• সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম:

রাজস্ব আদায়ের ভুল তথ্য না দিতে কড়া বার্তা এনবিআরের চেয়ে ১১ হাজার কোটি টাকা কম পাওয়ার হিসাব সিজিএ’র

আপডেটঃ : বৃহস্পতিবার, ১৫ মার্চ, ২০১৮

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) রাজস্ব আদায়ের যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তার সঙ্গে সরকারি হিসাব সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান হিসাব মহা নিয়ন্ত্রকের (সিজিএ) অফিসের পরিসংখ্যানের মধ্যে দীর্ঘদিনের পার্থক্য রয়েছে। বছর বছর এই ব্যবধান না কমে বরং বাড়ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সর্বশেষ প্রাপ্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী এ পার্থক্য ১১ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। অর্থাত্ এনবিআর রাজস্ব আদায়ের যে পরিসংখ্যান দিয়েছে, সিজিএ’র হিসাবে প্রকৃত আদায় দেখা যাচ্ছে তার চাইতে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা কম। দীর্ঘদিন ধরে এ ব্যবধান কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হলেও কার্যকর কোন ফল মিলছে না। বরং এক পক্ষ অন্য পক্ষকে দায়ী করে আসছে। এর ফলে একদিকে সরকারের রাজস্ব আদায়ের প্রকৃত চিত্র যেমন জানা যাচ্ছে না, অন্যদিকে সমস্যার কারন চিহ্নিত করে কার্যকর সমাধানও মিলছে না। ফলে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে সরকারের সংশ্লিষ্ট অফিসের হিসাব সংক্রান্ত অদক্ষতা।
অভিযোগ রয়েছে, রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন দেখাতে ক্ষেত্র বিশেষে এনবিআরের মাঠ পর্যায়ের অফিস কৌশলে বাড়তি রাজস্ব আদায় দেখাচ্ছে। কখনো কখনো শীর্ষ পর্যায়ের ইচ্ছায় কৃত্রিম বর্ধিত রাজস্ব আদায় দেখানো হয়েছে। অতীতের কয়েকটি অর্থবছর শেষে রাজস্ব আদায়ের যে চিত্র দেখানো হয়েছে, তা নিয়েও বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে।
এনবিআরের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এ ইস্যুতে নতুন করে গুরুত্ব দিতে চাইছে বর্তমান রাজস্ব প্রশাসন। এ লক্ষ্যে অতীতের কয়েকটি অর্থবছরে প্রকৃত রাজস্ব আদায় কত ছিল তা বের করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে শীর্ষ প্রশাসন থেকে। এ বিষয়ে গতকাল মঙ্গলবার মাঠ পর্যায়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেছেন এনবিআর চেয়ারম্যন মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া। সূত্র জানায়, বৈঠকে কর্মকর্তাদের রাজস্ব সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত প্রদানে সতর্ক করা হয়েছে। কোন ধরণের ভুল, অতিরঞ্জিত বা ভুয়া রাজস্বের পরিসংখ্যান না দিতে কর্মকর্তাদের কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছে।
বৈঠকে উপস্থিত একজন ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তা ইত্তেফাককে বলেন, সিজিএ’র সঙ্গে আমাদের রাজস্ব আদায়ের পার্থক্য কমিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে চেয়ারম্যান মহোদয় নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া কোন ধরণের ভুল তথ্য না দেওয়ার জন্যও নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
যোগাযোগ করা হলে এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া ইত্তেফাককে বলেন, সিজিএ’র সঙ্গে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের ব্যবধান প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা। কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যাতে সিজিএ’র সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের সব ধরণের প্রমাণপত্রসহ এসব ব্যবধান কমিয়ে আনা হয়। অতীতের ব্যবধান কমিয়ে আনার পাশাপাশি ভবিষ্যতে যাতে এটি আর না বাড়ে এ চেষ্টা থাকবে। এ লক্ষ্যে অর্থ বিভাগসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গেও বসবো।
সূত্র জানিয়েছে, অনেক সময় একই আদায় দুই দফা হিসাব হওয়ার ফলে রাজস্ব আদায় বেশি দেখা যায়। কোডে জমা দেওয়ার কারনেও দুই অফিস আদায় দেখায়। আবার জমা দেওয়ার পর সংশ্লিষ্ট অফিসে ট্রেজারি চালান সময়মত জমা না হওয়া কিংবা পরবর্তী মাসের রাজস্বকে আগেই আদায় হিসেবে দেখানোর কারণেও হিসাবে ভুল হতে পারে। এছাড়া কোন কোন ক্ষেত্রে আদায় বেশি দেখানোর জন্যও বাড়তি হিসাব দেখানো হয়ে থাকে।
তবে এনবিআর কর্মকর্তারা বলছেন, অনেক সময় সিজিএ অফিসও সঠিক হিসাব না করার কারনে এ সমস্যা হয়ে থাকে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা দক্ষিন ভ্যাট কমিশনারেটের অফিসের সঙ্গে সিজিএ’র রাজস্ব আদায়ের ব্যবধান প্রায় সাড়ে সাতশ’ কোটি টাকা। অবশ্য ঢাকা দক্ষিণের ভ্যাট কমিশনার কাজী মোস্তাফিজুর রহমানের দাবি, তাদের হিসাব সঠিক। উদাহরন দিয়ে ইত্তেফাককে তিনি বলেন, ভুমি নিবন্ধন ফি বাবদ বছরে প্রায় তিনশ’ কোটি টাকা পাই। অথচ সিজিএ’র হিসাবে এই টাকা দেখানো হয়নি, এছাড়া আইআরডি’র কাছ থেকে ৫০ কোটি টাকা আদায় এজি অফিস দেখিয়েছে ৩১ কোটি টাকা, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ৪১ কোটি টাকা দেখিয়েছে ২৩ কোটি টাকা।
এ ধরণের আরো বেশকিছু ক্ষেত্রে সিজিএ অফিসের হিসাব নিয়ে আমাদের আপত্তি রয়েছে। অন্যদিকে শুল্ক বাবদ এই অফিস কোন রাজস্ব আদায় না করলেও সিজিএ অফিস ১৬৪ কোটি টাকা আদায় দেখিয়েছে। এছাড়া ২০১৫-১৬ অর্থবছরে জুনের দুটি বিবরণীর একটিতে দেখিয়েছে ৩ হাজার ২৫০ কোটি টাকা অন্যটিতে দেখিয়েছে ৩ হাজার ৯২৫ কোটি টাকা। এসব বিষয়ে সিজিএ অফিসকে চিঠি পাঠানো হবে বলেও জানান তিনি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ