পুঁজিবাজারে সূচকের ওঠানামা অস্থির হয়ে উঠেছে। একদিন সূচক বাড়ছে তো অন্যদিন ব্যাপক দরপতন হচ্ছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বাজারে এমন চিত্রই দেখা যাচ্ছে। এর কারণ হিসেবে বাজার সংশ্লিষ্টরা ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকটকে দায়ী করছেন। তারা বলছেন, ব্যাংকিং সেক্টরে তারল্য সংকটের কথা খোদ গভর্নরই স্বীকার করে নিয়েছেন। এমনকি তিনি সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমানত তুলে না নেওয়ার সুপারিশ করেছেন। এতে বাজারে সংকট আরও বাড়বে বলে তিনি মনে করেন।
এদিকে ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট দেখা দেওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে পুঁজিবাজারে। পুঁজিবাজারেও তারল্যের অভাব দেখা দিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে ঋণ-আমানত অনুপাত কমানোর সিদ্ধান্তের পর থেকেই তারল্যের অভাব হঠাত্ করে একটি সমস্যা হয়ে দেখা দেয়। কিছুদিন আগেও ব্যাংকগুলোতে প্রচুর তারল্য জমা হয়েছিল। এখন মানুষের মধ্যে ভয় থেকেই এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে তারল্য সংকটের ভয়ের পাশাপাশি রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার আশঙ্কায় পুঁজিবাজারে দরপতন ত্বরান্বিত হচ্ছে।
গতকাল বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউস ঘুরে দেখা গেছে, ব্যাপক দরপতনে বিনিয়োগকারীরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। তারা বলছেন, বাজারে দরপতন হতেই পারে কিন্তু তাই বলে এতো পতন আশঙ্কাজনক। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে দেওয়ার কারণেই সূচক এভাবে কমে যাচ্ছে বলে মনে করেন বিনিয়োগকারীরা। তারা বলছেন, ঋণ-আমানত অনুপাত কমানোর ফলে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের সক্ষমতা কমে গেছে। ফলে তারা বাধ্য হয়ে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছে। আর অনেকে শেয়ার বিক্রি না করলেও শেয়ার কেনার সক্ষমতা নেই। ফলে সূচক ব্যাপকভাবে কমে যাচ্ছে। এ অবস্থায় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবী বিনিয়োগকারীদের।
আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টস্-এর দৈনন্দিন বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গতকাল বাজারে দরপতনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা ছিল ব্যাংকিং খাতের। এ খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম গড়ে প্রায় ৩ শতাংশ কমেছে। এছাড়া ব্যাংক বহির্ভুত আর্থিক খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম গড়ে প্রায় ২ দশমিক ২০ শতাংশ কমেছে। এছাড়া বস্ত্র ও প্রকৌশল খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম গড়ে প্রায় দেড় শতাংশ করে কমেছে।
গতকাল বাজারে লেনদেনের ক্ষেত্রেও এগিয়ে ছিল ব্যাংকিং খাত। এ খাতের কোম্পানিগুলোতে ৬৬ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে যা ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৫ শতাংশেরও বেশি। এছাড়া প্রকৌশল খাতের কোম্পানিগুলোতে লেনদেন হয়েছে ৬১ কোটি টাকা। যা ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৪ শতাংশ।
গতকাল দিনের শুরু থেকেই ডিএসইর সূচক ব্যাপকভাবে কমতে থাকে। তথ্যে দেখা গেছে, গতকাল ডিএসইর সার্বিক সূচক ৯৯ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৬৪ শতাংশ কমে ৫ হাজার ৯৫০ পয়েন্টে নেমে এসেছে। আর ডিএস৩০ সূচক কমেছে ৩৭ পয়েন্ট। ডিএসইতে গতকাল লেনদেন হয়েছে ৪৪০ কোটি টাকা। যা আগের দিনের তুলনায় প্রায় ১৪ শতাংশ কম। আর অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্য সূচক ১৭৮ পয়েন্ট কমে ১১ হাজার ১১৮ পয়েন্টে নেমে এসেছে।