• মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০১:৩৬ অপরাহ্ন

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আলাদাভাবে নজর কাড়তে পারেন যারা

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : বৃহস্পতিবার, ৩০ মে, ২০২৪
ছবি : সংগৃহীত

দোরগোড়ায় আরো একটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। নানা কারণেই বিশেষ এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আয়োজন করছে আমেরিকা ও ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশগুলো। গ্রুপ পর্বের বেশ কয়েকটি বড় ম্যাচের আয়োজক যুক্তরাষ্ট্র, যেখানকার উইকেট, কন্ডিশন অধিকাংশ দলের কাছে অচেনা।

২ জুন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের এই বিশ্ব আসর।

দলগুলো তাদের সম্ভাব্য সেরা তারকাদের নিয়েই উপস্থিত হয়েছে আমেরিকায়।

এবারের আসরের বড় তারকা হিসেবে বিশেষভাবে জ্বলজ্বল করবে ভারতের সাবেক অধিনায়ক বিরাট কোহলির নাম। বলা হচ্ছে- এই ক্রিকেটারের সর্বশেষ বিশ্বকাপ হতে পারে এটিই। ফলে তাকে ঘিরে সমর্থকদের আলাদা উচ্ছ্বাস থাকবে।

বিরাট কোহলি শেষবারে দান মারবেন?
কোহলি ক্রিকেটার হিসেবে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ায় লিগের শিরোপা ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ছাড়া সবই জিতেছেন প্রায়।

ক্যারিয়ারের শুরুতে ওয়ানডে বিশ্বকাপ, ২০১৩ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলেছেন। ২০১৪ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেছেন কিন্তু শিরোপা হাতে আসেনি।

২০১৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হেরে বিদায় নিয়েছিল ভারত।

২০২১ সালে বিরাট কোহলির নেতৃত্বে ভারত তাদের ইতিহাসে সবচেয়ে বাজে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলেছে।

২০২২ সালে সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১০ উইকেটের শোচনীয় পরাজয় বরণ করেছে ভারত।

২০০৭ সালের বিশ্বকাপজয়ী দলটি থেকে বর্তমান আসরে আছেন শুধুমাত্র রোহিত শর্মা।

কোহলির জন্য ২০২৩ ও ২০২৪ সাল একই সুতোয় গাঁথা হয়ে আছে, পরপর দুই বছর দুটি টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রহ করেছেন তিনি।

এর মধ্যে ২০২৩ বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় তো হয়েছেনই, হয়েছেন আইপিএলে সর্বোচ্চ রানের মালিক।

তবে দুইবারই তার দল ভারত ও রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর শিরোপা হাতছাড়া করেছে।

গত বছর কোহলি ওয়ানডে বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম ব্যাটার হিসেবে ৭০০ রান অতিক্রম করেন এক টুর্নামেন্টে, আইপিএলেও ৭০০-এর ওপর রান তোলেন তিনি।

কিন্তু শিরোপাটা এখনো অধরা, এটা পেতে চাইবেন এবার কোহলি।

কোহলি ছাড়া ভারতের হার্দিক পান্ডিয়ার দিকে থাকবে নজর, নানা বিতর্কে জড়িয়ে এই অলরাউন্ডার হারিয়েছেন ফর্ম, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মঞ্চে ভুলে যেতে চাইবেন তিনি আইপিএল ক্যারিয়ারের সবচেয়ে খারাপ মৌসুম।

রিশভ পান্ত ভয়াবহ দুর্ঘটনা কাটিয়ে ফিরছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের মারকাটারি ব্যাটিংয়ের মাঝে সবশেষ আইপিএলে সাড়ে ছয় ইকোনমি রেটে বল করা জাসপ্রিত বুমরার দিকেও থাকবে আলাদা নজর।

শাহিন শাহ আফ্রিদি নিউইয়র্ক রাঙাতে পারবেন?
নিউইয়র্কে ৯ জুন ভারত পাকিস্তান ম্যাচ, আর ২০২১ সাল থেকেই ভারত পাকিস্তান ম্যাচের একটা বড় আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে ভারতের টপঅর্ডারের বিপক্ষে শাহিন শাহ আফ্রিদির বোলিং।

শাহিনের প্রথম স্পেলের মাঝেই যেন ম্যাচের গতিপথ নির্ধারিত হয়ে যায়, ২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ৬ রানের মাথায় লোকেশ রাহুল ও রোহিত শর্মাকে প্যাভিলিয়নে ফেরান এই বাহাতি ফাস্ট বোলার।

২০ গড় এবং ৮-এর কম ইকোনমি রেটে ৯১টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি উইকেট নিয়েছেন শাহিন।

অভিষেকের পর থেকেই শাহিন শাহ আফ্রিদি পাকিস্তান দলের মূল ক্রিকেটারদের একজন হিসেবে খেলছেন, কায়েদ-ই আজম ট্রফিতে প্রথম ম্যাচেই ৮ উইকেট নিয়ে বাজিমাত করে সরাসরি জাতীয় দলে ঢুকেছিলেন তিনি।

যদিও শাহিনের সাথে তারই দেশের কিংবদন্তি ওয়াসিম আকরামের তুলনা বারবারই আসে কিন্তু বিশ্লেষকরা মনে করেন- সমসাময়িক অস্ট্রেলিয়ান ফাস্ট বোলার মিচেল স্টার্কের সাথেই তার বেশি সাদৃশ্য, দুজনই লম্বা গড়নের এবং একইরকম স্কিলসেট দুজনের।

মাত্র ২৪ বছর বয়সেই শাহিন নিজেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বড় নাম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

পরপর দুটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল ও ফাইনাল খেলেছেন, তবে এই দুটি ম্যাচ তিনি ভুলে যেতে চাইবেন, ২০২১ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেমিফাইনালে অনেকটা তার ওভারেই পাকিস্তানের হার নিশ্চিত হয়, ২০২২ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ফাইনালে শাহিন মাঠেই চোট পান।

শাহিন ছাড়াও পাকিস্তান দলে নজর থাকবে মোহাম্মদ আমির ও ইমাদ ওয়াসিমের দিকে, দুজনই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অবসর ভেঙে জাতীয় দলে ফিরেছেন টি-২০ বিশ্বকাপে খেলতে। এছাড়া আছেন সময়ের অন্যতম সেরা ব্যাটার বাবর আজম।

ওয়ানিন্দু হাসারাঙা নিজের পরিসংখ্যানের মান রাখতে পারবেন?
ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা এখন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের শীর্ষ অলরাউন্ডার হিসেবে নাম লিখিয়েছেন।

হাসারাঙ্গা সাদা বলের ক্রিকেটে শ্রীলঙ্কার জন্য একজন গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার হয়ে উঠেছেন খুব অল্প সময়ে।

এই লেগস্পিনার টি-২০ ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত ওভারপ্রতি ৭-র নিচে রান দিচ্ছেন। শ্রীলঙ্কার সফলতা অনেকটাই নির্ভর করবে বিশ্বকাপে হাসারাঙ্গার কার্যকারিতার ওপর।

হাসারাঙ্গার ব্যাটিং গড় টি-২০ আন্তর্জাতিকে মাত্র ১৫, স্ট্রাইক রেটও ঠিক লোয়ার অর্ডারের সাথে মানানসই না, ১৩০-এর মতো।

কিন্তু তিনি কার্যকর ইনিংস খেলতে সক্ষম, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৩২ বলে ৬৭ ও ৯ বলে ২২ রানের দুটি ইনিংস খেলেন তিনি।

তবে ব্যাটার হাসারাঙ্গার চেয়ে বোলার হাসারাঙ্গার প্রতিই বেশি আস্থা রাখবে শ্রীলঙ্কা।

২০২২ সালের টি-২০ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ১৫ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি।

হাসারাঙ্গা ছাড়া শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট দলে বিশেষ নজর থাকবে মাথিসা পাথিরানার দিকে, শারীরিক কোনো সমস্যা না থাকলে তিনি শ্রীলঙ্কার ফাস্ট বোলিং লাইনআপের নেতৃত্ব দেবেন।

রাশিদ খান আফগানিস্তানের মূল ভরসা
আফগানিস্তানের প্রথম বৈশ্বিক সুপারস্টার রাশিদ খান। ক্রিকেটের ক্ষুদ্র সংস্করণে তিনি এতোটাই প্রভাব রেখেছেন যে অস্ট্রেলিয়ার ফ্র্যাঞ্চাইজি বিগ ব্যাশে তিনি সর্বকালের সেরা টি-২০ ক্রিকেটারের খেতাব পেয়েছেন, ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে মাঝেমধ্যে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।

রাশিদ ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলতে পছন্দ করেন। ৮৫টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে ১৩৮ উইকেট নিয়েছেন তিনি।

আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে রশিদ ওভার প্রতি ৬ রান করে দেন, ফ্র্যাঞ্চাইজিতে সাড়ে ৬-র নিচে।

রাশিদের লেগস্পিন জোরের ওপর কাজ করে, গতিময় লেগস্পিন ও গুগলির জন্য ব্যাটারদের মনে ত্রাস সৃষ্টি করতে পারেন তিনি।

রাশিদ খান একইসাথে কার্যকর ব্যাটার হিসেবেও ভূমিকা পালন করতে পারেন, ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে মাথা ঠান্ডা রেখে রান বের করতে সক্ষম তিনি।

রাশিদ খান এবং আরো বেশ কয়েকজন আফগানিস্তানের ক্রিকেটার ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলো মাতালেও এখন পর্যন্ত আইসিসি টুর্নামেন্টে আশানুরূপ পারফর্ম করতে পারেনি দলটি।

এবার রাশিদ সেটায় বদল আনতে চাইবেন।

অধিনায়ক রাশিদ খান ছাড়া মোহাম্মদ নবী, ফজল হক ফারুকী, রহমানুল্লাহ গুরবাজের দিকে নজর থাকবে এই টুর্নামেন্টে।

জস বাটলার সময়ের সেরা সাদা বলের ব্যাটার?
তর্কযোগ্যভাবেই অনেকে মনে করেন জস বাটলার সময়ের সেরা সাদা বলের ব্যাটার, ইংল্যান্ডের এতো ভালো টি-টোয়েন্টি ব্যাটার এর আগে আসেনি কখনো।

বাটলার এখন টি-২০ ক্রিকেটের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দলের অধিনায়ক।

২০১৬ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে নিজের টি-২০ ব্যাটিংয়ের ঝলক দেখান বাটলার, এখন বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত এই ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের অন্যতম সেরা ব্যাটার বাটলার।

আন্তর্জাতিক টি-২০ ক্রিকেটে জস বাটলার ৩০০০+ রানের মালিকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করেছেন- ১৪৫.০০।।

সবশেষ চারটি আন্তর্জাতিক ইনিংসে বাটলার ৩টি ফিফটি করেছেন, ৩টিতেই দেড় শ’ স্ট্রাইক রেটের ওপর ব্যাট করেছেন তিনি।

২০২২ সালের টি-২০ বিশ্বকাপে ১৪৪ স্ট্রাইক রেটে ৬ ম্যাচে ২২৫ রান তুলেছেন বাটলার ।

বাটলার ছাড়া ইংল্যান্ড দলে নজরে থাকবেন ইনজুরি কাটিয়ে ফেরা জফ্রা আর্চার।

আন্দ্রে রাসেল টি-২০-এর পাওয়ারহাউজ
টি-২০ ক্রিকেট ও আন্দ্রে রাসেল যেন সমার্থক হয়ে আছেন গত এক দশক ধরে। আন্দ্রে রাসেল প্রতিদিন ভালো খেলেন না, কিন্তু যেদিন খেলেন প্রতিপক্ষ ও দর্শকেরা মনে রাখে ভিন্ন ভিন্ন কারণে, ভিন্ন ভিন্ন উপলক্ষে।

আন্তর্জাতিক টি-২০ ক্যারিয়ারে রাসেল মাত্র ৩টি ফিফটি করেছেন, কিন্তু ২০১৬ সালের টি-২০ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ভারতের বিপক্ষে করা ২০ বলে ৪৩ রানের ইনিংস দিয়ে তিনি এই আসরের হাইলাইটসে থেকে যাবেন বহুদিন।

রাসেল মূলত একজন ইউটিলিটি ক্রিকেটার, ব্যাট হাতে ঝড়ো ইনিংস খেলতে পারেন, একইসাথে বল হাতে কার্যকরী।

সম্প্রতি ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে কলকাতা নাইট রাইডার্স ১০ বছর পরে শিরোপা জিতল, এখানে বড় ভূমিকা পালন করেছেন রাসেল।

বল হাতে নিয়েছেন ১৯ উইকেট, ব্যাট হাতে ১৮৫ স্ট্রাইক রেটে ২২২ রান তুলেছেন রাসেল।

মিচেল স্টার্ক বিশ্বের সেরা সাদা বলের বোলার?
মিচেল স্টার্কের ওয়ানডে বিশ্বকাপে শ্রেষ্ঠত্ব অবিসংবাদিত, দুটি বিশ্বকাপ জিতেছেন তিনি। তবে সমালোচকদের অনেকে মনে করেন স্টার্ক টি-২০ ক্রিকেটে ততটা কার্যকর নন যতটা তিনি ওয়ানডেতে।

এবারে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে এই তত্ত্বও ভুল প্রমাণ করেছেন স্টার্ক।

কলকাতার হয়ে কোয়ালিফায়ার ও ফাইনালে ৫ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরার পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।

অস্ট্রেলিয়ার পুরুষ টি-২০ দলে ২ বছর আগে জায়গা হারিয়েছিলেন স্টার্ক, ২০২২ সালের টি-২০ বিশ্বকাপের পর মাত্র দুটি টি-২০ ম্যাচ খেলেছেন তিনি অস্ট্রেলিয়ার হয়ে।

এবার তিনি অস্ট্রেলিয়ার জার্সি গায়েও টি-২০ ফরম্যাটে জ্বলে উঠতে চাইবেন।

অস্ট্রেলিয়ার প্যাট কামিন্স থাকবেন আগ্রহের কেন্দ্রে, প্রতিটা আইসিসি টুর্নামেন্টের মতোই এবারো অস্ট্রেলিয়া ফেভারিট হিসেবেই থাকবে।

অন্যদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার দিকেও থাকবে আলাদা আকর্ষণ, হেনরিখ ক্লাসেন, এইডেন মারক্রাম, মার্কো ইয়ানসেনরা আছেন, দক্ষিণ আফ্রিকার আইসিসি টুর্নামেন্টের ব্যর্থতার ইতিহাস যদি এক পাশে রাখা হয় তবে এই দলটা এবার শিরোপা নিলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

নিউজিল্যান্ড ২০২১ সালের রানারআপ, এই দলটার নেতৃত্বে আছেন কেইন উইলয়ামসন। সূত্র : বিবিসি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ