আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য ইংরেজির গুরুত্ব অনস্বীকার্য। উচ্চতর শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি—প্রতিটি ক্ষেত্রেই ইংরেজির বিশেষ কদর রহিয়াছে। বর্তমানে জাতীয় শিক্ষাক্রমে বাংলা মিডিয়ামের পাশাপাশি চালু রহিয়াছে ইংরেজি ভার্সন। অনেক অভিভাবক চাহেন তাহাদের সন্তানেরা দেশের সিলেবাসেই পড়ালেখা শিখুক, তবে তাহা ইংরেজি ভার্সনে। এই আশায় যে, একজন শিক্ষার্থী যখন বাংলা বাদে অন্যসব বিষয়ে ইংরেজিতে পড়িবে, তখন তাহাদের ইংরেজি ভাষার দক্ষতা বৃদ্ধি পাইবে। আবার যেই সকল অভিভাবক তাহাদের সন্তানদের ইংরেজি মিডিয়াম অর্থাত্ ব্রিটিশ কারিকুলামে পড়াইতে চাহেন, কিন্তু নানা কারণে সম্ভবপর হইয়া ওঠে না, তাহারাও অনেকে জাতীয় শিক্ষাক্রমের সিলেবাস অনুসরণ করা ইংরেজি ভার্সনের দিকেই ঝুঁকিয়া পড়েন। এই কারণে গত দেড় দশকে ইংরেজি ভার্সনের শিক্ষার্থীর সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাইয়াছে। কিন্তু অভিভাবকদের অভিযোগ রহিয়াছে যে, ইংরেজি ভার্সনের বইয়ের সর্বত্রই রহিয়াছে অযত্ন আর অবহেলার ছাপ। ইংরেজি ভার্সনের ভুলেভরা বইয়ের জন্য তাহারা এখন প্রমাদ গুনিতেছেন।
পাঠ্যবইয়ের ইংরেজি ভার্সনে ভুলের পাশাপাশি অসংখ্য বানান ভুল এবং বাক্যগঠনে অসঙ্গতিরও প্রমাণ মিলিয়াছে। ইত্তেফাকে প্রকাশিত এই সংক্রান্ত প্রতিবেদন হইতে জানা যায়, ইংরেজি ভার্সনের শিক্ষার্থীদের জন্য বাংলা ভার্সনের বই নির্ভুল ও হুবহু অনুবাদ করিবার নিয়ম রহিয়াছে। কিন্তু বাস্তবে ইংরেজি ভার্সনের বইয়ে প্রচুর ভুল দৃশ্যমান হইতেছে। পাশাপাশি অনুবাদেও থাকিতেছে বিবিধ ধরনের ত্রুটি। আবার কোনো কোনো গুরুত্বপূর্ণ অংশ অনুবাদই করা হইতেছে না। স্বাভাবিকভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হইতেছে ইংরেজি ভার্সনের ৫০ হাজার শিক্ষার্থী। কারণ পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা হয় বাংলা ভার্সনের বই থেকেই। অতঃপর বাংলা ভার্সনের প্রশ্নপত্র অনুবাদ করা হয় ইংরেজি ভার্সনের শিক্ষার্থীদের জন্য। এই কারণে বাংলা ভার্সনের বইয়ের কোনো অংশ ইংরেজি ভার্সনের জন্য অনুবাদ করা না হইলে সেই অংশ হইতে পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্ন প্রণয়ন করা হইলে তাহার উত্তর দেওয়া ইংরেজি ভার্সনের শিক্ষার্থীর জন্য অসম্ভব হইয়া পড়ে। ইংরেজি ভার্সনের অভিভাবকদের অভিযোগ রহিয়াছে যে, এই ঘটনা সম্প্রতি বেশ কয়েকবার ঘটিয়াছে। অথচ এসএসসি’র প্রশ্নপত্রের এসব ভুলের জন্য ইংরেজি ভার্সনের শিক্ষার্থীরা ‘অটো নম্বর’ পাইবে না।
জানা যায়, সৃজনশীল পদ্ধতি শুরু হইবার পর ইংরেজি ভার্সনের অবস্থা আরো বেশি লেজেগোবরে হইয়া পড়িয়াছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান ইংরেজি ভার্সনের পাঠ্যপুস্তকে প্রচুর ভুল ও অসঙ্গতির কথা স্বীকার করিয়াছেন। বই অনুবাদের জন্য এনসিটিবি ৬৫ জন বিশেষজ্ঞকে নিয়োজিত করিবার কথাও জানাইয়াছে। আমরা আশা করিব, এইসব ভুল ও অসঙ্গতিপূর্ণ অনুবাদ যাহারা করিয়াছেন প্রমাণ সাপেক্ষে তাহাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইবে, যাহাতে ভবিষ্যতে এই কাজে দায়িত্বপ্রাপ্তরা আরো সতর্কের সহিত অনুবাদকার্য সম্পাদন করেন।