গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারী কল্যাণ তহবিল থেকে ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের উপপরিচালক মো. গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে মঙ্গলবার এ মামলা দায়ের করেন। আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ৪(২)(৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
ইউনূস ছাড়া মামলায় অন্য আসামিরা হলেন, গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম (৫০), সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান (৬৩), পরিচালক পারভীন মাহমুদ (৬২), নাজনীন সুলতানা (৬১), মো. শাহজাহান (৬৫), নূরজাহান বেগম (৭২), এস এম হাজ্জাতুল ইসলাম লতিফী (৬২), অ্যাডভোকেট মো. ইউসুফ আলী (৪২), অ্যাডভোকেট জাফরুল হাসান শরীফ (৪৭), গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান (৩৯), সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান (৪৩), গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের প্রতিনিধি মো. মাইনুল ইসলাম (৪০)।
দুদকের অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০২২ সালের ৯ মে চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ইউনূস, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলামসহ গ্রামীণ টেলিকমের বোর্ডের সদস্যদের উপস্থিতিতে ১০৮তম বোর্ড সভা হয়। সভার আগের দিন ঢাকা ব্যাংকের গুলশান শাখায় ৮ মে একটি হিসাব খোলা হয়।
এর আগে একই বছরের ২৭ এপ্রিল গ্রামীণ টেলিকমের কর্মচারীদের পাওনা লভ্যাংশ বিতরণের জন্য গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন এবং গ্রামীণ টেলিকমের সঙ্গে সেটেলমেন্ট এগ্রিমেন্ট চুক্তি হয়।
গ্রামীণ টেলিকমের বোর্ড সভার হিসাব খোলার সিদ্ধান্ত ৯ মে হলেও তার একদিন পূর্বেই ব্যাংক হিসাব খোলা হয় এবং সেটেলমেন্ট এগ্রিমেন্ট ২৭ এপ্রিলে হলেও ব্যাংক হিসাব খোলার সময় দেখানো হয়েছে ৮ মে, যা বাস্তবে অসম্ভব।
এ রকম ভুয়া সেটেলমেন্ট এগ্রিমেন্টের শর্ত অনুযায়ী ও ১০৮তম বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক গ্রামীণ টেলিকমের ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের মিরপুর শাখার হিসাব থেকে গ্রামীণ টেলিকমের ঢাকা ব্যাংকের গুলশান শাখার হিসাবে ৪৩৭ কোটি ১ লাখ ১২ হাজার ৬২১ টাকা স্থানান্তর করা হয়। পরবর্তীতে ২০২২ সালের ২২ জুন গ্রামীণ টেলিকমের ১০৯তম বোর্ড সভায় অতিরিক্ত ১ কোটি ৬৩ লাখ ৯১ হাজার ৩৮৯ টাকা প্রদানের বিষয়টি অনুমোদন দেওয়া হয়।
ঢাকা ব্যাংকের গুলশান শাখার হিসাব থেকে গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন নামীয় ডাচ বাংলা ব্যাংকের হিসাবে ১৭ মে ১০ কোটি টাকা, ২৫ মে ১৪ কোটি ৫৮ লাখ ১৫ হাজার ৩৯১ টাকা এবং ৩০ মে ১ কোটি ৬৩ লাখ ৯১ হাজার ৩৮৯ টাকাসহ সর্বমোট ২৬ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা স্থানান্তর করা হয়।
কর্মচারীদের লভ্যাংশ বিতরণের পূর্বেই তাদের প্রাপ্য অর্থ তাদের না জানিয়েই অসৎ উদ্দেশ্যে আত্মসাতের অভিপ্রায়ে সিবিএ নেতা মো. কামরুজ্জামানের ডাচ বাংলা ব্যাংকের মিরপুর শাখার হিসাবে ২৫ মে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং ২ জুন ৫০ লাখ টাকা, সিবিএ নেতা মাইনুল ইসলামের ডাচ বাংলা ব্যাংকের মিরপুর শাখার হিসাবে ২৬ মে ২ কোটি টাকা এবং ২ জুন ১ কোটি টাকা, সিবিএ নেতা ফিরোজ মাহমুদ হাসানের ডাচ বাংলা ব্যাংকের মিরপুর শাখার হিসাবে ২৬ মে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং ২ জুন ৫০ লাখ টাকা স্থানান্তর করা হয়।
একইভাবে অ্যাডভোকেট মো. ইউসুফ আলীর কমার্সিয়াল ব্যাংক অব সিলনের ধানমন্ডি শাখার হিসাবে ৪ কোটি টাকা এবং দি সিটি ব্যাংকের গুলশান শাখার হিসাবে নং ৫ কোটি টাকা ও অ্যাডভোকেট জাফরুল হাসান শরীফ এবং অ্যাডভোকেট মো. ইউসুফ আলীর স্ট্যান্ডার্ড টাচার্ড ব্যাংকের গুলশান নর্থ শাখার যৌথ হিসাবে ২৯ মে ৬ কোটি স্থানান্তর করা হয়, যা তাদের প্রাপ্য ছিল না।
দুদকের অভিযোগে বলা হয়েছে, অ্যাডভোকেট ফি হিসেবে প্রকৃতপক্ষে হস্তান্তরিত হয়েছে মাত্র ১ কোটি টাকা। ২৬ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ থেকে ১ কোটি বাদ দিলে বাকি ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বোর্ড সদস্যদের সহায়তায় গ্রামীণ টেলিকমের সিবিএ নেতা এবং অ্যাডভোকেটসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণ অসৎ উদ্দেশ্যে অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ করে জাল-জালিয়াতির আশ্রয়ে স্থানান্তর/রূপান্তরের মাধ্যমে আত্মসাত করেছেন।