রংপুর অফিস॥
দেশের সর্বস্তরে শুদ্ধ বাংলার ব্যবহার নিশ্চিত করার পাশাপাশি প্রতিটি অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষা সংরক্ষণ ও গবেষণার জন্য সরকারকে আরো উদ্যোগি হবার আহবান জানিয়েছে রংপুরের বিভিন্ন প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দসহ সাধারণ মানুষ। গত বুধবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও শহীদ দিবস উপলক্ষ্যে রংপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এসে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও বিএনপিসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা এ আহবান জানান। রাতের প্রথম প্রহরে ১২ টা এক মিনিটে পাবলিক লাইব্রেরী মাঠে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্দ এরশাদ প্রথমে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গা, সাবেক মন্ত্রী ও জাপার কো-চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরসহ রংপুর মহানগর ও জেলা জাতীয় পার্টির নেতৃবৃন্দ। জাপা চেয়ারম্যানের পরে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, বিভাগীয় কমিশনার কাজী হাসান আহম্মেদ, জেলা প্রশাসক মুহম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান, পুলিশের রংপুর রেঞ্জেরে ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুখ বিপিএম, পিপিএম, পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান, জেলা পরিষদ প্রশাসক এ্যাডভোকেট ছাফিয়া খানমসহ সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর পরিষদ, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, আওয়ামী লীগ,বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদ ও বঙ্গবন্ধু স্মৃতি পাঠাগার, জাতীয় পার্টি ও বিএনপি, জাসদ, বাসদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠন, রংপুর রিপোর্টার্স ক্লাব, রংপুর প্রেসক্লাবসহ পেশাজীবী ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন শহীদদের প্রতি বিনম্র জানান। এসময় বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষার্থীরাও শহীদ বেদিতে ফুলেল শ্রদ্ধায় শহীদদের স্মরণ করেন। এদিকে রাতের আধার শেষ হবার সাথে সাথেই ভোর থেকে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন স্থান থেকে শ্রদ্ধা জানাতে আসা মানুষের স্রোত গিয়ে মিশে যায় শহীদ মিনারের পাদদেশে। জেলার বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী ও ছাত্র সংগঠনের শ্রদ্ধা নিবেদনের পাশাপাশি শুরু হয় আলোচনা সভা, শোক র্যালী, বিশেষ প্রার্থনাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান মালার আয়োজন। রংপুর কেন্দ্রেীয় শহীদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পণ শেষে মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা সাংবাদিকদের বলেন, বাংলা ভাষার ব্যবহার সর্বত্র ব্যবহার নিশ্চিত করতে আমাদের যুবসমাজকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। নিজেদের ভাষার ইতিহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধরতে হবে। তিনি বলেন, অচিরেই রংপুর মহানগরীর সকল সাইন বোর্ড বাংলায় লেখার জন্য ব্যবস্থা নেয়া হবে। জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলা ভাষা পৃথিবীর সকল ভাষার চাইলে শ্রেষ্ঠ ভাষা। নিজের ভাষায় কথা বলার জন্য একমাত্র আমরাই রক্ত দেয়া জাতি। আমাদের ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখতে আমাদের সবাইকে এক সাথে এগিয়ে আসতে হবে। দেশের প্রতিটি অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষার সংরক্ষণ ও গবেষণায় উদ্যোগ বাড়াতে হবে। জেলা যুবদলের সভাপতি নাজমুল আলম নাজু বলেন, বাংলা ভাষার ব্যবহার দেশের অফিস-আদালত থেকে শুরু করে ব্যাংক-বীমাসহ সকল সরকারি, আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠানে নিশ্চিত করতে হবে। জাতিসংঘে বাংলাকে ছড়িয়ে দিতে হবে। এদিকে রাতে শহীদ বেদিকে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন শেষে সকালে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শোক র্যালী শেষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপাচার্য প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন। এছাড়া আলোচনা সভায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা কর্মচারীসহ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। এছাড়া আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও শহীদ দিবসে কারমাইকেল কলেজ, রংপুর সরকারি কলেজ, সরকারি বেগম রোকেয়া কলেজসহ নগরীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দিবসটি উপলক্ষ্যে শোক সভা, শিশু-কিশোরদের সাহিত্য-সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা ও পুরষ্কার বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।