• মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:২৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:

পুঁজিবাজার : বড় সিদ্ধান্তের ইতিবাচক প্রভাব নেই

আপডেটঃ : রবিবার, ১৩ মে, ২০১৮

কৌশলগত অংশীদার হিসেবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) চীনা জোটকে পেয়েছে। এটি ডিএসইর জন্য যেমন সুখবর তেমনি সুখবর গোটা পুঁজিবাজারের জন্যও। এছাড়া ব্যাংকগুলোর জন্য সিআরআর কমানো ও সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকে রাখাসহ বিভিন্ন নীতিগত সুবিধা দিয়েছে সরকার। সুবিধাগুলো আর্থিক বাজারের জন্য হলেও পুঁজিবাজারের জন্যও ইতিবাচক। কিন্তু বাস্তবে দেশের পুঁজিবাজারগুলোতে বড় এসব সিদ্ধান্তের কোন ইতিবাচক প্রভাব নেই। ক্রমাগত সূচক পতন আর কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম হ্রাস পাচ্ছে। কিছু কোম্পানির শেয়ারের দাম নেমে এসেছে অভিহিত মূল্যের (ফেসভেল্যুর) দ্বারপ্রান্তে। বিশেষ করে যে ব্যাংক খাতের জন্য এতো সুবিধা সেই খাতের কোম্পানির শেয়ার হোল্ডাররাই রয়েছেন বড় দুশ্চিন্তায়।
জানা যায়, চীনের শেনচেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জকে কৌশলগত অংশীদার করতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই) চূড়ান্ত অনুমতি দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। চলতি মাসের ৩ তারিখে বিএসইসির জরুরি সভায় এই অনুমোদন দেওয়া হয়। চীনা এই কনসোর্টিয়াম ডিএসইর ‘ব্লকড অ্যাকাউন্টে’ থাকা ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের ২৫ শতাংশ বা ৪৫,০৯,৪৪,১২৫টি শেয়ার ২১ টাকা দরে কিনবে। আগামী ১৪ মে কোম্পানি দুটির সঙ্গে শেয়ার বিক্রির চুক্তি হওয়ার সম্ভাব্য তারিখ রয়েছে। চীনের সঙ্গে এই চুক্তির মূল লক্ষ্য হলো পুঁজিবাজারকে শক্তিশালী করা ও বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানো।
এর আগে অর্থমন্ত্রী ব্যাংকের তারল্য সংকট কমাতে ব্যাংকগুলোতে নানান সুবিধা দেয়। এর মধ্যে সিআরআর কমানো ও সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকে রাখা অন্যতম। গত এপ্রিল মাসের শুরুতে এসব সিদ্ধান্ত দেয় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। সিআরআর কমালে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগযোগ্য হয়। এছাড়াও সরকারি প্রতিষ্ঠানের আমানতের ৫০   ভাগ বেসরকারি ব্যাংকে রাখায়ও বড় অঙ্কের অর্থ আসে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর হাতে। এসব সিদ্ধান্তের মূল লক্ষ্য ছিল সুদের হার কমিয়ে আনা। সাম্প্রতিক সময়গুলোতে সুদের হার ডাবল ডিজিটে উঠে যায়।
এসব বড় সিদ্ধান্তের কোন ইতিবাচক প্রভাব পুঁজিবাজারে পড়েনি। ডিএসই ওয়েবসাইটে দেখা যায়, গত মাসের ২৬ তারিখের পর দেশের দুই পুঁজিবাজারে সূচক পতন অব্যাহত। এসময় যদিও কার্যদিবস ছিল কম, তবুও কিন্তু এসময়গুলোতে সূচক পতনের পরিমাণ ছিল অতীতের কয়েক বছরের তুলনায় বেশি। প্রায় প্রতি কার্যদিবসই ৪০ থেকে ৫০ পয়েন্ট সূচক কমেছে। এই সাত কার্যদিবসে ডিএসইর সূচক ৫ হাজার ৮১৩ পয়েন্ট থেকে নেমে এসেছে ৫ হাজার ৫৮১ পয়েন্টে। অর্থাত্ এই সাত কার্যদিবসেই সূচক কমেছে ২৩২ পয়েন্ট। মোট সূচকের ৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
এসময় অধিকাংশ কোম্পানিই শেয়ারের দর হারিয়েছে ব্যাপক হারে। বিশেষ করে ব্যাংক খাতে এ অবস্থা শোচনীয়। কিছু কিছু ব্যাংক এখন শেয়ারের গায়ের মূল্যের দ্বারপ্রান্তে অবস্থান করছে। এর মধ্যে বেসরকারি ন্যাশনাল ব্যাংক, এবি ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংক ও প্রিমিয়ার ব্যাংকসহ ছয়টি ব্যাংকের শেয়ারের দাম ১১ টাকা থেকে ১৩ টাকার মধ্যে নেমে এসেছে। ধারণা করা হচ্ছে এ পতন আরো বেশ কিছু দিন অব্যাহত থাকবে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার ডিএসইতে সূচক কমেছে ৪০ পয়েন্ট এবং সিএসইতে কমেছে ৬১ পয়েন্ট। এদিন ৩০টি তালিকাভুক্ত ব্যাংকের মধ্যে তিনটি ছাড়া দাম কমেছে সবগুলোর।
বিশ্লেষকরা বলছেন, তালিকাভুক্ত ব্যাংক ও আর্থিক খাতের কোম্পানিগুলো থেকে বিনিয়োগকারীরা প্রত্যাশিত লভ্যাংশ না পাওয়ায় শেয়ারবাজারের এক ধরনের আস্থার সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এমন কি তালিকাভুক্ত ১৬টি কোম্পানি কোন লভ্যাংশ না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এছাড়া কিছু কোম্পানি নগদ লভ্যাংশের পরিবর্তে আশঙ্কাজনক হারে বোনাস শেয়ার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এরই নেতিবাচক প্রভাব দেখা দিয়েছে বাজারে। এছাড়া পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কিছু ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ নিয়ে গত কয়েক মাসে দেখা গেছে নানা অস্থিরতা ও পরিবর্তন। যার প্রভাবে বাজারে দেখা দিয়েছে তারল্য সংকটও।
এমনটিই মনে করছেন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তাক আহমেদ সাদেক। তিনি বলেন, কোম্পানিগুলো বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশিত লভ্যাংশ দিতে পারেনি। বিশেষ করে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের কোম্পানিগুলো ভালো লভ্যাংশ দেয়নি। ফলে চীনা কনসোর্টিয়ামের কৌশলগত বিনিয়োগকারী হওয়ার সুখবরের প্রভাব বাজারে দেখা যাচ্ছে না।
তবে অনেকে বলছেন, অর্থবছরের শেষ হওয়ায় ব্যাংকগুলো তাদের ঋণ পুনরুদ্ধারে কাজ করছে। এতে ঋণ বিতরণ কমে গেছে। এছাড়া সুদের হার না কমায় সে তারল্য সংকট আরো বেড়েছে। এগুলো পুঁজিবাজারে মন্দার অন্যতম কারণ।
ডিএসইর সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী বলছেন, ব্যাংকের সুদের হার এখনো কমেনি, ডলারের দাম আগের চেয়ে বেড়ে আছে আর চীনের টাকা এখনো পাওয়া যায়নি- সব মিলিয়ে একটু মন্দাভাব যাচ্ছে, তবে সমস্যা ঠিক হয়ে যাবে দ্রুত ।
তবে চীনের অর্থ পাওয়া গেলে এ সংকট অনেকটাই কমবে বলে মনে করছেন তিনি। শাকিল রিজভী বলেন, আগামী ১৪ মে কৌশলগত অংশীদার করার বিষয়ে চীনা কনসোর্টিয়ামের সাথে চুক্তি সই হবে। আশা করি এর আগেই পুঁজিবাজার ভাল হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ