ড. কামাল হোসেন, আ স ম রব ও মাহমুদুর রহমান মান্নাকে নিয়ে ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’ গঠনের চারদিনের মাথায় বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দল থেকে বের হয়ে গেল দুই শরিক বাংলাদেশ ন্যাপ ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি)। গতকাল মঙ্গলবার বিকাল তিনটায় রাজধানীর গুলশানে একটি কমিউনিটি সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপির জোট ছাড়ার ঘোষণা দেন বাংলদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গাণি ও এনডিপি চেয়ারম্যান খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা। এরমধ্যে বাংলাদেশ ন্যাপ নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ও এনডিপি নিবন্ধনহীন দল।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এরশাদ সরকারের মন্ত্রী থাকা মরহুম শফিকুল গণি স্বপনের পুত্র জেবেল রহমান গাণি বলেন, ‘১/১১-এর কুশীলব, মাইনাস টু ফরমুলা বাস্তবায়নকারী যখন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নামে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে, তখন আমরা মনে করি বিএনপি তার সকল নৈতিক অবস্থান থেকে বিচ্যুত হয়েছে। এই প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে ২০ দলীয় জোটের শরিক দল বাংলাদেশ ন্যাপ ও এনডিপি সাংবিধানিক, নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির স্বার্থে আজকে এই মুহূর্ত থেকে জোটের সঙ্গে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করছে।’ ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বতর্মান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক এ সংবাদ সম্মেলনে এনডিপি চেয়ারম্যান খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা, বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়াসহ দল দুটির নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
গাণি-মোর্ত্তজা ভিড়তে পারেন বি. চৌধুরীর সঙ্গে
বাংলাদেশ ন্যাপ, এনডিপি ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের দায়িত্বশীল একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গাণির বাংলাদেশ ন্যাপ ও গোলাম মোর্ত্তজার এনডিপি ভিড়তে পারে বিকল্পধারার সভাপতি অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সঙ্গে। বিকল্পধারা, বাংলাদেশ ন্যাপ ও এনডিপিসহ আরও কয়েকটি দল নিয়ে বি. চৌধুরী ভেঙে যাওয়া জোট যুক্তফ্রন্টে প্রাণ ফেরাতে পারেন। এর আগে আ স ম আবদুর রবের জেএসডি ও মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্যকে নিয়ে বিকল্পধারা গঠন করে যুক্তফ্রন্ট। তবে রব ও মান্না ঐক্যফ্রন্টে চলে যাওয়ায় যুক্তফ্রন্ট কার্যত অস্তিত্বহীন হয়ে যায়।
গতকালের সংবাদ সম্মেলনের পর বি. চৌধুরীর সঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা সম্পর্কে বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া ইত্তেফাককে বলেন, ‘আমরা এখনই কোনো জোটে যাওয়ার কথা চিন্তা করছি না। তবে উদ্ভুত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সঙ্গতকারণেই আমরা বি. চৌধুরী ও কাদের সিদ্দিকীসহ আরও কয়েকজনের সাথে বৈঠক করব।’
সূত্রমতে, বিকল্পধারার যুগ্ম-মহাসচিব মাহী বি. চৌধুরী বেশ কিছুদিন আগে থেকেই জেবেল রহমান গাণির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন। এছাড়া কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গেও গত রবিবার কথা বলেছেন বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান।
বি. চৌধুরীকে বহিষ্কার করে পৃথক বিকল্পধারা
গঠনের উদ্যোগ একাংশের
এদিকে, আলাদাভাবে বিকল্পধারা গঠনের প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটির একাংশ। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার কারণে গত শনিবার বিকল্পধারা থেকে বহিষ্কার হন দলের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট শাহ মোহাম্মদ বাদল ও দলের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক জানে আলম হাওলাদার। বাদলসহ বেশকিছু নেতা-কর্মী নিজেরা সংগঠিত হচ্ছেন। তারা বিকল্পধারা নামেই পৃথক দল গঠনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বাদল ইত্তেফাককে বলেন, ‘বিকল্পধারার কেন্দ্রীয় কমিটিতে ৭১ জন থাকলেও সক্রিয় আছেন ২০-২৫ জন। এদের মধ্যে ১৬-১৭ জন আমাদের সঙ্গে। আমরা ৩/৪ দিনের মধ্যে তলবি সভা ডাকবো, সেখানে বি. চৌধুরীকে বহিষ্কার করে দলের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে।’ বাদল আরও বলেন, ‘বিকল্পধারার মূল সমস্যা মাহী বি. চৌধুরী, উনি দলকে বাণিজ্যিকীকরণ করেছেন। আর ছেলের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করেছেন বি. চৌধুরী।’