গর্ভাবস্থায় দেশের কিশোরীদের অর্ধেকই রক্ত স্বল্পতায় ভুগছে। আর কৈশোরে গর্ভধারণ করায় হতাশায় ভুগছে ১৪ শতাংশ। এছাড়াও পুষ্টিহীনতায় ভুগছে ৬৫ শতাংশ। মানসিক স্বাস্থ্য ভালো নয় ২৭ শতাংশের এবং রক্ত শূন্যতায় ভুগছে ২৫ শতাংশ। বাকিদের আরো ১৫ শতাংশের মধ্যে বিভিন্ন আসক্তি আছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) এর এডোহার্টস বেইজলাইন সার্ভের গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
পঞ্চম আদমশুমারির হালনাগাদ তথ্য মতে, দেশে এখন ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সী কিশোরীর সংখ্যা সাড়ে ৩ কোটি, যা মোট জনগোষ্ঠীর ২২ দশমিক ৫ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জরিপ বলছে, এর মধ্যে ৪৯ শতাংশের বিয়ে হয় ১৮ বছরের আগে। আর ৫৯ শতাংশ কিশোরী ২০ বছরের আগেই গর্ভধারণ করে। রাজধানীর আগারগাঁও বস্তিতে গত সোমবার কথা হয় ১৮ বছরের সুমি বেগমের সঙ্গে। তার সন্তানের বয়স ৩ বছর ৩ মাস। ইতিমধ্যে আবারো তিনি গর্ভবতী হয়ে পড়েছেন। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে আয়রন বড়ি দেয়া হয়েছিল, কিন্তু তার মা ও শাশুড়ি বলেছেন, ‘ওইসব বড়ি খেলে পেটের বাচ্চা মোটা হয়ে যাবে, তখন পেট কেটে ছাড়া বাচ্চা প্রসব হবে না। সে কারণে মা ও শাশুড়ির কথামত সুমি স্বাস্থ্যকর্মীর দেয়া আয়রন ও ফলিক এসিড খায়নি। এরকম ভুল ধারণা আছে আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলের অনেক কিশোরী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের।
বিএসএমএমইউ এর পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগ অ্যাডোহার্টস প্রকল্পভুক্ত গাজীপুর, টাঙ্গাইল, খুলনা ও জামালপুর, এই চার জেলায় এ জরিপ পরিচালনা করে। ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর মাসে এই সার্ভে পরিচালিত হয়। জরিপের ফলাফলে জানা যায়, ১৫ থেকে ১৯ বছরের প্রায় অর্ধেক কিশোর-কিশোরী অপুষ্টিতে ভুগছে। স্বাস্থ্যসেবার জন্য কিশোর-কিশোরীরা সরকারি সেবাকেন্দ্র কম ব্যবহার করে। ১০ থেকে ১১ বছরের কিশোরীদের মধ্যে রক্ত স্বল্পতার হার ১৭ শতাংশ। কিশোরীদের মাসিক পরবর্তী স্বাস্থ্যসেবা নেওয়ার সুযোগ তেমন নেই। তারা এ কারণে ডাক্তারের কাছে যায় না। প্রথম মাসিকের পর কিশোরীদের রক্ত স্বল্পতার হার দ্বিগুণ বৃদ্ধি পায় বলে গবেষণায় জানা যায়।
গবেষকদের একজন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেল্থ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফারিহা হাসিন ইত্তেফাককে বলেন, আমাদের দেশের কিশোরীদের স্বাস্থ্যের অবস্থা কি রকম, নিজেদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে তাদের জ্ঞান কতটুকু, তারা কোনো ধরনের স্বাস্থ্যসেবা পেতে চায় তা অনুসন্ধান করা হয়। পাশাপাশি আমরা তাদের প্রত্যেকের বাড়ি গিয়ে ওজন ও উচ্চতা মেপেছি। আমরা তাদের মায়েদের সঙ্গে কথা বলেছি।
বাংলাদেশ হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. রওশন আরা বেগম বলেন, অপুষ্টির শিকার কিশোরীদের গর্ভ থেকে জন্ম নিচ্ছে রক্ত স্বল্পতা বিশিষ্ট ও সময়ের আগে কম ওজনের অপুষ্ট শিশু। আমাদের দেশের মেয়ে ও ছেলেতে একটা বৈষম্য থেকেই যায়। ছেলে শিশু বেশি খাবে মেয়ে শিশু কম খাবে। তাছাড়া কিশোরীদের খাবার প্রতি একটা অনিহা দেখা যায়। তারা লালশাক, কচুশাক খেতে চায় না। আমরা কিশোরীদের চোখ দেখলেই বুঝতে পারি রক্ত স্বল্পতার বিষয়টি। দ্বিতীয়টি তার হাতের আঙ্গুল ফ্যাকাসে দেখাবে। রক্ত পরীক্ষা করে হিমোগ্লোবিন ৮ থেকে ১০ হলে রক্ত স্বল্পতা আছে বলব আর ৮-এর নিচে নামলেই তাকে সিভিয়ার অ্যানিমিয়া বলব। গর্ভধারণে তখন তারা দুর্বল হয়ে যায় এবং নানা সমস্যায় ভুগতে থাকে।