• রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:১২ অপরাহ্ন

চিকিত্সা বর্জ্য ও ক্রমবর্ধমান স্বাস্থ্যঝুঁকি

আপডেটঃ : বৃহস্পতিবার, ২২ মার্চ, ২০১৮

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, সারা দেশে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান আছে ২ হাজার ২৩৫টির বেশি। তদুপরি চালু রহিয়াছে আরো প্রায় সাড়ে ১২ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক। ইহার বাহিরে বেসরকারি খাতে নিবন্ধিত হাসপাতাল ও ক্লিনিক আছে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার। বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার বা প্যাথলজিক্যাল সেন্টার আছে ছয় হাজারের বেশি। অথচ অধিকাংশ হাসপাতাল বর্জ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনা বিধি মানিয়া চলিতেছে না। পরিবেশ আইনে রহিয়াছে, ক্লিনিক বা ডায়গনস্টিক সেন্টার স্থাপনের পূর্বে নিজস্ব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বা ব্যবহূত প্লাস্টিক সুচ, সিরিঞ্জ, প্লাস্টিক বর্জ্য প্রভৃতি অটোক্লেভ যন্ত্রে জীবাণুমুক্ত করিয়া অপসারণ করিবার সুবিধা রাখিতে হইবে। প্যাথলজির তরল বর্জ্য পরিশোধনপূর্বক জীবাণুমুক্ত করিয়া অপসারণ এবং তুলা, গজ, ব্যান্ডেজ, ইত্যাদি পরিবেশসম্মতভাবে ইনসিনারেটরে পোড়াইয়া ফেলিবার ব্যবস্থা নিশ্চিত করিয়া পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র গ্রহণ করিতে হইবে। কিন্তু অধিকাংশ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়গনস্টিক সেন্টার পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়াই চলিতেছে।

পত্রিকান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা গিয়াছে যে, পটুয়াখালীর কলাপাড়া হাসপাতালের বর্জ্য ফেলা হইতেছে যত্রতত্র। হাসপাতালের প্রতিটি ড্রেনই রোগজীবাণুর কারখানা। সর্বত্র ময়লা, রক্ত মাখা গজ, সিরিঞ্জ। মফস্বলের কথা কি বলিব! দেশের সবচাইতে বড় চিকিত্সাকেন্দ্র ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। সেখানে প্রতিটি করিডোরে রাখা কালো রঙের ডাস্টবিন। হলুদ বা অন্য রঙেরও রাখা আছে কোথাও কোথাও। বর্জ্যের ধরন অনুযায়ী তাহা নির্দিষ্ট রঙের ডাস্টবিনে ফেলিবার কথা। কিন্তু ব্যবহূত সুচ, সিরিঞ্জ কিংবা রক্তমাখা তুলা সবই ফেলা হইতেছে একই বিনে। জীবাণুমুক্তকরণ ছাড়াই কঠিন এসকল চিকিত্সা বর্জ্য চলিয়া যাইতেছে সাধারণ বর্জ্যের ভাগাড়ে। আর পরিশোধন ছাড়াই নালা-নর্দমা হইয়া তরল বর্জ্য মিশিতেছে নদীতে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, রাজধানীতে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে তিন হাজার টন কঠিন বর্জ্য উত্পন্ন হয়। ইহার মধ্যে ৫০ টন আসিতেছে হাসপাতাল ও ক্লিনিক হইতে। আর এই বর্জ্যের মাত্র ৮ শতাংশ রহিয়াছে যথাযথ ব্যবস্থাপনার আওতায়। বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকারী বেসরকারি সংস্থা ওয়েস্ট কনসার্নের গবেষণা হইতে জানা যায়, ২০১৭ সালে সারা দেশে চিকিত্সা প্রতিষ্ঠানগুলিতে উত্পন্ন বর্জ্যের পরিমাণ ছিল সাড়ে ২১ হাজার টন। এখনই এসকল বর্জ্যের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা না করিলে আগামীতে রোগ প্রতিরোধ কঠিন হইয়া পড়িবে।

দ্রুত বিকাশমান দেশের চিকিত্সাখাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ হইয়া দাঁড়াইয়াছে। চিকিত্সা প্রার্থী সাধারণ মানুষ এখনো যেমন নানারূপ হয়রানি, প্রতারণা ও ভুল চিকিত্সার শিকার হইতেছে , তেমনি অনিয়ন্ত্রিত ও অপরিশোধিত মেডিক্যাল বর্জ্য পরিবেশ বিপর্যয় ও স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াইয়া চলিয়াছে। পরিবেশ আইন লঙ্ঘনকারী ক্লিনিক বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান থাকিলেও তাহার প্রয়োগ তেমন একটা দেখা যায় না। ২০০৮ সালে দেশে চিকিত্সা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা তৈরি করা হইয়াছিল। কিন্তু ইহাতে হাসপাতালগুলির জন্য কোনো নির্দেশনা নাই। সুনির্দিষ্ট আইনের অভাব, প্রচার, নিয়ন্ত্রণ ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে জনস্বাস্থ্য এবং পরিবেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বর্জ্য সৃষ্টিকারী এই সকল হাসপাতাল ও ক্লিনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আওতায় আসিতেছে না। এই ক্ষেত্রে একটি সমন্বিত ও সুশৃঙ্খল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অত্যাবশ্যক হইয়া পড়িয়াছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ