• রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৫৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম:

গোটা পৃথিবীই এখন তাহাদের কর্মক্ষেত্র

আপডেটঃ : শনিবার, ২৪ মার্চ, ২০১৮

শিক্ষিত তরুণদের মধ্যে বেকারত্ব বাড়িতেছে এই খবর নূতন নহে। সম্প্রতি প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)-এর শ্রমশক্তি জরিপের ফল তাহা পুনরায় নিশ্চিত করিল মাত্র। বাস্তবতা হইল, প্রতিবত্সর দেশের শ্রমবাজারে যেই হারে শ্রমশক্তির প্রবেশ ঘটিতেছে, সেই হারে কর্মসংস্থান হইতেছে না। বিবিএস জরিপের তথ্যমতে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে ১৪ লক্ষ শ্রমশক্তি যুক্ত হইয়াছে— যাহাদের বয়স ১৫ বত্সরের উপরে। কিন্তু এই সময়ে দেশের অভ্যন্তরে নূতন কর্মসংস্থান হইয়াছে মাত্র ১৩ লক্ষ। সব মিলাইয়া, বর্তমানে দেশে বেকারের সংখ্যা হইল ২৬ লক্ষ ৮০ হাজার। আগের অর্থবত্সরে এই সংখ্যা ছিল ২৬ লক্ষ। বেকারত্বের হার বিশ্লেষণে দেখা গিয়াছে, দেশে উচ্চ শিক্ষিতদের মধ্যে বেকারের হার বাড়িতেছে। ২০১৫-১৬ অর্থবত্সরে তরুণ বেকারদের মধ্যে উচ্চ শিক্ষিতের হার ছিল ১২ দশমিক ১১ ভাগ। ২০১৬-১৭ অর্থবত্সরে এই হার দাঁড়াইয়াছে ১৩ দশমিক ৪ ভাগে। সংখ্যার হিসাবে ৩ লাখ ৯০ হাজার উচ্চশিক্ষিত বেকার রহিয়াছে যাহাদের বয়স ৩০ বছরের নীচে। তন্মধ্যে দুই বত্সরের বেশি সময় ধরিয়া বেকারত্বের যাতনা সহিতেছেন এমন তরুণের সংখ্যাও ১১ শতাংশের বেশি। এই তথ্যগুলি শুধু যে সংবাদপত্রে প্রকাশিত হইয়াছে তাহাই নহে, খোদ পরিকল্পনা মন্ত্রীর উপস্থিতিতেই বিবিএস-এর এই জরিপ প্রতিবেদনটি উপস্থাপিত হইয়াছে। ইহার তাত্পর্য হইল, সরকারের সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারক মহল এই ব্যাপারে পূর্ণ সচেতন এবং তাহাদের সদিচ্ছার বিষয়টিও প্রশ্নাতীত।
উচ্চ শিক্ষিতদের মধ্যে বেকারের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি হওয়ার সুনির্দিষ্ট কিছু কারণ রহিয়াছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তার মতে, উচ্চশিক্ষিত তরুণেরা ভালো চাকুরীর জন্য অপেক্ষা করেন। এজন্যই তাহাদের মধ্যে বেকারের হার বেশি। আবার পরিকল্পনামন্ত্রীর মন্তব্যটিও প্রণিধানযোগ্য। তিনি যথার্থই বলিয়াছেন যে, পরিসংখ্যান হইল একটি ধারণাগত বিষয়। ইহাতে মূল চিত্রটি সবসময় উঠিয়া আসে না। কারণ বেশ কয়েক বত্সর যাবত্ সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে দেশজুড়িয়া যে কর্মযজ্ঞ চলিতেছে তাহার ইতিবাচক প্রভাব সর্বত্রই তাত্পর্যপূর্ণভাবে দৃশ্যমান। গ্রামাঞ্চলে কাজের লোক খুঁজিয়া পাওয়াই কঠিন হইয়া পড়িয়াছে। অন্যদিকে, দেশে উচ্চশিক্ষার হার যত দ্রুত বৃদ্ধি পাইতেছে সেই হারে কর্মসংস্থান যে বাড়িতেছে না তাহাও অস্বীকার করিবার উপায় নাই। পাশাপাশি ইহাও সত্য যে, কর্মমুখী শিক্ষার অভাবে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও বহু প্রতিষ্ঠান যোগ্যকর্মী খুঁজিয়া পাইতেছে না। সন্দেহ নাই যে, বেকারত্বের কারণে তরুণদের একাংশের মধ্যে হতাশা বিরাজ করিতেছে। কেহ কেহ নীতিবহির্ভূত পথেও সমস্যার সমাধান খুঁজিতেছেন। তবে লক্ষ্য করিলে দেখা যাইবে ইহার মূলে রহিয়াছে অতিমাত্রায় চাকুরীনির্ভরতা।
আশার কথা হইল, শিক্ষিত তরুণরা বসিয়া নাই। আত্মকর্মসংস্থানের পাশাপাশি অন্য অনেকের কর্মসংস্থানেও তাত্পর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখিতেছেন এমন শিক্ষিত তরুণ-তরুণীর সংখ্যাও ক্রমবর্ধমান। বিশ্বায়ন তথ্যপ্রযুক্তিসহ নানা ক্ষেত্রে সম্ভাবনার যে নূতন দিগন্ত খুলিয়া দিয়াছে শিক্ষিত তরুণদের একটি অংশ যেমন ইহার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করিতেছেন, তেমনি কেহ কেহ তাক-লাগানো সাফল্য দেখাইতেছেন কৃষিসহ উত্পাদনশীল ও সেবামূলক বিভিন্ন খাতে। অতএব, হতাশ হইবার কিছু নাই। দেশ আগাইয়া যাইতেছে। সরকারের মুখাপেক্ষী না হইয়া শিক্ষিত তরুণরা নিজেরাই এখন উদ্যোক্তা হিসাবে জাতির সেই অগ্রযাত্রাকে আরো বেগবান করিয়া তুলিতে পারেন। গোটা পৃথিবীই এখন তাহাদের কর্মক্ষেত্র।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ