• শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১২:০৬ পূর্বাহ্ন

পাকিস্তানে ১৩ বছরের গৃহকর্মীকে চকলেট চুরির সন্দেহে হত্যা

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

পাকিস্তানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পাঞ্জাব প্রদেশে ১৩ বছর বয়সী গৃহকর্মীকে হত্যার অভিযোগে আটক করা হয়েছে এক দম্পতিকে। অভিযোগ উঠেছে, চকলেট চুরির সন্দেহে ওই গৃহকর্মীকে তাঁরা নির্মম নির্যাতন করে মেরে ফেলেছেন।

মঙ্গলবার বিবিসি জানিয়েছে, ইকরা নামের ওই কিশোরী গত বুধবার হাসপাতালে মারা যায়। তাকে ভয়ংকরভাবে নির্যাতনের বিষয়টি পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে বেরিয়ে এসেছে।

পাঞ্জাব প্রদেশের রাওয়ালপিন্ডি-তে ঘটে যাওয়া এই ঘটনায় দেশজুড়ে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ‘জাস্টিস ফর ইকরা’ হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে হাজার হাজার মানুষ সামাজিক মাধ্যমে ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছেন। ঘটনাটি পাকিস্তানে শিশু শ্রম ও গৃহকর্মীদের প্রতি অমানবিক আচরণের বিষয়টিকে আবারও আলোচনায় এনেছে।

পাকিস্তানের আইন অনুযায়ী, ১৫ বছরের নিচে কোনো শিশুকে গৃহকর্মী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া নিষিদ্ধ। কিন্তু বাস্তবে এই নিয়ম প্রায়ই লঙ্ঘিত হয়। ইকরার বাবা ৪৫ বছর বয়সী সানা উল্লাহ একজন কৃষক। তিনি বলেন, ‘তার (ইকরা) মৃত্যু আমার ভেতরটাকে চূর্ণ করে দিয়েছে।’

সানা উল্লাহ জানান, দারিদ্র্যের কারণেই ইকরাকে মাত্র ৮ বছর বয়স থেকেই গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতে পাঠাতে হয়েছিল। ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে পরিবার এই কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়।

গত দুই বছর ধরে ইকরা অভিযুক্ত দম্পতির বাড়িতে কাজ করছিল। এই দম্পতির ৮টি সন্তান রয়েছে। সবার দেখভাল করেও পাকিস্তানি মুদ্রায় মাত্র ৩ হাজার রুপি পারিশ্রমিক পেত সে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা মাত্র ১৩০০ টাকা।

পুলিশ জানিয়েছে, ইকরাকে চকলেট চুরির অভিযোগে মারধর করা হয়। তার দেহে বারবার নির্যাতনের চিহ্ন পাওয়া গেছে।

বিবিসির হাতে আসা ছবি ও ভিডিওতে দেখা গেছে, ইকরার পা ও হাতে একাধিক ভাঙা হাড় এবং মাথায় গুরুতর আঘাতের চিহ্ন ছিল।

একজন কোরআন শিক্ষক ইকরাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। বর্তমানে ইকরার মৃত্যুর পূর্ণ তদন্তের জন্য ময়নাতদন্ত চলছে।

এই বিষয়ে সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। একজন লিখেছেন, ‘সে কি সত্যিই চকলেটের জন্য মারা গেল?’

অন্য একজন মন্তব্য করেন, ‘এটি শুধু একটি অপরাধ নয়। এটি আমাদের সেই ব্যবস্থাকে প্রতিফলিত করে, যেখানে ধনীরা গরিবদের একবার ব্যবহার করে ফেলে দেয়।’

ইকরার গৃহকর্তা রাশিদ শফিক ও তাঁর স্ত্রী সানা-সহ মোট তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে পাকিস্তানে এমন ঘটনার বিচার হওয়া বিরল। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগী পরিবারকে টাকার বিনিময়ে মামলা মিটিয়ে নিতে বাধ্য করা হয়।

২০১৮ সালে দেশটির এক বিচারক ও তাঁর স্ত্রী ১০ বছর বয়সী গৃহকর্মী তৈয়বাকে নির্যাতনের অভিযোগে তিন বছরের কারাদণ্ড পান। কিন্তু পরে তাঁদের সাজা কমিয়ে মাত্র এক বছরে নামিয়ে আনা হয়েছিল।

পাকিস্তানের আইনে গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রেও ভুক্তভোগীর পরিবার ‘আল্লাহর নামে’ আসামিকে ক্ষমা করতে পারেন। বাস্তবে এই ক্ষমার পেছনে বেশির ভাগ সময়ই আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি জড়িত থাকে।

জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা (ইউনিসেফ) অনুসারে, পাকিস্তানে ৩৩ লাখ শিশু শ্রমিক রয়েছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) তথ্যানুযায়ী, পাকিস্তানের ৮৫ লাখ গৃহকর্মীর বেশির ভাগই নারী ও কিশোরী মেয়ে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ