এস. কে কামরুল হাসানা॥
দরপত্র বিক্রির প্রায় দশ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে পৌর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। দরপত্র বিক্রির সময় ঠিকাদারদের রশিদ না দিয়ে এ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলর, প্রকৌশলী ও অফিসের কয়েকজনের বিরুদ্ধে এ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ থাকলেও পৌরসভার উপর থেকে নিচ পর্যন্ত সবাই এ টাকার ভাগ পেয়েছেন বলে কানাঘুষা রয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, সাতক্ষীরা পৌরসভায় ২০১৭-২৯১৮ অর্থবছরে এক নম্বর দরপত্র বিজ্ঞপ্তিতে ১৬১ নম্বর স্মারকে ছয়টি গ্রুপে দরপত্র আহ্বান করে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তি অনুসারে দরপত্র ক্রয়ের শেষ তারিখ নির্ধারণ করা হয় ৩ জানুয়ারি ২০১৮ বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত। পরের দিন ৪ জানুয়ারি বেলা একটা পর্যন্ত দরপত্র দাখিলের তারিখ ও সময় নির্ধারণ করা হয়। সর্বমোট এক কোটি ৫০ লাখ ২৮ হাজার টাকার উন্নয়ন কাজে ছয়টি গ্রুপের দরপত্রের এক সেটের মূল্য নির্ধারণ করা হয় ১৫ হাজার টাকা। কিন্তু কোনো রশিদ না দিয়ে গোপনে দশ হাজার টাকায় এক সেট ও পাঁচ হাজার টাকায় অর্ধেক সেট বিক্রি করে ৩ তারিখ সন্ধ্যায় পৌর ভবনে সকল ঠিকাদারদের উপস্থিতিতে লটারি করা হয়। লটারি শেষে পরের দিন ৪ জানুয়ারি ৫% ঊর্ধ্ব দর দেখিয়ে প্রতি গ্রুপে মাত্র তিনটি করে দরপত্র দাখিল দেখানো হয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্য থেকে আরো দেখা যায়, এক নম্বর গ্রুপে দুই হাজার ৮০০ টাকা দরে ১২টি দরপত্র ৩৩ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি দেখানো হয়েছে। দুই নম্বর গ্রুপে দুই হাজার ১০০ টাকা দরে আটটি দরপত্র ১৬ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রয় দেখানো হয়েছে। তিন নম্বর গ্রুপে দুই হাজার ৭০০ টাকা দরে ১৩টি দরপত্র ৩৫ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি দেখানো হয়েছে। চতুর্থ গ্রুপে দুই হাজার ৫০০ টাকা দরে নয়টি দরপত্র ২২ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি দেখানো হয়েছে। পঞ্চম গ্রুপে আড়াই হাজার টাকা দরে দশটি দরপত্র ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি দেখানো হয়েছে। ষষ্ঠ গ্রুপে দুই হাজার ৪০০ টাকা দরে দশটি দরপত্র ২৪ হাজার টাকায় বিক্রি দেখানো হয়েছে। সর্বমোট ছয় গ্রুপে ৬২টি দরপত্র বিক্রয় দেখিয়ে এক লাখ ৫৭ হাজার টাকা কোষাগারে জমা দেখানো হয়েছে। একই সঙ্গে প্রতি গ্রুপে তিনটি করে ছয় গ্রুপে ১৮টি দরপত্র জমা দেখানো হয়েছে।
এ বিষয়ে ঠিকাদারদের কাছে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় ৮৮ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান দরপত্র কেনে। এসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানে মধ্যে থেকে প্রায় ৬০ জন ছয়টি করে দরপত্র গ্রহণ করেছেন। বাকিরা তিনটি করে দরপত্র গ্রহণ করেছেন। সেই হিসেবে প্রায় সাড়ে ৪০০ দরপত্র বিক্রি বাবদ প্রায় ১১ লাখ টাকা জমা হওয়ার কথা। কিন্তু কোষাগারে জমা হয়েছে মাত্র এক লাখ ৫৭ হাজার টাকা। বাকি টাকা কোষাগারে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে।
এদিকে, এসব বিষয়ে পৌর কর্তৃপক্ষের কোনো হাত নেই দাবি করে তারা দোষ চাপাতে চান ঠিকাদারদের ওপর। তবে, ঠিকাদারদের দাবি, তাদের কিছু সুযোগ দিয়ে নিজেরাও কিছু সুযোগ নিচ্ছেন। তারা আরো দাবি করেন, দরপত্র দাখিলে যে ৫% টাকা ঊর্ধ্বদর দেওয়া হয়েছে, সেটি তারা পাবেন না। সেই টাকা ৫% টাকাসহ মোট ৬% টাকা পৌর কর্তৃপক্ষকে আগেই দেওয়া হয়েছে বিল পাশ করানোর জন্য।
সাতক্ষীরা পৌরসভার টেন্ডার কমিটির সদস্য সচিব নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল করিম বলেন, ‘আমরা নিয়ম মেনে সব কিছু করেছি। তবে কম দামে দরপত্র বিক্রির বিষয়ে আমার জানা নাই।’
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা পৌরসভার টেন্ডার বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি এক নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুস সেলিম বলেন, ‘দরপত্রের দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে আমাদের একটু ভুল হয়েছিল। তাই পরে মেয়র সাহেবের সাথে আলোচনা করে দরপত্রের দাম কমিয়ে দেওয়া হয়। কতটি দরপত্র বিক্রি বাবদ কত টাকা জমা দেখানো হয়েছে, সে বিষয়ে আমি না দেখে-শুনে কিছু বলতে পারবো না।’
সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়র মো. তাজকিন আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সরাসরি ছাড়া কোনো বক্তব্য দেবেন না বলে জানান। পরে রোববার দুপুরের পর সরাসরি দেখা করে বক্তব্য দেবেন বলে তিনি সময় নির্ধারণ করেন। এর আগে ১১টা ৫০ মিনিটে ফোন করে আগামী ১৫ থেকে ২০ দিন কোনো বক্তব্য দেবেন না বলে জানিয়ে দেন। এসময় ‘টেন্ডার সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে চাই’ বলা হলে তিনি বলেন, ‘টেন্ডার বিষয়ে একটি কমিটি আছে। আপনি সেখানে কথা বলেন।’