• মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:

মানের প্রশ্নে পিছিয়ে পড়ছে হালকা প্রকৌশল শিল্প ৯ মাসে এ খাতে রপ্তানি কমেছে ৫৩ শতাংশ

আপডেটঃ : শুক্রবার, ৪ মে, ২০১৮

দেশে হালকা প্রকৌশল শিল্পের প্রচুর সম্ভাবনা থাকলেও এ খাতের উত্পাদিত পণ্যের মান উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে না। এ খাতের উদ্যোক্তারা এখনো অনেকক্ষেত্রেই শত বছরের পুরনো প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল। এছাড়া  মূলধনের অভাব, দক্ষ জনশক্তির অভাব, সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকা এবং পরিকল্পিত শিল্প পার্কের অভাবে পিছিয়ে পড়ছে এ শিল্প। এসব অভাব পূরণ করা গেলে দেশের চাহিদা মেটানোর পর বিদেশে প্রচুর পরিমান রপ্তানি করা সম্ভব।
বর্তমানে দেশে ৪০ হাজারের বেশি কারখানায় সরাসরি ছয় লাখ এবং এই শিল্প পরোক্ষভাবে আরও প্রায় ৬০ লাখ লোকের জীবিকা নির্বাহ করছে। প্রতিবছর প্রায় ১০ হাজার বিভিন্ন ধরনের যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ উত্পাদন এবং সেবার মাধ্যমে জিডিপিতে মূল্যবান অবদান রেখে চলেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) ২৫ কোটি ৬২ লাখ মার্কিন ডলার মূল্যের ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য রপ্তানি করে। যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৫৪ কোটি ২৬ লাখ মার্কিন ডলার। অর্থাত্ গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৫২ দশমিক ৫৪ শতাংশ কমেছে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রকৌশল শিল্প কারখানা তিনটি পর্যায়ে উত্পাদন ও সেবা দিয়ে থাকে। যেমন—বিভিন্ন ধরনের মেশিনারি উত্পাদন (ক্যাপিটাল মেশিনারি), বিভিন্ন ধরনের যানবাহন ও কলকারখানার যন্ত্রাংশ উত্পাদন এবং রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত। এছাড়াও বিভিন্ন পণ্য উত্পাদন ও সেবা প্রদানে প্রত্যেক্ষ ও পরোক্ষভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে এ খাত। ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প খাত অন্যান্য বৃহত্তর শিল্প খাতের ফিডার বা সাপোর্ট ইন্ডাস্ট্রি হিসেবে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে  অবদান রেখে চলেছে। প্রযুক্তি  হস্তান্তর ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এই খাতের বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে। এই খাতের পণ্যসামগ্রী ব্যাপক ও বৈচিত্র্যময়।
বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প মালিক সমিতির (বাইশিমাস) সভাপতি আবদুর রাজ্জাক এ বিষয়ে বলেন, টেকসই ও উন্নত হালকা প্রকৌশলখাত গড়ে উঠলে আমদানি বিকল্প পণ্য উত্পাদনের পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগেরও সুযোগ সৃষ্টি হবে। দেশের চাহিদা পূরণের পর এ শিল্পের উত্পাদিত পণ্য বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব। এটা করা গেলে রপ্তানি শুধুমাত্র পোশাক শিল্পের উপর নির্ভরশীল থাকবে না। আমাদের হাতে গোনা রপ্তানি পণ্য থাকায় ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) কমপ্লায়েন্সের নামে বিভিন্ন ভাবে চাপ দেয়। হালকা প্রকৌশল পণ্যের রপ্তানি বাড়লে পণ্যে রপ্তানিতে বৈচিত্র আসবে বলেও তিনি মনে করেন।
লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিষ্ঠান দেশের পাট, সুতা ও পেপার মিল, সিমেন্ট কারখানা, ওষুধ শিল্প, অটোমোবাইলস, রেলওয়ে, সারশিল্প, গার্মেন্টস, মেরিন ট্রান্সপোর্ট, টেক্সটাইল ও অন্যান্য মেশিনারীর বিভিন্ন ধরনের ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ তৈরি করছে। দেশের চাহিদা মিটানোর পর এশিয়া, ইউরোপ ও আমেররিকার বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাতের উত্পাদিত যন্ত্রাংশ রপ্তানি অনেক সম্ভাবনা আছে। বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রাংশ, যেমন- বাইসাইকেল, ব্যাটারী, ইউপিএস, পেপার মিলের যন্ত্রাংশ, ভোল্টেজ স্ট্যাবিলাইজার, ব্যাটারী চার্জার, ফেনসি লাইটস, ফিটিংস, জিপার, গার্মেন্টস ও ওয়াশিং শিল্পে ব্যবহূত বয়লার মেশিন বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে।
সম্ভাবনাময়ী এ খাত বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে রয়েছে। সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো, স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি অর্থায়নের অভাব, বাজারজাতকরণ সমস্যা, যথার্থ প্রযুক্তির অভাব, গবেষণা ও উন্নয়ন সুযোগের ঘাটতি, দক্ষ কর্মীর অভাব, সাপোর্ট সার্ভিসের ও যথাযথ উপস্থাপনের ঘাটতি, জ্বালানি সরবরাহে অপর্যাপ্ততা প্রভৃতি। এ সকল সমস্যা সমাধান করা গেলে এ সম্ভাবনাময় খাতের প্রভূত অগ্রগতি সাধিত হবে বলে খাত সংশ্লিষ্টদের আশা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ