বেসিক ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় জড়িতদের বাধ্যতামূলক অবসর দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছে। শুধু তাই নয় এসব কর্মকর্তাকে সব ধরনের আর্থিক সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে তাদের শাস্তি নয় বরং পুরস্কৃত করা হয়েছে। এমন কথা বলা হয়েছে জাতীয় সংসদের অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত কমিটির একটি সাব-কমিটির বৈঠকে।
জাতীয় সংসদের অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি বেসিক ব্যাংকের ঋণ অনিয়ম অনুসন্ধানে গত নভেম্বরে একটি সাব-কমিটি গঠন করে। সাব-কমিটির দ্বিতীয় বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। বৈঠকে উপস্থাপিত একটি প্রতিবেদনে বেসিক ব্যাংকের পক্ষ থেকে ঋণ বিতরণে অনিয়মে জড়িতদের বিরুদ্ধে নেওয়া প্রশাসনিক ব্যবস্থার কথা তুলে ধরা হয়।
বেসিক ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, ঋণ অনিয়মে জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় ব্যাংক ৮ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন পর্যায়ের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। এদের মধ্যে প্রধান কার্যালয়ের মহাব্যবস্থাপক খন্দকার শামীম হাসানকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়েছে। দিলকুশা ও পরবর্তীতে প্রধান শাখার শাখা ব্যবস্থাপক গোলাম ফারুক খানকে (মহাব্যবস্থাপক) চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছে। শান্তিনগর শাখার তত্কালীন শাখা ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আলীকে (মহাব্যবস্থাপক) চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। গুলশান শাখার তত্কালীন ২ জন শাখা ব্যবস্থাপক শিপার আহমেদ (উপমহাব্যবস্থাপক) ও এসএম ওয়ালিউলাহকে (উপমহাব্যবস্থাপক) চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। গাজীপুর চৌরাস্তা শাখার তত্কালীন শাখা ব্যবস্থাপক নীলোত্পল সরকারকে (সহকারী মহাব্যবস্থাপক) চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছে। গুলশান শাখার তত্কালীন ক্রেডিট ইনচার্জ এসএম জাহিদ হাসানকে (উপব্যবস্থাপক) চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ঈশ্বরগঞ্জ শাখার তত্কালীন শাখা ব্যবস্থাপক আলী রেজা মাসুদকে (উপব্যবস্থাপক) বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ঋণ মঞ্জুর, বিতরণ এবং নিয়োগ সংক্রান্ত অনিয়মের পরিপ্রেক্ষিতে ১৩ জন কর্মকর্তা, ভুয়া সনদের জন্য ৪০ জন কর্মকর্তা এবং অন্যান্য ১৫ জন কর্মকর্তাসহ মোট ৬৮ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বৈঠকে কমিটির সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, দুদক ১২০ জনের বিরুদ্ধে ৫৬টি মামলা দায়ের করেছে। এর মধ্যে ১৩ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অনিয়মে সংশিষ্টতা প্রমাণিত হওয়ার পরও অভিযুক্তদের বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়ায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, প্রতিবেদন অনুযায়ী কয়েকজনকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়েছে। এ থেকে বোঝা যায়, এটি শাস্তি নয় বরং সসম্মানে সংশিষ্ট কর্মকর্তাদের পুরস্কৃত করা হয়েছে। কারণ বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়ার অর্থ সব আর্থিক সুযোগ-সুবিধাসহ সসম্মানে চাকরি থেকে অবসর দেওয়া।
বৈঠকের কার্যবিবরণীতে দেখা যায়, বেসিক ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতিতে অভিযুক্ত সবার বিরুদ্ধে মামলা না হওয়ায় সাব-কমিটির সদস্যরা কারণ জানতে চেয়েছেন। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দুদক পদক্ষেপ নেবে নাকি সরকার কোনো ব্যবস্থা নেবে, কমিটি তা জানতে চেয়েছে। কমিটির সদস্য ওয়াসিকা আয়শা খান অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিতে কোনো চাপ ছিল কিনা তা জানতে চান।
সাব-কমিটির বৈঠকে সদস্যরা বেসিক ব্যাংকের পক্ষ থেকে পরিচালন মুনাফার যে তথ্য দেওয়া হয়েছে তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ২০১৪ সালে ১২২ দশমিক ৪৪ কোটি টাকা পরিচালন-ক্ষতির মুখোমুখি হলেও বেসিক ব্যাংক ২০১৬ সালে ৯ দশমিক শূন্য ৮ কোটি টাকা ও ২০১৭ ুসালের নভেম্বর পর্যন্ত ৪৭ দশমিক ৩৪ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফার কথা জানিয়েছে, এটা অসম্ভব। নিট সুদ আয় ঋণাত্মক হলেও বেসিক ব্যাংক কীভাবে মুনাফা অর্জন করে তিনি তা জানতে চান।