিতে পারছি। শুধু রাজিব হোসেনই নয়, তার মত অন্যদেরও চোখে বড় ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন এবং সেই স্বপ্নে বিভোর হয়েই তারা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছেন। চেষ্টা করছেন নিজেদের প্রতিভাকে তুলে ধরার। জেলা কোচ নাজিম আজাদ মুন্না জানান, প্রাথমিকভাবে প্রশিক্ষনার্থীদের বেসিক জিনিসগুলো সেখানো হচ্ছে। ধীরে ধীরে ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট সকল বিষয়ে তাদের জ্ঞান দেওয়া হবে। কিছু বিষয় আছে, যেখানে জোর দিতে হবে। এই লেভেল থেকেই যদি আন্তর্জাতিক লেভেলের ফিটনেসটাকে নিতে পারে, তাহলে ভবিষ্যতে ভালো করতে পারবে। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাছাই করে উন্নত প্রশিক্ষণ দিয়ে ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিংয়ের জন্য প্রতিভাবান ক্রিকেটার খুঁজে বের করা হবে। এসব ক্রিকেটার বিভিন্ন পর্যায়ে অবদান রাখবে বলে আমার বিশ্বাস। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে ১৬০ জন প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এর পরেও যদি কেউ প্রশিক্ষণ নিতে আগ্রহী থাকে তাহলে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। নাসিম উদ্দিন বলেন, আমরা পরবর্তী সাকিব-তামিম-মাশরাফিদের দেখার অপেক্ষায় আছি। আমাদের প্রোগ্রামের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আমরা এমন কিছু খেলোয়াড় বের করবো যারা আসলে স্বপ্ন দেখতে পছন্দ করে। আমরা সাধারণ কোনো প্রতিভার পেছনে ছুটবো না। আমরা তাদের পেছনেই ছুটবো যাদের স্বপ্নটা আকাশ ছোঁয়া। ছেলেরা যদি স্বপ্ন দেখে, আর স্বপ্ন দেখানোর পথটা যদি আমরা ঠিক করে দিতে পারি তাহলেই আমাদের উদ্দেশ্য সফল হবে। মূলত দেশসেরা খেলোয়াড় সৃষ্টির মাধ্যমে ক্রীড়াঙ্গনে রংপুরের আধিপত্য বিস্তার করার লক্ষ্যেই এ ক্যাম্প করা হয়েছে। এ ক্যাম্পের মাধ্যমে রংপুরের তৃণমূল থেকে প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের খুঁজে বের করা হবে।