• বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:০৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:
৪০ এর পরে খাদ্যতালিকায় পুরুষদের রাখতেই হবে যেসব খাবার নিরুৎসাহিতকরণ শেষে পর্যটকরা ৫ ডিসেম্বর থেকে সাজেক ভ্রমণ করতে পারবেন সেনা নিরাপত্তায় সাজেক ছেড়েছেন পর্যটকরা পরিবারের সঙ্গে মিলেছে ‘হারিছ চৌধুরী’র ডিএনএ, রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনের নির্দেশ চেম্বার আদালতে বাবুল আক্তারের জামিন বহাল, বাধা নেই মুক্তি পেতে সুবাতাস রপ্তানি আয়ে, নভেম্বরে এসেছে ৪১১ কোটি ৯৭ লাখ ডলার দিল্লির দাসত্বকে হিন্দু-মুসলমান একসাথে লড়াই করে খান খান করে দেবো: রিজভী আমু-কামরুলকে জুলাই গণহত্যা মামলায় কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ কমলা চাষে সফল নওগাঁর যুব কৃষি উদ্যোক্তা শফিকুল ইসলাম বর্তমানে দেশ কঠিন সময় পার করছে: প্রধান উপদেষ্টা

‘তোমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এই দেশের তরুণদেরকে ‘নির্ভয়’ বলে গেছেন’

আপডেটঃ : বুধবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১৭

— পোপ ফ্রান্সিস

 

পোপ ফ্রান্সিস ২০১৩ সালের ১৩ মার্চ ২৬৬তম পোপ নির্বাচিত হন। রোমের বিশপ হিসেবে তিনি বিশ্বব্যাপী ক্যাথলিক চার্চ এবং সার্বভৌম ভ্যাটিকান সিটির প্রধান। পোপ হওয়ার পর তিনি তাঁর বিনয়ী ভাবমূর্তির জন্য সারা বিশ্বের নজর কেড়েছেন। তিনি দায়িত্বহীন উন্নয়নের বিরোধিতা করছেন ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় গৃহীত পদক্ষেপে সমর্থন জুুগিয়ে যাচ্ছেন। আন্তর্জাতিক নানা সংকটে সোচ্চার তিনি। গেল বৃহস্পতিবার তিনদিনের সফরে বাংলাদেশে আসেন পোপ ফ্রান্সিস। গত শনিবার ঢাকার নটরডেম কলেজ মাঠে প্রায় দশ হাজার তরুণ-তরুণীর এক যুবসমাবেশে বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে ঢাকার আর্চবিশপ কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি রোজারিও, রাজশাহীর বিশপ জেভার্স রোজারিও, যুব প্রতিনিধি আন্তনী তরঙ্গ নকরেক ও উপাসনা রুথ গোমেজ বক্তব্য রাখেন। তরুণকণ্ঠের পাঠকদের জন্য পোপের বক্তৃতার চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো, অনুবাদ করেছেন সৈয়দ তাওসিফ মোনাওয়ার

 

আমাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানোর জন্য আমি কৃতজ্ঞ। অবশেষে আমরা একত্র হলাম। তরুণরা সবসময় অনন্য, কারণ তারা উদ্দীপ্ত। আমি তরুণদের সঙ্গে মেশার সুযোগ পেলে নিজেও উজ্জীবিত হই। এই উদ্দীপনা নতুন অভিযাত্রার চেতনার সঙ্গে সম্পৃক্ত। উদ্যমী তারুণ্য দুঃসাহসী। তোমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এই দেশের তরুণদেরকে ‘নির্ভয়’ বলে গেছেন। তরুণরা সবসময় সামনে এগিয়ে যেতে প্রস্তুত, নতুন কিছু তৈরি করতে ও ঝুঁকি নিতে তৈরি। আমি সবাইকে এভাবেই এগিয়ে যাওয়ার জন্য উত্সাহ দিতে চাই।

 

তবে, সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সঠিক রাস্তাটা বেছে নিতে হবে। কিন্তু এর মানে কী? এর মানে হলো, লক্ষ্যহীনভাবে চলা যাবে না। আমাদের জীবন উদ্দেশ্যহীন নয়, স্রষ্টা একে উদ্দেশ্য নিয়েই সৃষ্টি করেছেন। তাঁর অনুগ্রহে তিনি আমাদেরকে পরিচালনা করেন। এটা যেন এমন যে তিনি আমাদেরকে কম্পিউটার সফটওয়্যারের ভিতর স্থাপন করেছেন, নিজে কাজ করার স্বাধীনতা আমাদের আছে, কিন্তু সফটওয়্যারের মতোই প্রয়োজন নিজের ‘প্রোগ্রাম’-কে নিয়মিত আপডেট করা। যা করতে হলে সৃষ্টিকর্তার নির্দেশ পালন করতে হবে, তাঁর নির্দেশিত পথে চলতে হবে।

 

লক্ষ্যহীনভাবে চললে সব জ্ঞান বৃথা হয়ে যাবে। যেটি আমাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করে সেটাই প্রকৃত বিদ্যা। যা আমরা দেখতে পাই আমাদের বাবা-মায়ের চোখে, দাদা-দাদি-নানা-নানির চোখে, যারা সৃষ্টিকর্তার উপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখেছিলেন। এটি একমাত্র উপায় যা আমাদেরকে সুখের মিথ্যা প্রতিশ্রুতিকে চেনায় এবং ত্যাগ করতে সাহায্য করে। সত্য-মিথ্যার পার্থক্য বুঝতে শেখায়। ঈশ্বরে বিশ্বাস আমাদেরকে শেখায়, যারা আমাদের চেয়ে আলাদা তাদেরকেও সহজে গ্রহণ করতে হবে। যখন কেউ ব্যর্থ হয় এবং জীবনকে অর্থহীন ভাবতে শুরু করে, তখন স্রষ্টার উপর বিশ্বাস তাকে নতুন করে এগোতে সাহস দেয়। যখন কোনো ব্যক্তি কিংবা কোনো সমাজ কিংবা কোনো ধর্ম বলে তারাই সেরা, তখনই তাদের পতনের শুরু হয়। ‘আমি ভালো, তুমি মন্দ’—এটা বাদ দিয়ে সবাইকে ‘আমাদের’ ভাবতে হবে।

 

আমি খুবই আনন্দিত, কারণ এখানে আমাদের সঙ্গে একত্রে ক্যাথলিক তরুণ-তরুণীদের পাশাপাশি আছে অনেক মুসলিম বন্ধু এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বী বন্ধুরা। আজকের এই সমাবেশের মধ্য দিয়ে তোমরা পারস্পরিক সহাবস্থানের পরিবেশকে আরও সমৃদ্ধ করবে, এমন প্রত্যয়ের কথাই প্রকাশ করছ তোমরা। তোমাদের উপস্থিতি প্রকাশ করছে যে, ধর্মীয় মতপার্থক্য থাকলেও তোমরা অন্যদের নিকটজন হয়ে উঠবে।

 

তোমার সংস্কৃতি তোমাকে বড়দেরকে সম্মান করা শেখায়। বড়রা নতুন প্রজন্মের বেড়ে ওঠাকে প্রেরণা জোগাতে পারেন। তাদের নিজের জীবনের ভুলগুলো যেন পুনরাবৃত্তি না হয় সেই শিক্ষা দিতে পারেন। তাই আশপাশের পারিবারিক সম্পর্কের প্রতি অমনোযোগী হয়ে মোবাইল ফোন নিয়ে মত্ত হয়ে থেকো না। মা-বাবাসহ পরিবারকে সময় দাও। তাঁদের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক স্থাপন করো। দাদা-দাদি ও নানা-নানির সঙ্গে সরাসরি আলাপচারিতা ও দৃঢ় সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে।

 

প্রিয় তরুণ বন্ধুরা, তোমাদের দিকে তাকালে আমি আনন্দিত হই, আশাবাদী হই। আমি তোমাদের নিয়ে অনেক প্রত্যাশা করি, পাশাপাশি তোমাদের দেশ ও সমাজকে নিয়ে। ভালো কাজ, ভালোবাসা এবং সহমর্মিতা নিয়ে বেড়ে ওঠায় ঈশ্বরে আস্থা যেন তোমাদেরকে অনুপ্রাণিত করে। আমি আজই তোমাদের দেশ ছেড়ে চলে যাব, কিন্তু আমার এই আশাবাদ যেন ছড়িয়ে পড়ে সবখানে। আমার জন্যও তোমরা প্রার্থনা কোরো। ঈশ্বর বাংলাদেশের মঙ্গল করুক।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ