ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নূতন অধিভুক্ত রাজধানীর সাতটি সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন যেন নিত্যকার ব্যাপার হইয়া দাঁড়াইয়াছে। এই সাত কলেজের কয়েক শত ছাত্রছাত্রী গত বৃহস্পতিবার নীলক্ষেত মোড়ে সোয়া দুই ঘণ্টা অবরোধ করিয়া রাখেন। চলতি মাসের মধ্যেই অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষার ফল প্রকাশসহ পাঁচ দফা দাবিতে তাহারা এই অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন। ইহাতে সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে সাইন্সল্যাব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আজিমপুর এলাকার রাস্তায় সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। অতঃপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আন্দোলনস্থলে গিয়া ফেব্রুয়ারির ২৫ তারিখে ফল প্রকাশের ঘোষণা প্রদান করিলেও শিক্ষার্থীরা তাহা প্রত্যাখ্যান করিয়া আন্দোলন চালাইয়া যাইবার ঘোষণা দেন। তাহাদের দাবি, পরীক্ষার ফল প্রকাশ করিতে হইবে এই মাসের মধ্যেই। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানাইয়াছেন যে, তাহাদের একই সেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অধিকাংশ বিভাগের শিক্ষার্থীদের অনার্স তৃতীয় বর্ষের সমাপনী পরীক্ষা শেষ হইয়াছে এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া কলেজগুলিরও অনার্স তৃতীয় বর্ষের ফরম পূরণ সম্পন্ন হইয়াছে। অথচ পরীক্ষার ফল প্রকাশ না হইবার কারণে স্থবির হইয়া পড়িয়াছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত রাজধানীর ওই সরকারি সাত কলেজে অধ্যয়নরত কয়েক হাজার ছাত্র-ছাত্রীর শিক্ষাজীবন। দেখা যাইতেছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সাত কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হইবার পর যে সকল সংকট শুরু হইয়াছে, তাহা যেন থামিতে চাহিতেছে না। পরীক্ষার সময়সূচি ঘোষণার দাবিতে গত বত্সর জুলাই মাসেও শিক্ষার্থীরা রাজপথে নামিতে বাধ্য হইয়াছিলেন। সেই সময় পুলিশের ছোঁড়া টিয়ার গ্যাসের শেলে চোখ হারান তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী সিদ্দিকুর রহমান।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০১৪ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ রাজধানীর সাতটি সরকারি কলেজকে সংশ্লিষ্ট এলাকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেওয়ার নির্দেশ দেন। ইহা এক ধরনের উপহার। ইহার ফলে এইসকল কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ পাইবেন বলিয়া আনন্দিতও হইয়াছিলেন বটে। কিন্তু এখন অবস্থা এমন যে, এই উপহার যেন তাহাদের গলার কাঁটা হইয়া দাঁড়াইয়াছে। এমনিতেই বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪৫ হাজারেরও অধিক। তাহার সহিত নূতন সাতটি কলেজের আরো প্রায় দুই লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর বিভিন্ন একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয়ের যে জনবল ও প্রস্তুতি দরকার, তাহা না থাকিবার কারণেও তৈরি হইয়াছে এই সংকট। জানা যায়, ওই সাতটি কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের লিখিত পরীক্ষা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনেই অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু মৌখিক পরীক্ষা নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওই সাতটি কলেজের মৌখিক পরীক্ষার ফলাফল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকট প্রেরণ করিলেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এখনো পূর্ণাঙ্গ ফল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকট হস্তান্তর করে নাই, যাহার ফলে বিলম্ব হইতেছে পরীক্ষার ফল প্রকাশে।
এই ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলিয়াছেন যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যখন অধিভুক্তের বিষয়টি গ্রহণ করে তখন অনেক ক্ষেত্রে পরিকল্পনার অভাব ছিল। তবে এখন কথার চাইতে কাজের প্রয়োজনই বেশি। এই সাতটি কলেজের বিভিন্ন বর্ষের দুই লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর সকল প্রকার অনিশ্চয়তার অবসান হওয়া জরুরি। ইহার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনবল বৃদ্ধিসহ যাহা যাহা করণীয়, তাহা করিতে হইবে অনতিবিলম্বে।