গেল ২০১৭ সালে ব্যাংকিং খাতের শেয়ারে লেনদেন হয়েছে ৪৯ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা। যা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মোট লেনদেনের ২২ দশমিক ৬৮ শতাংশ। চার বছর পর আবারও পুঁজিবাজারে লেনদেনের শীর্ষে উঠে এসেছে ব্যাংকিং খাত। এর আগে ২০১০, ২০১১ ও ২০১২ সালে টানা তিন বছর বাজারে লেনদেনের শীর্ষে ছিল ব্যাংকিং খাত। এরপর এ খাতের লেনদেন কমতে থাকে। গত চার বছরে শীর্ষে উঠে আসে বস্ত্র, জ্বালানি এবং প্রকৌশল খাত। এর মধ্যে জ্বালানি খাত দুই বছর লেনদেনের শীর্ষে ছিল।
মার্চেন্ট ব্যাংকাররা বলছেন, ২০১০ এর বাজার উত্থানকে কেন্দ্র করে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বেশি লেনদেন হয়েছিল। সে সময় ব্যাংকগুলোর মুনাফাও বেশি ছিল। ফলে ব্যাংকের দিকে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ ছিল। তবে বাজার উত্থানের সাথে সাথে ব্যাংকের শেয়ারের দাম কোম্পানিগুলোর আয়ের তুলনায় অনেক বেড়ে যায়। ফলে ধ্বসের সময় ব্যাংকের শেয়ার দর অনেক কমে যায়। কিছু ব্যাংকের শেয়ারের দাম গায়ের দরের নিচেও (ফেসভ্যালু) নেমে যায়। এ সময়ে কিছু ব্যাংক বড় ধরনের খেলাপি ঋণের ঝুঁকিতে পড়ে। এখনও ব্যাংকিং সেক্টরে খেলাপি ঋণের বড় বোঝা রয়েছে। খেলাপি ঋণ থাকলেও বেশিরভাগ ব্যাংকই লভ্যাংশ দিয়ে যাচ্ছে। এতে দেখা গেছে, গত দুই বছর ব্যাংকগুলোর আয়ের তুলনায় শেয়ারের দাম অনেক বেশি নেমে গেছে। এমনকি এ খাতের পিই রেশিও (দাম-আয় অনুপাত) ৭/৮ এ নেমে যায়। এরপর আবারও শেয়ার বিনিয়োগকারীরা ব্যাংকের শেয়ারের দিকে ঝুঁকতে শুরু করেন। ফলে গেল বছরে এ খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ারে লেনদেন বেশি হয়েছে। এখন ব্যাংকিং খাতের শেয়ারের দাম বাড়লেও কিছু ব্যাংকের শেয়ারের দাম আয়ের তুলনায় কমই আছে। ফলে লেনদেন ও দাম বাড়লেও এ খাতে বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ—এমনটি বলা যাবে না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিদ্যুৎ উত্পাদনকে ব্যাপক গুরুত্ব দিয়েছে। ফলে নতুন নতুন বিদ্যুত্ কোম্পানি হয়েছে। বিদ্যুৎ খাতের কোম্পানিগুলোর আয়ও অনেক বেড়েছে। এজন্যই এ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিদ্যুত্ খাতের কোম্পানিগুলোর প্রতি শেয়ার বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়তে থাকে। ডিএসইর তথ্যে দেখা গেছে, ২০১০ সালে লেনদেনের শীর্ষে থাকা ব্যাংকিং খাতের শেয়ারে লেনদেন হয়েছে ১ লাখ ১১ হাজার ৩০৬ কোটি টাকা। ২০১১ সালে এ খাতে লেনদেন হয়েছে ৩৯ হাজার ১১৪ কোটি টাকা। পরের বছর লেনদেন হয় ১৫ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা। আর ২০১৩ সালে লেনদেনের শীর্ষে উঠে আসে বস্ত্র খাত। এ খাতের কোম্পানিগুলোতে সে বছর লেনদেন হয় ১৫ হাজার ২০৮ কোটি টাকা। ২০১৪ সালে লেনদেনের শীর্ষে উঠে আসে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত। এ খাতে লেনদেন হয় ১৭ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা। ২০১৫ সালেও শীর্ষে ছিল জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত। এ বছর লেনদেন হয় ১৭ হাজার ৩৭ কোটি টাকা। আর ২০১৬ সালে শীর্ষে থাকা প্রকৌশল খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ারে লেনদেন হয়েছে ১৯ হাজার ৯৭৯ কোটি টাকা।
২০১৭ সালে ডিএসইর লেনদেন পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এ বছর লেনদেনের দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে ছিল প্রকৌশল খাত। এ খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ারে ২৭ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। যা ডিএসইর মোট লেনদেনের ১২ দশমিক ৭১ শতাংশ। তৃতীয় অবস্থানে ছিল বস্ত্র খাত। এ খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ারে লেনদেন হয়েছে ২৫ হাজার ৭৬৮ কোটি টাকা। যা ডিএসইর মোট লেনদেনের ১১ দশমিক ৮৮ শতাংশ।