• রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:২৩ অপরাহ্ন

গার্মেন্টস কারখানার নিরাপত্তায় অগ্রগতি

আপডেটঃ : রবিবার, ১৮ মার্চ, ২০১৮

উত্তর আমেরিকা ভিত্তিক তৈরি পোশাক ক্রেতাদের জোট অ্যালায়েন্স ফর বাংলাদেশ ওয়ার্কার সেফটির (অ্যালায়েন্স) নির্বাহী পরিচালক বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস মরিয়ার্টি এক সংবাদ সম্মেলনে বলিয়াছেন যে, তাহাদের জোট বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্পের নিরাপত্তার উন্নয়নে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করিয়াছে। এখন পর্যন্ত অ্যালায়েন্স সদস্য কারখানায় সম্পন্ন হইয়াছে ৮৮ শতাংশ সংস্কারকাজ। তন্মধ্যে ৮৪ শতাংশ সংস্কারই হইয়াছে জীবনের নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন খাতে। ফায়ার ডোর স্থাপন, বৈদ্যুতিক ব্যবস্থার উন্নয়ন, বহির্গমনের বিকল্প পথ তৈরি ইত্যাদি ক্ষেত্রে এই অগ্রগতি সাধুবাদযোগ্য। বিশেষ করিয়া ২৯০টি কারখানার মধ্যে ২৬৪টিতে অবকাঠামোগত সংস্কারের ফলে এগুলো এখন ফাউন্ডেশন, কলাম ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল বিল্ডিংয়ের আরোপিত লোডের চাহিদা মিটাইতে সক্ষম। জানা মতে,  এই জোট এই পর্যন্ত ১৫ লক্ষ শ্রমিক, ২৭ হাজারের বেশি সিকিউরিটি গার্ড এবং ১৭টি সিকিউরিটি গার্ড কোম্পানির ম্যানেজারদের প্রশিক্ষণও দিয়াছে। ১৭২টি কারখানায় গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত ওয়ার্কার সেফটি কমিটি গঠনের কাজে হাত দিয়াছে যাহারা কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা কমপ্লায়েন্স মনিটরিংয়ের অধিকার লাভ করিবেন। অ্যালায়েন্সের এইসব সাফল্যের জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি জানাই অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।
২০১৩ সালে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর বিশ্বব্যাপী সমালোচনার মুখে পড়ে বাংলাদেশ। ইহার পর গার্মেন্টস কারখানার নিরাপত্তা জোরদারে গ্রহণ করা হয় বহুমুখী উদ্যোগ। এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরীক্ষা ও সংস্কার কাজ তদারকির লক্ষ্যে ব্র্যান্ড ও বায়ারদের সমন্বয়ে অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স নামে ক্রেতাদের দুইটি জোট গঠিত হয়। এখন একটি জোটের সাফল্য অর্জনের চিত্র আমরা পাইলাম। এইদিকে ইত্তেফাকে প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হইয়াছে, ২৬ ভাগ গার্মেন্টস ভবনের নিরাপত্তা সন্তোষজনক নহে। এই অভিমত শ্রম মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের (ডিআইএফই)। তাহাদের মতে, অন্তত ১৬ শতাংশ গার্মেন্টস কারখানায় পর্যাপ্ত অগ্নি নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নাই। আর অন্তত ৩০ শতাংশ কারখানায় নাই পর্যাপ্ত বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত ব্যবস্থা। ইহা এক হাজার ৭৭১টি কারখানা পরিদর্শনের ভিত্তিতে প্রণীত প্রতিবেদনের ফলাফল। আবার বিজিএমইএভুক্ত ৩১ শতাংশ কারখানা এবং বিকেএমইএভুক্ত ৯ শতাংশ কারখানার নিরাপত্তা অসন্তোষজনক।
মোটকথা, আমরা যেইভাবেই বিশ্লেষণ করি না কেন, আসলে তাজরিন ও রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর গত পাঁচ বত্সরে আমাদের গার্মেন্টস কারখানার নিরাপত্তার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হইয়াছে। জেমস মরিয়ার্টি সেই কথাই বোঝাইতে চাহিয়াছেন। বাকি কারখানাগুলিতে যেইসব সমস্যা আছে, তাহা সকলের আন্তরিকতায় অচিরেই দূর হইয়া যাইবে বলিয়া আমরা আশা করি। এইখানে দেখিবার বিষয় হইল, এই যে অগ্রগতি সাধিত হইয়াছে তাহা ভবিষ্যতে কতটা টেকসই হয়। এই সাফল্য ধরিয়া রাখিতে সরকার, গার্মেন্টস কারখানার মালিক, বায়ার, শ্রমিক সংগঠন ও শ্রমিক সাধারণ সকলেরই সহযোগিতা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। নিরাপত্তামানে শতভাগ অগ্রগতি লাভ করিতে হইলে গার্মেন্টস পণ্যের মূল্য বৃদ্ধিও জরুরি। কিন্তু বায়াররা এই ব্যাপারে কতটা আন্তরিক হইবেন তাহাই বড় প্রশ্ন। তাহারা সস্তায় তৈরি পোশাক ক্রয় করিয়া বিক্রয় করিতেছেন কয়েক গুণ বেশি দামে। এইদিকে গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হইয়াছে। এমতাবস্থায় গার্মেন্টস শিল্পের সার্বিক নিরাপত্তা বিধানে গার্মেন্টস পণ্যের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তিও নিশ্চিত করিতে হইবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ