শুক্রবার রাতে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ জানিয়েছেন, কারাবন্দী দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গত ৫ জুন (মঙ্গলবার) কারাগারে মাথা ঘুরে পড়ে যান। তার দুটো পা ফুলে আছে এবং তিনি তার শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করতে পারছেন না। তিনি তিন সপ্তাহ যাবৎ প্রচণ্ড জ্বরে ভুগছেন যা কোনভাবেই থামছে না। তার শারিরীক অবস্থা চরম আশংকাজনক। এখনই বিশেষায়িত এমআরআই, সিটি স্ক্যান, ইকো কার্ডিওগ্রাফি, ইসিজি, বিএমডিসহ জরুরি পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং একটি চিকিৎসক দলের তত্ত্বাবধানে জরুরি চিকিৎসার বন্দোবস্ত করতে জোরালোভাবে সরকারের কাছে দাবি জানান রুহুল কবির রিজভী।
শুক্রবার বিকালে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে কারাগারে তার ভাই শামীম ইস্কানদারসহ পরিবারের ৫ সদস্য দেখা করে এসে তার সর্বশেষ শারিরীক অবস্থা সম্পর্কে দলের নেতাদের অবহিত করেন। পরে রাতে রিজভী দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জরুরী সংবাদ সম্মেলনে পরিবারের সদস্যদের উদ্বৃতি দিয়ে বলেন, আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি- বেগম জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে আমি যে কথাগুলি বললাম তা সম্পূর্ণরুপে সত্য। তার অসুস্থতা নিয়ে ইতোপূর্বেও যে কথাগুলো বলা হয়েছে তা নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ হলে তার স্বাস্থ্যের এতটা অবনতি হতো না।
রিজভী আহমেদ বলেন, খালেদা জিয়ার নিকটাত্মীয়রা ঢাকা পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে তার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য গিয়েছিলেন। সাক্ষাৎ শেষে তারা বেগম জিয়ার সম্পর্কে যে বর্ণনা দেন তা শুধু মর্মস্পর্শীই নয়, হৃদয়বিদারক। সরকারের জিঘাংসার কষাঘাতের তীব্রতা যে কত ভয়াবহ, সেটি বোঝা যাবে শুধুমাত্র বেগম জিয়ার প্রতি অমানবিক আচরণের মাত্রা দেখলেই। নিকটাত্মীয়রা বলেছেন, গত ৫ জুন বেগম খালেদা জিয়া দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলেন।
রিজভী জানান, খালেদা জিয়া গত তিন সপ্তাহ যাবৎ ভীষণ জ্বরে ভুগছেন, যা কোনোক্রমেই থামছে না। চিকিৎসা বিদ্যায় যেটিকে বলা হয় টিআইএ (ট্রানজিয়েন্ট স্কিমিক অ্যাটাক)। দেশনেত্রীর দুটো পা-ই এখনও ফুলে আছে এবং তিনি তার শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করতে পারছেন না।
রিজভী বলেন, সরকারের ইচ্ছাকৃত অবহেলা ও উদাসীনতার কারণে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। তার প্রয়োজনীয় যে চিকিৎসাগুলোর জন্য বারবার দাবি করা হয়েছিল, যেমন— বিশেষায়িত এমআরআই, সিটি স্ক্যান, ইকো কার্ডিওগ্রাফি, ইসিজি, বিএমডিসহ জরুরি পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং একটি চিকিৎসক দলের তত্ত্বাবধানে জরুরি চিকিৎসার বন্দোবস্ত করা। কিন্তু দলের নেতাদের দাবি এবং চিকিৎসকদের পরামর্শ ক্রমাগত উপেক্ষাই করে চলেছে সরকার।
রিজভী আহমেদ জানান, গত ২১ মে বিএনপি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব আব্দুস সাত্তার স্বরাষ্ট্র সচিব বরাবরে আবেদন করেছিলেন— খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চারজন চিকিৎসককে দিয়ে কারাগারে দেশনেত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোর জন্য। কিন্তু এ বিষয়ে বারবার তাগিদ দেওয়া হলেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোনও সাড়া দেয়নি।এতে মনে হয় সরকার এবং সরকার প্রভাবিত প্রশাসনযন্ত্র তাকে নিয়ে কোনও গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।
রিজভী বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে সরকারের প্রতিহিংসার পাখা সবসময় যেন ঝটপট করছে। বারবার অসুস্থতা নিয়ে সুচিকিৎসার জন্য ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা, দলের নেতারা, দেশের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ সোচ্চার থাকলেও সরকার এক অশুভ উদ্দেশ্যে তা অগ্রাহ্য করছে।
তিনি আরও বলেন, সরকার এক অশুভ উদ্দেশ্য নিয়েই তার সুচিকিৎসায় বাধা দিচ্ছে। সরকারের অভিপ্রায় নিয়ে জনগণের মধ্যে প্রবল সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে যে, আসলে দেশনেত্রীকে নিয়ে সরকার কী করতে চায়।
তিনি বলেন, এই সরকার মর্যাদা, সহানুভূতি, অন্যের প্রতি সম্মান ও অনুশোচনা হারিয়ে ফেলেছে। চরম মিথ্যাচার যাদের রাজনীতি ও রাষ্ট্রনীতির এজেন্ডা, একজন সম্মানিত জনপ্রিয় নেত্রীকে-তো কষ্ট দেওয়া ছাড়া, ভালো কিছু করার শিক্ষা ওদের নেই।’ নির্বিচারে শক্তি প্রয়োগ করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমনে সব ব্যবস্থাই তারা করতে পারে।
তিনি আরো বলেন, নির্বিচারে শক্তি প্রয়োগ করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমনে সব ব্যবস্থাই তারা করতে পারে। বেগম খালেদা জিয়াকে সুচিকিৎসা না দিয়ে নিপীড়ণের যে নতুন অস্ত্র ব্যবহার করে মানবাধিকারের ব্যাপক লঙ্ঘনের ধিক্কার জানাই। অবিলম্বে সুচিকিৎসা এবং তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের দিয়ে চিকিৎসা করানোর জোর দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় সরকারের সকল অমানবিক অবিচারের জন্য দায়ী থাকতে হবে।
রবিবার সারাদেশে কর্মসূচি:
এদিকে বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার দাবিতে ১ দিনের বিক্ষোভ কর্মসূচী দিয়েছে বিএনপি। কর্মসূচী মোতাবেক আগামীকাল রবিবার সারাদেশে জেলা ও মহানগরে এবং ঢাকা মহানগরীর থানায় থানায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হবে। বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীকে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালনের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।