যুক্তফ্রন্ট চেয়ারম্যান ও বিকল্পধারা সভাপতি অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেছেন, কথা খুব সুস্পষ্ট-জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ না করলে আমরা বিএনপির সঙ্গে কোনো ঐক্যে যাব না, যাব না, যাব না। এছাড়া ভারসাম্যের রাজনীতি প্রতিষ্ঠার জন্য যুক্তফ্রন্ট যে প্রস্তাব দিয়েছে সেটিও মানতে হবে। এই দুটি শর্ত বিএনপি মানলে তাদের সঙ্গে ঐক্য হতে পারে। গতকাল শনিবার রাজধানীর বারিধারায় নিজ বাড়িতে পৃথক সংবাদ সম্মেলনে তিনি নিজের এই অবস্থানের কথা জানান। সংবাদ সম্মেলনে তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন- বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান ও যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি. চৌধুরী।
অধ্যাপক বি. চৌধুরী বলেন, ঐক্যে থাকতে হলে বিএনপিকে বলা হয়েছিল জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করে আসতে হবে। বিএনপি সেই কথা রাখেনি। স্বাধীনতাবিরোধী কেউ থাকলে তাদের সঙ্গে বিকল্পধারা কোনো ঐক্যে যাবে না। সংবাদ সম্মেলনে মাহী বি. চৌধুরী বলেন, আবারও একদলীয় কর্তৃত্ববাদী সরকার গঠনের জন্য বিএনপিকে ক্ষমতায় নিতে আমরা ঐক্য করতে রাজি নই। ঐক্য হতে হবে জনগণের জন্য, ঐক্য হতে হবে ভারসাম্যের রাজনীতি প্রতিষ্ঠার জন্য।
অধ্যাপক বি. চৌধুরী বলেন, এক স্বৈরাচারকে বিদায় করে আরেক স্বৈরাচারকে ক্ষমতায় আনা যাবে না। তাহলে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য কিংবা দেশের বিদ্যমান এই দুরবস্থার কখনো পরিবর্তন হবে না। কাজেই কোনো দল যাতে আর এককেন্দ্রীকভাবে ক্ষমতায় আরোহন না করতে পারে, দেশে ও জনজীবনে যাতে পুনরায় আর স্বৈরসরকারের আবির্ভাব না ঘটে সেজন্যেই আমরা রাজনীতিতে ভারসাম্য আনায়নের কথা বলেছি। যতদিন পর্যন্ত ক্ষমতায় ভারসাম্য না আসবে, ততদিন পর্যন্ত বাংলাদেশে ইতিবাচক কোনো পরিবর্তন আসবে না। তিনি বলেন, যারা এদেশের মানচিত্রে বিশ্বাস করে না, এদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করে না- তাদের সঙ্গেও আমাদের কোনো ঐক্য হতে পারে না।
বি. চৌধুরী গণফোরাম নেতা ড. কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ করে বলেন, আমরা ইতিপূর্বে এই ঐক্যের ব্যাপারে আনেক আগে থেকেই প্রক্রিয়া করে যাচ্ছিলাম। তারই ধারাবাহিকতায় শনিবার বিকালে ড. কামাল হোসেনের বেইলি রোডের বাসায় আমন্ত্রণ জানানো হয় বৈঠকের। সেই বৈঠক শেষে জাতীয় ঐক্যের ঘোষণা দেওয়ার কথা। কিন্তু বিকালে আমি তার বাসার সামনে গিয়ে ১৪/১৫ মিনিট অপেক্ষা করেছি। কিন্তু সেও বাসায় নেই, দরজা খোলারও কোনো লোক ছিল না। ভিতরে নিয়ে বসিয়ে যে এক কাপ চা খাওয়াবে সে লোকটা পর্যন্ত ছিল না। অপেক্ষা শেষে যখন ফিরে আসছিলাম তখন তার দলের মহাসচিব মোস্তফা মহসিন মন্টু ফোন দিয়ে বলেন যে, আপনারা মতিঝিলে ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে চলে আসেন। কিন্তু তবুও ড. কামাল এখনো পর্যন্ত (রাত ৮টা) একটা ফোনও করেনি। সে তো বলতে পারতো যে, সরি… আমি একটা জরুরি কাজে চলে এসেছি। বড় ভাই আপনি বসে এককাপ চা খান, আমি আসতেছি। কিন্তু সে এটা বলার কোনো প্রয়োজনই মনে করেনি। কাজেই সাধারণভাবেই প্রশ্ন উঠে যে এটা কী তাদের পরিকল্পিত।
বি. চৌধুরী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, কামাল হোসেন প্রথমে গণফোরাম নিয়ে পরে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া নিয়ে আমাদের সঙ্গে আসতে চান বলে যখন জানালেন আমরা আনন্দিত হলাম। বিএনপির প্রস্তাব যখন আসল, বিএনপির মহাসচিব এক বছরের বেশি আগে থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। নিজেও আমাদের সঙ্গে ৫/৬ বার দেখা করেছেন। বিএনপিকে দুটো শর্ত দিয়েছিলেন বলে জানান বি. চৌধুরী। এর একটি হল স্বাধীনতাবিরোধী কোনো শক্তিকে না রাখা এবং কোনো দলের একক আধিপত্য না থাকা।
বিকল্পধারা সভাপতি বলেন, আমি বলতাম- আমাদের দুটি ব্যাপার আছে- আমরা মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তি, কেবল তাদের সঙ্গে ঐক্য করতে পারি। দুই নম্বর, বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইতিবাচক ধারা আনতে হলে সরকারের স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ করতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বিকল্পধারা মহাসচিব আবদুল মান্নান বলেন, আজকের পর থেকে জাতীয় ঐক্যের নামে বিএনপির সাথে কোনো বৈঠকে বসে জাতিকে বিভ্রান্ত করার সুযোগ বিকল্পধারা দেবে না।
যুক্তফ্রন্টের দুই নেতা আ সম আবদুর রব ও মাহমুদুর রহমান মান্না জাতীয় প্রেসক্লাবে ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে থাকার বিষয়ে মাহী বলেন, ‘তারা সেখানে পরকীয়া করতে গেছেন। স্বাধীনতাবিরোধীদের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যে ঐক্য প্রক্রিয়া চলছে, তার সাথে আমরা নেই।’
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে দেওয়া বক্তব্যে মাহী বলেন, ঐক্য প্রক্রিয়া থেকে আমরা সরে আসছি না। তবে আমাদের না জানিয়েই জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হচ্ছে। আমরা ঐক্য করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু বারবার বাধা এসেছে। ৯ অক্টোবর রবের বাসায় ঐক্য প্রক্রিয়ার বৈঠকে একটি ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ ঘটনা ঘটার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারপরও ঐক্যের খাতিরে তারা সব মেনে নিয়েছিলেন।