দেশ পরিচালনার জন্য অবশ্যই বিসিএস ক্যাডার দরকার আছে তাই বলে সবাইকে বিসিএস ক্যাডারে আসতে হবে কেন? যে ছেলে বা মেয়ে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় পড়েছে সে প্রকৌশলী হবে। যে মেডিক্যাল সায়েন্সে পড়ছে সে ডাক্তার হবে। এটাই তো স্বাভাবিক। তাকে কেন পররাষ্ট্র ক্যাডারভুক্ত হতে হবে? কিংবা পুলিশ ক্যাডার? দুই একজনের স্বপ্ন থাকতেই পারে। সেটা ভিন্ন কথা। কিন্তু সবাইকে কেন বিসিএস প্রশাসন, পুলিশ, পররাষ্ট্র প্রভৃতি ক্যাডার হওয়ার জন্য এর পিছু ছুটতে হবে? যে ছেলেটা ফার্মেসিতে পড়ছে সে হবে ফার্মাসিষ্ট। কেননা, সে পড়ছে ওষুধ বিজ্ঞান নিয়ে আর সে এ বিষয়ে অন্যদের থেকে নিঃসন্দেহে ভালো বুঝবে। কিংবা এ বিষয়ে সে গবেষণা করে ভালো ফল করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে সে দেশের জন্য অবদান রাখতে পারবে। কিন্তু তা না করে সবাই বিসিএস দিচ্ছে। সরকার যেখানে বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কোটি কোটি টাকা ইনভেস্ট করছে, এসব কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, কৃষিবিদ, ফার্মাসিস্ট প্রভৃতি বের হবে এবং তারা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে কিন্তু বাস্তবে তার ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে। শিক্ষার্থী ভাই ও বোনেরা কি একবার ভেবে দেখেছেন এদেশের খেটে খাওয়া মানুষের কষ্টার্জিত টাকা আয়ে আমি, আপনি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছি। আর সরকারও আশায় বুক বেঁধে আছে আমাদের দ্বারা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। কিন্তু আমরা যদি বিপরীতটা করি তাহলে কি সরকারের করের টাকা ফাঁকি দেওয়া হলো না?
আজকাল বিভিন্ন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কেও বলতে শোনা যায় বাবারা তোমরা প্রথম বা দ্বিতীয় বর্ষ থেকেই বিসিএস পড়তে শুরু করো। কেননা, দেশে চাকরির বাজারে মহামন্দা চলছে। যা একেবারেই অনুচিত বরং শিক্ষকদেরকে বলা উচিত হবে বাবারা তোমরা উদ্যোক্তা হও। চাকরি করো না বরং আরো অনেককে চাকরি দাও। শুধু সরকারকে কিংবা সিস্টেমকে দোষারোপ না করে নিজেরা কর্মসংস্থান তৈরি করো সবাই বিসিএস এর পিছনে দৌড়িয়ে জীবনের মূল্যবান সময়কে নষ্ট করো না।
সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে কেউ কেউ বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তুলনা করছে কোন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কতোজন বিসিএস ক্যাডার হয়েছে তার গড় হিসেব অনুযায়ী আর শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা গর্ব করে বুক ফুলিয়ে বলছে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এতোজন ক্যাডার হয়েছে। অতএব আমরা অমুক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এগিয়ে, এরূপ যদি চলতে থাকে অদূর ভবিষ্যতে এদেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় ধস নামবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আন্তর্জাতিক রেটিং পয়েন্টে আরো পিছিয়ে পড়বে। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেটিং পয়েন্ট করা হয়, সে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান, শিক্ষাব্যবস্থা, শিক্ষার পরিবেশ এবং গবেষণা কার্যক্রমের উপর ভিত্তি করে। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা কার্যক্রম যত বেশি এবং মানসম্পন্ন হবে সে বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক রেটিং পয়েন্টে বেশি এগিয়ে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয় হলো বিশ্বের বিদ্যালয়। এখান থেকে শিক্ষার্থীরা বিশ্বমানের হয়ে বের হবে। এখানে এক-একজন তার বিষয়ে দক্ষ ও স্কলার হবে। কেন তারা শুধুমাত্র সরকারি চাকরির পিছনে কিংবা বিসিএস এর পিছনে জীবনটা শেষ করবে।
আমরা যারা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছি অর্থাত্ আজকের এই তরুণ প্রজন্ম আমরা কেন একজন লেখক কিংবা গবেষক হওয়ার স্বপ্ন দেখছি না? আমরা কেন এমন কিছু লেখার চেষ্টা করছি না যা মানুষের চিন্তারাজ্যে আমূল পরিবর্তন আনতে পারে।
আমাদেরকে স্বপ্ন দেখতে হবে যে আমরা এই ঘুণেধরা সমাজকে ভেঙে আমরা আমাদের মনের মতো করো নতুন সমাজ গড়ে তুলব। যে সমাজে জাস্টিস তথা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে।
আমার এই লেখা যারা বিসিএস ক্যাডার হতে চান তাদের বিরুদ্ধে নয় বরং যারা ‘হুজুগে মাতাল’ তাদের বিরুদ্ধে, আমরা আতঙ্কিত হই তখন যখন দেখি কোনো কোনো স্কুলের সামনে সাইনবোর্ডে স্কুল কর্তৃপক্ষ লিখে দেয়—এ স্কুলে চতুর্থ শ্রেণি থেকেই বিসিএস-এর প্রস্তুতি নেওয়া হয় অর্থাত্ বিসিএস পড়া পড়ানো হয়। বিশ্বাস করুন বিসিএস একটি সরকারি চাকুরি বৈ কিছুই নয়। এ পৃথিবীটা অনেক বড়। এখানে বিসিএস বা সরকারি চাকরি ছাড়াও অনেক বড় কিছু হওয়া বা বড় কিছু করা যায়। আশাকরি নতুন প্রজন্মের শুভবুদ্ধির উদয় হবে।
n লেখক :শিক্ষার্থী, মাষ্টার্স, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়