বিগত ১৫ বছর যাবত স্বৈরাচারী সরকার জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। গণরোষে বিতাড়িত সরকার আলেম-ওলামা ও ইসলামী চিন্তাবিদদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালিয়েছে। দেশেকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দিয়েছে। দুর্নীতি, ব্যাংক লুটপাট, বিদেশে অর্থ পাচারের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি বিধ্বস্ত দেশে পরিণত করেছে। বিচার বিভাগ ও প্রশাসনকে দলীয়করণ করে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার অপচেষ্টা চালিয়েছে।
পিরোজপুর সদর উপজেলার শিকদার মল্লিক ইউনিয়ন আমীর আব্দুর রবের সভাপতিত্বে ও ইউনিয়ন সেক্রেটারী কাজী জালালের সঞ্চালনায় গতকাল জুজখোলা হাইস্কুল মাঠে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী পিরোজপুর জেলা শাখা কর্তৃক আয়োজিত স্থানীয় জনগণের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান বক্তার বক্তব্যে পিরোজপুরের জিয়ানগর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান, পিরোজপুর-১ আসনে জামায়াত মনোনীত প্রার্থী মাসুদ সাঈদী উপরোক্ত কথা বলেন।
মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী পিরোজপুর জেলা শাখার আমীর বীর মুক্তিযোদ্ধা তাফাজ্জল হোসেন ফরিদ। আরও উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা আমীর মাওলানা সিদ্দিকুর রহমান, জেলা ওলামা বিভাগ আমীর মাওলানা আব্দুল হালিম, পৌর আমীর আব্দুর রাজ্জাক, জেলা টিম সদস্য ড. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, ইসলামী ছাত্রশিবিরের পিরোজপুর জেলা সেক্রেটারী মো. ইমরান হোসেন প্রমুখ।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে মাসুদ সাঈদী বলেন, স্বৈরাচার শেখ হাসিনা তার ১৫ বছরের শাসনামলে ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার জন্য হাজার হাজার মিথ্যা মামলা দিয়ে জামায়াতসহ বিরোধীদলের লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মীকে কারাগারে আটকিয়ে রেখে হয়রানি করেছে। অসংখ্য মানুষকে গুম করেছে, যার প্রকৃত সংখ্যা জাতির কাছে অজানা। ক্রসফায়ারের নাটক সাজিয়ে আমাদের কর্মীদেরকে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের প্রত্যেকটা রাত প্রত্যেকটা দিন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় নিমজ্জিত ছিল। আমাদের কেন্দ্রীয় অফিসসহ মহানগরী/জেলা এমনকি তৃণমূলের সকল অফিস বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। অফিসের সবকিছু লুণ্ঠন করা হয়েছে। কোনো জায়গায় আমাদের সামান্য স্পেস দেয়া হয়নি। আমাদের ওপর নিষ্ঠুর আচরণ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের নেতৃবৃন্দের মধ্য থেকে এগারো জন নেতৃবৃন্দকে অন্যায়ভাবে আমাদের মাঝ থেকে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। পাঁচজনকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে সাজানো মামলায় মৃত্যুদণ্ড দিয়ে ফাঁসির মঞ্চে হত্যা করা হয়েছে। পাঁচজন ইন্তেকাল করেছেন জেলের মধ্যে। আমাদের নেতৃবৃন্দের মধ্যে একজন, যিনি কোরআনের পাখি আল্লামা সাঈদী, তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে সুস্থ করার পরিবর্তে তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আব্বার জানাজায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হামলা চালিয়েছে। যাদেরকে সরকার অবৈধভাবে ফাঁসি দিয়েছে তাদের একজনের জানাজাও শান্তিমত করতে দেয়নি। শহীদ নেতৃবৃন্দের বাসা-বাড়িতে হামলা করা হয়েছে। পরিবারের সদস্যদের গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। এই ভীতিকর পরিস্থিতে অনেকে নিজের বাড়িতে অবস্থান করতে পারেনি। শহীদ পরিবারের কোনো কোনো সদস্যকে গুম করা হয়েছে। যে রাতে আব্বাকে হত্যা করে হয়েছিল সে রাতে পিজি হাসপাতালে নিরীহ সাঈদী ভক্তদের উপর রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ার শেল ছুড়েছিল পুলিশ, লাঠিচার্জ করেছিল পুলিশ অথচ রাত শেষে জঘন্য ঐ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে বিষ্ফোরক আইনে মামলা করেছিল আমার বিরুদ্ধে। বাবা হত্যা করা হয়েছে আমার, আর আমিই হয়েছিলাম আসামি! এমনই ছিলো খুনি হাসিনার বর্বরতা। শুধুমাত্র ইসলামী আন্দোলন করার কারণেই আমাদের উপর জুলুম করা হয়েছে।
মাসুদ সাঈদী বলেন, বিগত সরকার ক্ষমতার লোভে জেদের বশবর্তী হয়ে সুস্পষ্ট গণহত্যা চালিয়েছে। সরকার শুধু স্থলভাগেই নয়, আকাশ থেকেও গুলি চালিয়ে নিজ দেশের নাগরিকদের হত্যা করেছে। স্বাধীন দেশে পরিচালিত এই গণহত্যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা বর্তমান সরকারের কাছে দাবি জানাই, গণহত্যার দায়ে অনতিবিলম্বে খুনি হাসিনাকে ভারত থেকে দেশে ফিরিয়ে এনে তাকে ও তার দোসদের গ্রেফতার করে সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনতে হবে।