রাজধানীতে চলাচল করা লাব্বাইক পরিবহনে এক বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। হয়রানির শিকার ওই ছাত্রী ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করেন। তখন বাসের চালক ও হেলপার উল্টো তাকে হেনস্তা করেন বলে অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগী ছাত্রী। তিনি বেসরকারি স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী।
মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর আনসার ক্যাম্প এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার (২৯ জানুয়ারি) দুপুরে মৌচাক মোড় এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন ভুক্তভোগীর সহপাঠী ও অন্যান্য শিক্ষার্থীরা।
ভুক্তভোগী ছাত্রীর জানান, মঙ্গলবার বিকেলে তিনি মৌচাক মোড় থেকে লাব্বাইক পরিবহনের একটি বাসে ওঠেন। বাসে সেসময় প্রচণ্ড ভিড় ছিল। বাসায় যাওয়ার তাড়া থাকায় তিনি ভিড় ঠেলে বাসে উঠেছিলেন। বাসটি আনসার ক্যাম্প এলাকায় গেলে সেখান থেকে একজন যুবক বাসে ওঠেন।
ছাত্রীর অভিযোগ, বাসে ওঠে ওই যুবক তার পেছনে গিয়ে দাঁড়ান। এসময় তিনি ওই যুবককে দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়াতে অনুরোধ করেন। পরে ছাত্রী বুঝতে পারেন ওই যুবক ইচ্ছে করেই তাকে স্পর্শ করছেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি জোরালো প্রতিবাদ করেন। একপর্যায়ে পথিমধ্যে বাসের চালক ও হেলপার তাকে বাস থেকে নামিয়ে দেন।
তিনি বলেন, ‘আমি জোর করে ওই বাসে আবার উঠি। কিন্তু তারা আমাকে বিশ্রী ভাষায় গালাগালি করেন। বাসে থাকা অনেক নারী যাত্রী বিষয়টি নিয়ে কোনো কথা বলছিলেন না। বাধ্য হয়ে আমি কাজলা এলাকায় নেমে যাই।’
এদিকে, ভুক্তভোগী ছাত্রী ঘটনাটি তার সহপাঠীদের জানালে স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির একদল শিক্ষার্থী লাব্বাইক পরিবহনের মালিককে অভিযোগ করেন। তবে তিনি সুনির্দিষ্ট কোনো আশ্বাস না দেওয়ায় বুধবার বেলা ১১টার দিকে মৌচাক মোড়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তারা।
এসময় শিক্ষার্থীরা ‘লোকাল বাসে হ্যারাসমেন্ট, বন্ধ করো বন্ধ করো’ স্লোগান দেন। তাছাড়া তাদের হাতে ‘বোন তোমার ভয় নেই, সাহস হবে অস্ত্র/অন্যায় হবে ধ্বংস’, ‘বাস-রাস্তা, নারীর জন্য নিরাপদ হোক সব জায়গা’ লেখা প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।
কর্মসূচি থেকে শিক্ষার্থীরা তিনটি দাবি তুলে ধরেন। সেগুলো হলো- বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে হয়রানির সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করা, বাসে নারীদের সংরক্ষিত আসন নিশ্চিত করে নিরাপত্তা বজায় রাখা এবং নির্দিষ্ট স্টপেজ ছাড়া যাত্রী ওঠানো-নামানো না করা।
কর্মসূচিতে একাত্মতা জানিয়ে অংশ নেন লাব্বাইক পরিবহনের একজন চালক ও হেলপার। শহিদুল ইসলাম নামে ওই চালক বলেন, ‘ভিড় বেশি থাকলে অনেক সময় নানা ঝামেলা হয়। খারাপ মানুষ তো আছেই, তারা এগুলো করে। কিন্তু চালক ও হেলপার হয়ে নারী শিক্ষার্থীকে হেনস্তা করা উচিত হয়নি। সেজন্য আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একমত হয়ে এখানে দাঁড়িয়েছি। আমরাও চাই, অপরাধীরা শাস্তি পাক। তাদের লাব্বাইক থেকে বহিষ্কার করা হোক।
তবে বিষয়টি নিয়ে লাব্বাইক পরিবহনের মালিক-কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তাছাড়া এ নিয়ে শিক্ষার্থীরা এখনো থানায় কোনো অভিযোগ দেননি। তারা শিগগির অভিযোগ দেবেন বলে জানিয়েছেন।