উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি॥
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় প্রায় ১৫ মাস ধরে রজব আলী কাওয়াক ৩০ শয্যা সরকারী হাসপাতাল বেডে আছেন। প্রায় ৮৫ বছর বয়সী রজব আলীকে হাসপাতালের ১৭ নম্বর বেডে রেখে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। এ্যাজমা ও উচ্চ রক্তচাপজনিত রোগের চিকিৎসা তাকে দেওয়া হচ্ছে। তবে দু বেলা পেট পুরে খাবার ও থাকার নিশ্চয়তাতেই তিনি এ হাসপাতালে আছেন বলে জানা যায়। তার নিজের কোন বসতবাড়ী কিংবা থাকার ঘর নেই। এ বয়সে নিজে আয় করে পেটের খাবার ও ঔষধ পত্রাদি জোটানোর সামর্থক নেই বলে জানাগেছে। উল্লাপাড়া পৌর এলাকার পশ্চিমপাড়া মহল্লার বাবর আলীর ছেলে রজব আলী এক সময় স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের দপ্তরী পদে চাকুরী করেছেন। এর পর বেশ কবছর স্থানীয় পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নে কাজ করেন। প্রায় নয় বছর আগে তার স্ত্রী মারা গেছে। তার দু ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে ছেলে দুজন আলাদা সংসার করছেন। এক ছেলে শামছুল হক স্থানীয় পাট বন্দরে শ্রমিক ও ছোট ছেলে নাজিম হোসেন মুরগীর ব্যবসা করেন। এক মাত্র মেয়ে অজেদা খাতুনের বিয়ের পর স্বামীর ঘরে সংসার করছেন। কাওয়াক হাসপাতাল সুত্রে, রজব আলী বিগত ২০১৬ সালের ৫ নভেম্বর এ্যাজমা রোগের চিকিৎসা সেবা পেতে এ হাসপাতালে আসেন। সে সময় তার শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হতে থাকে। সে থেকেই তিনি হাসপাতালের ১৭ নম্বর বেডে আছেন। এর আগে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একাধিকবার তাকে রিলিজ করে দিলেও তিনি হাসপাতাল ছাড়েননি বলে জানা যায়। রজব আলী জানান, তার নিজের বাড়ী ঘর নেই। আর কোথায় গিয়ে থাকবেন। কি খাবেন। ঔষধ জোটাবেন কি ভাবে। এসব ভেবেই এখানে আছেন। তিনি ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। পলাশ ডাঙ্গা যুব শিবিরের পরিচালক আব্দুল লতিফ মির্জা দেওয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদপত্র আছে। তবে তার নাম মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে সরকারী গ্রেজেটে ওঠেনি।
উল্লাপাড়া কাওয়াক হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ ফিরোজ হোসেন তালুক্দার জানান, রজব আলী উচ্চ রক্তচাপ ও এ্যাজমা রোগী। এছাড়া বার্ধক্য জনিত কারণে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা থাকলেও বাড়ীতেই থেকে চিকিৎসা সম্ভব। তবে তার নিজের থাকার জায়গা নেই বলে মানবিক কারণে তাকে থাকতে দেওয়া হচ্ছে।
রজব আলীর ছেলে নাজিম হোসেন বলেন, তাদের আলাদা কোন ঘর নেই যেখানে পিতা থাকবেন। এছাড়া ঘর তোলার জায়গাও নেই। এর পরেও পিতাকে বাড়ীতে আনতে চাইলেও তিনি আসেন না। তবে মাঝে মধ্যে তারা হাসপাতালে গিয়ে পিতাকে দেখে আছেন। তিনি আরো জানান, গত ১৫ ফেরুয়ারী খালিয়াপাড়া গ্রামের মতিয়ার রহমান তার পিতার নামে ৫ শতক পরিমাণ জমি লিখে দিয়েছেন। তবে সেখানে তাদের ঘর করে দেওয়ার মত সামর্থ নেই বলে জানান।
উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আরিফুজ্জামান গত ১৪ ফেরুয়ারী কাওয়াক হাসপাতালে গিয়ে বৃদ্ধ রজব আলীর বিষয়ে জানেন। এসময় তিনি নগদ কিছু অর্থ তাকে দেন বলে জানা যায়। তিনি বলেন রজব আলীর নামে জায়গা থাকলে সরকারী সহায়তায় ঘর নির্মাণ করে দেওয়া যেতে পারে।