বাংলাদেশ একটি মধ্যম আয়ের দেশ। জনসংখ্যার অধিকাংশই গ্রামে বাস করে। কৃষিনির্ভর গ্রামীণ অর্থনীতি উৎপাদনের মূল শক্তি। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা এবং চিকিৎসার মতো মৌলিক চাহিদা মেটাতে হতদরিদ্র এবং স্বল্প আয়ের মানুষরা হিমশিম খায়। তার ওপর অসচেতন জনগণ শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টির ব্যাপারে প্রায়ই থাকে উদাসিন। হাতের কাছে পাওয়া নানা ধরনের শাকসবজি, ফলমূল ও মাছের পর্যাপ্ততা সত্ত্বেও অধিকাংশ মানুষ এর ফললাভ থেকে বঞ্চিত হয়। সেখানে মেয়েদের অবস্থা আরও দুর্বিষহ। সুষম খাদ্যের সিংহভাগ যায় কর্তা এবং পুত্রের দৈনন্দিন খাবারের তালিকায়। গৃহিণী এবং কন্যাটি হয় উপেক্ষিত। অথচ এই পুষ্টিকর খাবার সবচাইতে বেশি প্রয়োজন মা ও মেয়ের। বিশেষ করে গর্ভকালীন মায়ের নিজের জন্য যেমন অনাগত সন্তানটির জন্যও তেমনি ভিটামিন যুক্ত সুষম খাদ্য আবশ্যক। এর অভাবে অধিকাংশ নারীরা গর্ভকালীন রক্তস্বল্পতা কিংবা শূন্যতায় আক্রান্ত হতে পারে। এর ভয়াবহ পরিণতি আসে সন্তান জন্মদানের সময়। গর্ভকালীন এই রক্তস্বল্পতা মা এবং শিশু উভয়ের জন্য এক বিরাট হুমকিস্বরূপ।
প্রয়োজনীয় রক্তের ঘাটতি মা ও শিশুর জন্য নানা ধরনের ক্ষতিকর উপশম তৈরি করতে পারে।
(১) মায়ের জঠরে সন্তানের স্বাভাবিক শারীরিক গঠন ব্যাহত হয়।
(২) গর্ভপাতের আশঙ্কা থাকে।
(৩) গর্ভাবস্থায় রক্তক্ষরণের লক্ষণ থাকতে পারে।
(৪) গর্ভবতী মায়ের যদি হৃদরোগের সমস্যা থাকে তাহলে এর প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে।
(৫) মার শ্বাসনালী ও ত্বকে প্রদাহ হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
(৬) যে সব মেয়েদের রক্তস্বল্পতা থাকে, গর্ভকালীন সময় তা আরও ভয়াবহ আকার নেয়।
(৭) সন্তানের স্বাভাবিক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এর প্রভাব উল্লেখযোগ্য। গর্ভপাত শিশুর পানির থলিতে স্বাভাবিকের তুলনায় পানির পরিমাণ বেশি থাকে। যা মা ও সন্তান উভয়ের জন্যই ক্ষতিকারক।
(৮) নির্দিষ্ট সময়ের আগে প্রসব বেদনা এবং শিশুর ওজন কম থাকায় স্বাস্থ্যহীনতা এমনকি মৃত্যুরও ঝুঁকি থাকতে পারে।
(৯) প্রসব বেদনায় মা অল্পতে হাঁপিয়ে যায় এবং জরায়ুর শক্তিও কমে যাবার সম্ভাবনা থাকে।
(১০) প্রসব পরবর্তী অসুবিধা
(ক) অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ।
(খ) রক্তচাপ কমে যাওয়া।
(গ) সাদা শ্রাবের লক্ষণ।
(ঘ) তলপেটে ব্যথা এবং ফলশ্রুতিতে জরায়ুর ওপর চাপ তৈরি হওয়া।
(১১) প্রতিকারের উপায়।
আমরা যদি বয়ঃসন্ধিক্ষণে মেয়েদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হই তাহলে এমন বিপর্যয় থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া সম্ভব। বেড়ে ওঠার সময় থেকে পর্যাপ্ত ফলমূল, শাকসবজি, মাছসহ ভিটামিনযুক্ত সুষম খাদ্য গ্রহণে মেয়েদের সচেতন করা এবং সুযোগ-সুবিধা দেয়া প্রতিটি পরিবারের নৈতিক দায়িত্ব। শুরু থেকেই মেয়েরা যদি প্রয়োজন অনুযায়ী পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণে অভ্যস্ত হয় তাহলে এ মারাত্মক পরিস্থিতি থেকে গর্ভবতী মায়েরা সহজেই বেরিয়ে আসতে সক্ষম হবে।
গর্ভবতী মাকেও সাবধান এবং সচেতন হতে হবে, যাতে নিজের ও সন্তানে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন নিশ্চিত করতে সব ধরনের পুষ্টিকর খাদ্য প্রতিদিনের তালিকায় সংযুক্ত করা।