• মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৪৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:

কৃষিঋণ বিতরণ বাড়ছে নয় মাসে বিতরণ হয়েছে ১৭ হাজার কোটি টাকা

আপডেটঃ : সোমবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৮

চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) কৃষি খাতে ১৭ হাজার ৩২৭ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এ পরিমাণ ছিল ১৫ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। অর্থাত্ আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরে কৃষি খাতে এক হাজার ৫১৭ কোটি টাকা বেশি বিতরণ হয়েছে। গেল নয় মাসে যে পরিমাণ বিতরণ হয়েছে তা চলতি অর্থবছরের মোট লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৮৫ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে ব্যাংকের সব ঋণের সুদের হার কমে যায়। তাতে কৃষি ঋণের সুদের হারের কাছাকাছি অন্যান্য ঋণের সুদ চলে আসায় এ খাতে ব্যাংকগুলো ঋণ দিতে আগ্রহ দেখিয়েছিল। বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়ায় কৃষি ঋণের বিতরণও বেড়ে গিয়েছিল। ফলে নয় মাসে আশানুরূপ ঋণ গিয়েছে কৃষ খাতে।
চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে কৃষি খাতে মোট ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ২০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় ৮টি ব্যাংকের জন্য নির্ধারিত ৯ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা। আর বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকের জন্য এবার ১০ হাজার ৮১০ কোটি টাকা বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।
প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, কৃষিঋণ বিতরণে শীর্ষে রয়েছে সরকারি খাতের বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। চলতি অর্থবছরের নয় মাসে বিশেষায়িত এ ব্যাংকটি তিন হাজার ৬৫৮ কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণ করেছে। অর্থবছরের নয় মাসে লক্ষ্যমাত্রার ৭৪ শতাংশ কৃষিঋণ বিতরণ করেছে কৃষি ব্যাংক। পুরো অর্থবছরের জন্য কৃষিঋণ বিতরণে ব্যাংকটির লক্ষ্যমাত্রা চার হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এর পরেই রয়েছে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। আলোচ্য সময়ে এ ব্যাংকটি এক হাজার ৫১ কোটি টাকা কৃষিঋণ বিতরণ করেছে। যা ব্যাংকটির নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৬৮ শতাংশ। পুরো অর্থবছরের জন্য এ ব্যাংকের লক্ষ্য ধরা হয়েছে এক হাজার ৬৮০ কোটি টাকা।
কৃষিঋণ বিতরণের দিক থেকে ৩য় স্থানে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। এই অর্থবছরে ৯৯৭ কোটি টাকা বিতরণ করেছে ব্যাংকটি। যা ব্যাংকটির নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ৮৬ শতাংশ। ইসলামী ব্যাংকের পুরো বছরের লক্ষ্যমাত্রা এক হাজার ১৫৭ কোটি টাকা। এর পরেই রয়েছে জনতা ব্যাংক। ৯ মাসে ৬২৯ কোটি টাকা কৃষিঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংটি। এছাড়াও অগ্রণী ব্যাংক বিতরণ করেছে ৫৩১ কোটি টাকা। যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ৮০ শতাংশ। ব্যাংটির লক্ষ্যমাত্রা ৬৬০ কোটি টাকা।
অন্যদিকে, লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও কোনো ঋণ বিতরণ করতে পারেনি ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান এবং সীমান্ত ব্যাংক লিমিটেড। আর চলতি অর্থবছরে ১৫০ কোটি টাকা কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো দি ফারমার্স ব্যাংকের। যার শুন্য দশমিক ৮৩ শতাংশ অর্থাত্ নয় মাসে এক কোটি ২৪ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছে ফারমার্স ব্যাংক।
কিছু ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হলেও সার্বিকভাবে লক্ষমাত্রার চেয়ে বেশি কৃষি ঋণ বিতরণ হওয়ায় কৃতিত্ব দাবি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষি ঋণ বিতরণ বিভাগ বলছে, কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জোর তত্পরতা এবং ব্যাংক গুলোর উদ্যোগের কারণে এটা সম্ভব হয়েছে। অগ্রাধিকার খাত হিসেবে এ খাতে ঋণ বিতরণ বাড়াতে বিভিন্ন সময়ে ব্যাংকগুলোর প্রতি নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। আর ব্যাংকগুলোর দেওয়া লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ঋণ বিতরণ না হলে জরিমানারও ব্যবস্থা করা হয়েছে। এসব কারণেই কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ বেড়েছে বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
তফসীলি ব্যাংকগুলোর ২০ হাজার ৪০০ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বাইরে বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক ২০ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি) ৭২০ কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণ করবে বলে কৃষি ঋণ নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের কৃষিঋণ নীতিমালা ও কর্মসূচি অনুযায়ী, শস্য বা ফল চাষের জন্য সর্বোচ্চ আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত কৃষিঋণের ক্ষেত্রে সিআইবি প্রতিবেদন ও তদন্তের প্রয়োজন হবে না।
প্রসঙ্গত, দেশের মোট দেশজ উত্পাদনে (জিডিপি) কৃষি খাতের অবদান প্রায় ১৫ শতাংশ। দেশের প্রায় ৪৩ শতাংশ শ্রমজীবি মানুষ প্রত্যক্ষভাবে এবং ৮৫ শতাংশ জনসাধারণ জীবন-জীবিকা ও কর্মসংস্থানের জন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির উপর নির্ভরশীল।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ