• রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪০ অপরাহ্ন
শিরোনাম:

যেন এক একটি রাসায়নিক বোমা!

আপডেটঃ : মঙ্গলবার, ৯ জানুয়ারী, ২০১৮

ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকায় হাজার হাজার রাসায়নিক দ্রব্যের গুদামঘর, ইহা শুনিলেও উন্নত দেশগুলির অনেকের চক্ষু চড়কবৃক্ষে আরোহণ করিবে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) এক হিসাব অনুযায়ী, পুরানো ঢাকায় রহিয়াছে ২৫ হাজার রাসায়নিক গুদামঘর বা রাসায়নিক দাহ্য বস্তুর গোডাউন। ইহাদের মধ্যে ১৫ হাজার গুদামঘর গড়িয়া উঠিয়াছে আবাসিক ভবনে। মাত্র আড়াই হাজার গুদামকে ট্রেড লাইসেন্স দিয়াছে সিটি করপোরেশন। বাকি ২২ হাজারের বেশি গুদামই অবৈধ। অনেক আবাসিক ভবনের নিচতলার পার্কিং পরিসর ব্যবহূত হইতেছে রাসায়নিক গুদাম হিসাবে। কিছু গৃহে রাসায়নিক পণ্যের কারখানাও আছে। প্রকাশ্যে এইসকল গুদাম হইতে রাসায়নিক দ্রব্য আনা-নেওয়া করিতেছেন ব্যবসায়ীরা। অগ্নিকাণ্ড ঘটিলে অভিযান পরিচালিত হয়, কয়েকদিন অতিক্রম করিলে অবস্থা তথৈবচ। এইভাবেই যুগ যুগ ধরিয়া চলিতেছে রাজধানীর পুরাতন ঢাকার রাসায়ানিক গুদামঘরগুলি। পরিস্থিতি এককথায় ভয়াবহ। পুরা এলাকা জুড়িয়া যেন এক একটি রাসায়নিক বোমা প্রোথিত রহিয়াছে।
দুইশত ধরনের ক্ষতিকর ও ঝুঁকিপূর্ণ রাসায়নিকের ব্যবসা চলে এই সকল গুদামকে কেন্দ্র করিয়া। এইসকল গুদামে রহিয়াছে ভয়ঙ্কর দাহ্য পদার্থ। সামান্য আগুনের স্পর্শ পাইলেই এইসকল রাসায়নিক দ্রব্য হইতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটিতে পারে। মাঝে মধ্যেই সিটি করপোরেশন-জেলা প্রশাসন পুরাতন ঢাকায় অভিযান চালাইতেছে, অবৈধ গুদামগুলি সিলগালা করা হইতেছে এবং অভিযুক্তকে কারাগারেও পাঠানো হইতেছে। কিন্তু এই সকল দায়সারা পদক্ষেপের স্থায়ী ফল তেমন দেখা যাইতেছে না। বড় দুর্ঘটনা না হইলেও, প্রায়শ অগ্নিদগ্ধ হইবার ঘটনা ঘটিতেছে। বড় দুর্ঘটনা না ঘটিলে যেন সংশ্লিষ্টদের টনক নড়ে না। ২০১০ সালের ৩ জুন পুরাতন ঢাকার নিমতলীতে রাসায়নিক গুদামে অগ্নিকাণ্ডে ১২৮ জনের প্রাণহানি ঘটিয়াছিল। দগ্ধ হইয়াছিল শতাধিক মানুষ। এই ঘটনার পর নিমতলী হইতে কিছু গুদাম ও কারখানা সরানো হইলেও পুরাতন ঢাকার অন্য এলাকা হইতে গুদামগুলি সরে নাই। বরং নিমতলির গুদামগুলি অন্য এলাকায় স্থানান্তরিত হইয়াছে। গত কয়েক বছরে রাসায়নিক সংশ্লিষ্ট কারণে রাজধানীতে যতগুলি অগ্নিকাণ্ড ঘটিয়াছে, তাহার সব কয়টিই ঘটিয়াছে পুরাতন ঢাকায়। ২০১১ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে ঢাকা মহানগরের আবাসিক এলাকা হইতে অবৈধ রাসায়নিক কারখানা ও গুদামগুলি কামরাঙ্গীর চর ও কেরানীগঞ্জে সরাইয়া লইবার সিদ্ধান্ত লওয়া হয়। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত অথবা নির্দেশের কোনো প্রভাবই কোথাও নাই। নির্বাহী সিদ্ধান্ত রহিয়াছে, উত্খাত অভিযান রহিয়াছে, তাহার পরও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি নাই। ইহার অর্থ, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ হয় তাহাদের দায়িত্ব বিষয়ে আন্তরিক নহেন অথবা ঘুষ-উেকাচের বিনিময়ে তাহারা তাহাদের দায়িত্ব পালন হইতে বিরত রহিয়াছেন। কিন্তু দিনের পর দিন এই অবস্থা চলিতে পারে না। আবাসিক এলাকা হইতে রাসায়নিক গুদাম বা কারখানাগুলি অবিলম্বে স্থায়ীভাবে অপসারণ করিতে হইবে। সরকারি পদক্ষেপ যেমন এইক্ষেত্রে দ্রুত গ্রহণ করিতে হইবে, তেমনি পরিবেশবাদী সংগঠন ও সচেতন নাগরিক সমাজকেও এই বিষয়ে অধিক সক্রিয় হইতে হইবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ