• বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১২:৪৯ পূর্বাহ্ন

স্ত্রীর পরকীয়ার জেরে ২৯ মার্চ রাতেই নিজ শয়নকক্ষে পিপি বাবু সোনাকে হত্যা করা হয়: র‌্যাব ডিজি

আপডেটঃ : বুধবার, ৪ এপ্রিল, ২০১৮

রংপুর অফিস॥
র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ বলেছেন, প্রাথমিক তদন্ত মতে স্ত্রীর পরকীয়ার জেরে পাবিরাবির অবিশ্বাস, দ্বন্দ্ব, অশান্তির কারনে রংপুর বিশেষ জজ আদালতের পিপি ও আওয়ামীলীগ নেতা রথীশ চন্দ্র ভৌমিক বাবু সোনাকে গত ২৯ মার্চ রাতেই নিজ শয়ন কক্ষে হত্যা করা হয়। এরপর তার লাশ আলিমিরাতে করে বাড়ি থেকে অর্ধ কিলোমিটার দুরে একটি পরিত্যক্ত বাসার খোলা কক্ষের মাটির নীচে বস্তাবন্দি করে পুতে রাখা হয়। এ ঘটনায় তার স্ত্রী ¯িœগ্ধা সরকার দীপা ভৌমিক, তাজহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের দুই ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গতকাল বুধবার বেলা ১২ টায় র‌্যাব-১৩ এর সদর দপ্তরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি একথা জানান। এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক, পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান, র‌্যাব-১৩ ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর আরমিনসহ পুলিশ ও র‌্যাবের উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
এসময় র‌্যাব মহাপরিচালক বলেন, র‌্যাব-১৩ এর পাশাপাশি ঢাকা থেকে একটি বিশেষজ্ঞ টিম আইনজীবি রথীশ চন্দ্র ভৌমিক নিখোজ হওয়ার বিষয়টি তদন্ত শুরু করে। পরবর্তীতে তার ভাই সুশান্ত ভৌমিক  কোতয়ালী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এরই ধারাহিকতায় র‌্যাবের গোয়েন্দা টিম তথ্য পেয়ে মঙ্গলবার বাবু সোনার স্ত্রী ¯িœগ্ধাকে র‌্যাবের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এসময় তার স্ত্রী ¯িœগ্ধা সরকার দীপা বাবু সোনাকে হত্যাকান্ডের সাথে তার সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে ও মৃতদেহর অবস্থান জানায়। এসময় স্ত্রী ¯িœগ্ধা সরকার দীপা র‌্যাবকে জানায়, পারিবারিক কলহ, পরকীয়া প্রেমে লিপ্ত হয়ে সে তার স্বামীকে হত্যার পরিকল্পনা করে। একাজে তাকে সহযোগিতা করে তার পরকীয়া প্রেমিক কামরুল ইসলাম।
ব্রিফিংয়ে র‌্যাব মহাপরিচালক বলেন, প্রাথমিক তদন্ত ও তার স্ত্রীদের দেয়া স্বীকারোক্তি মতে, দুই মাস আগেই তাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। এরই অংশ হিসেবে ২৬ মার্চ রাতে তাজহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বাবু সোনার স্ত্রীর দীপা ভৌমিকের সহকর্মী ও পরকীয়া প্রেমিক কামরুল ইসলামের নির্দেশে তাজহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র সবুজ ইসলাম ও রোকনুজ্জামান তাজহাট মোল্লাপাড়ায় কামরুলের বড় ভাইয়ের পরিত্যাক্ত বিল্ডিংয়ের খোলা রুমের বালু খুড়ে রাখে। এরপর ২৯ মার্চ বৃহস্পতিবার রাত ১০ টার দিকে স্ত্রী দীপা ভৌমিক ভাত ও দুধের সাথে ১০ টি ঘুমের বড়ি খাওয়ান বাবু সোনাকে। এরপর বাড়ির পেছন দরজা দিয়ে প্রবেশ শয়ন কক্ষে প্রবেশ করায় প্রেমিক কামরুল ইসলামকে। এক পর্যায়ে বাবু সোনা অচেন হয়ে পড়লে  স্ত্রী দীপা ভৌমিক ও পরকীয়াা প্রেমিক কামরুল মিলে বাবু সোনার গলায় ওড়না পেচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে শয়নকক্ষেরর আলমিরাতে লাশ রেখে দেয়। পরের দিন ৩০ মার্চ শুক্রবার সকাল ৫ টায় শয়ন কক্ষ থেকে বের হয়ে যায় কামরুল। সকাল ৯ টায় কামরুল মাস্টার লাশ গুম করার জন্য একটি ভ্যান নিয়ে আসে এবং আলমিরা ঠিক করার কথা বলে ভ্যানে করে আলমিরাতে থাকা লাশ নিয়ে আগে থেকে মাটি খুড়ে রাখা সেই বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে গিয়ে বেলা ১১ টার মধ্যে আলমিরা থেকে লাশ নামিয়ে বস্তাতে ভরে পুতে রাখে। বাড়ি থেকে আলমারি বহন করে ভ্যানে তোলার জন্য তিনজন লোকও ঠিক করে ওই কামরুল মাস্টার। স্ত্রীর দেখিয়ে দেয়া মুত দেহের অবস্থান মতে মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টার দিকে রংপুর নগরীর তাজহাট মোল্লাপাড়ায় কামরুল মাস্টারের বড় ভাইয়ের পরিত্যাক্ত বাড়ির খোলা রুমের মাটির নিচ খুরে বাবু সোনার লাশ উদ্ধার করে  র‌্যাব । পরে লাশটি রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
র‌্যাব মহা পরিচালক জানান, আমরা তার স্ত্রী এবং দুই ছাত্রকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করেছি। কি ধরনের ওষুধ খাওয়ানো হয়েছে তা মেডিক্যাল পরীক্ষার মাধ্যমে পরে জানা যাবে। আমরা আশাকরি এ ঘটনার সাথে জড়িতের আইনের আওতায় নিয়ে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।
এর আগে র‌্যাবের মহাপরিচালক হেলিকপ্টার যোগে রংপুরে আসেন। পরে তিনি লাশ উদ্ধার হওয়ার স্থান এবং বাবু সোনার বাড়ি পরিদর্শন শেষে র‌্যাব-১৩ সদর দপ্তরে যান। প্রসঙ্গত: রংপুরের কাউনিয়ায় জাপানি নাগরিক হোসিও কোনি এবং মাজারের খাদেম রহমত আলী হত্যা মামলার সরকার পক্ষের প্রধান কুশলী রংপুর বিশেষ জজ আদালতের বিশেষ এ্যাডভোকোটে রথীশ চন্দ্র ভৌমিক বাবু সোনা গত ৩০ মার্চ নিখোজ হয়েছেন মর্মে বেলা ৩ টার দিকে প্রথমে তার স্ত্রী দেবর সাংবাদিক সুশান্ত ভৌমিককে জানান। এসময় তিনি ঢাকায় ছিলেন। ঢাকা থেকেই তিনি বিষয়টি রাত ১১ টায় পুলিশ সুপারকে জানান। এরপর থেকে তার সন্ধানে রংপুরে বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ আন্দোলনে নামে।  এ্যডভোকেট রশিথ চন্দ্র ভৌমিক বাবু সোনা রংপুর জেলা আওয়ামীলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক, জেলা পুজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি, রংপুর আইনজীবী সমিতির সাবেক কোষাধ্যক্ষ ছাড়াও তাজহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের গভর্নিং বডির সভাপতি, সম্মিলিক সাংস্কৃতিক জোট, সুজন, দুর্নীতি বিরোধী প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের সভাপতিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপুর্ন দায়িত্ব পালন করছিলেন। এছাড়া তিনি জামায়াত ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার সাক্ষী। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল আজহারলকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন। মামলাটির এখন আপিল শুনানি চলছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ