বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেছেন, সবুজ অর্থায়নে আমাদের অর্জন প্রশংসনীয় হলেও এখনো আমাদের অনেক পথ পাড়ি দেয়া বাকি। বুধবার রাজধানীর সবুজ অর্থায়ন বিষয়ক একটি সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এই সেমিনারটি যৌথভাবে আয়োজন করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এবং ডিএফআইডি’র ইকোনমিক ডায়ালগ অন গ্রিন গ্রোথ (ইডিজিজি) কর্মসূচি। ড. আতিউর বলেন, ‘টেকসই উন্নয়নের ধারণা আসার সাথে সাথে আর্থিক খাতের সঙ্গে ভোক্তার প্রথাগত সম্পর্কের ধরনেও ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। বাংলাদেশ অত্যন্ত দক্ষতার সাথে এবং কার্যকরভাবেই এই পরিবর্তনের সাথে তাল মেলাতে পেরেছে। সরকারের সহায়তায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সুবিচেনাভিত্তিক উদ্যোগের ফলে সারা বিশ্বে আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উন্নয়নমুখী ভূমিকার দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পেরেছি, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি এবং সবুজ অর্থায়নের প্রসার ঘটাতে পেরেছি।’
এক্ষেত্রে এখনও অনেক উন্নতি করার সুযোগ রয়েছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বাংলাদেশে ব্যাংকের গৃহীত উদ্যোগগুলো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক প্রশংসিত হলেও এটা মনে রাখতে হবে যে এখনো সবুজ অর্থায়নের ক্ষেত্রে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- কম চাহিদা, প্রয়োজনীয় দক্ষতার অভাব, বেশি ঝুঁকি, বেশি ব্যয় ইত্যাদি। বাংলাদেশের পুঁজিবাজারও সবুজ অর্থায়নে সহযোগিতা করার পর্যায়ে এখনও পৌঁছায়নি।’
বাংলাদেশে সবুজ অর্থায়নের বিকাশ ঘটানোর জন্য প্রয়োজনীয় নতুন কৌশল নিয়েও ড. আতিউর আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন যে, মসলা চাষী কিংবা গাভী পালনকারীদের জন্য যেমন সুদে ভর্তুকি সহ ঋণের সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছিলো, সেই একই প্রক্রিয়ায় পরিবেশবান্ধব উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ সুবিধার ঋণের কথা ভাবতে পারে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কর্পোরেট সোশ্যাল রিসপনসেবিলিটি (সিএসআর) এর মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব উদ্যোগকে উৎসাহীককরণ প্রসঙ্গে ড. আতিউর বলেন যে, এখন মোট সিএসআর ব্যয়ের ১০ শতাংশ পরিবেশবান্ধব উদ্যোগে যাচ্ছে, এই অনুপাত বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা যেতে পারে। এতে করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়ের উদ্যোক্তারা এ বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠবেন। এর পাশাপাশি যেসব বাড়িতে নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে সেখান থেকে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে ব্যবহারের জন্য কিনে নেয়ার ব্যবস্থার (এটি নেট মিটারিং হিসেবে পরিচিত) ওপর বিশেষ জোর দিয়েছেন ড. আতিউর। তিনি মনে করেন যে, এর ফলে আরও বেশি মানুষ বাড়িতে নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার করতে উৎসাহিত হবে।
সেমিনারে ইআরডি’র ইউএন উইং এর অতিরিক্ত সচিব জালাল আহমেদ সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। উপস্থিত ছিলেন ডিএফআইডির সিনিয়র ইকোনমিক এডভাইজার পিটার ডি সৌজা, এএসআই-এর কান্ট্রি ম্যানেজার শুভজিৎ চট্টোপাধ্যায় এবং ইডিজিজি কর্মসূচির লিড কনসালটেন্ট আরাস্তু খান। কর্মসূচির রিসার্চ এডভাইজার বুশরা ফেরদৌস সবুজ অর্থায়নের ওপর নিবন্ধ উপস্থাপন করেন এবং ইআরডি-এর সচিব কাজি শফিকুল আজম সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন।