চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) কৃষি খাতে ১৭ হাজার ৯৫৩ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো। যা পুরো অর্থবছরের মোট লক্ষ্যমাত্রার ৮৮ শতাংশ। অথচ আগের অর্থবছরের একই সময়ে ওই অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার ৯৮ দশমিক ২৬ শতাংশ অর্জিত হয়েছিল। সে হিসাবে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের দিক থেকে এ বছর পিছিয়ে পড়েছে। কৃষি ঋণের ক্ষেত্রে এমন ঘটনা কমই হয়। এ ঋণের ক্ষেত্রে আগের অর্থবছরের চেয়ে ঋণ বাড়ার প্রবণতা বেশি থাকে।
আর্থিক খাত বিশ্লেষকরা বলছেন, গতবছরের শেষের দিকে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ ব্যাপক আকারে বেড়ে যায়। ঋণ প্রবাহ বাড়তে বাড়তে প্রায় ২৫টি ব্যাংকের এডি রেশিও (ঋণ-আমানত অনুপাত) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত সীমা ছাড়িয়ে যায়। ব্যাংকগুলো যাচাই-বাছাই ছাড়াই আগ্রাসীভাবে ঋণ বিতরণ করে নগদ টাকা সব শেষ করে ফেলে। ফলে এখন আর কোন খাতেই ঋণ বিতরণ করতে পারছে না। কৃষি খাতে ঋণ বিতরণেও তার প্রভাব পড়েছে। অন্যদিকে তারল্য সঙ্কটের কারণে অন্যান্য ঋণের সুদের হার অনেক বেড়ে গেছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতির কারণে কৃষি ঋণের সুদ ৯ শতাংশেই অপরিবর্তিত রয়েছে। একারণে ব্যাংকগুলো এখন কৃষি খাতে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। অথচ গত অর্থবছরের চিত্র ছিল পুরো উল্টো।
চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে কৃষি খাতে মোট ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ২০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় ৮টি ব্যাংকের জন্য নির্ধারিত ৯ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা। আর বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকের জন্য এবার ১০ হাজার ৮১০ কোটি টাকা বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।
প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, কৃষিঋণ বিতরণে বরাবরের মত শীর্ষে রয়েছে সরকারি খাতের বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। এ বিষয়ে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী হোসেন প্রধানিয়া বলেন, কৃষি পণ্য উত্পাদন ও বাজারজাত করণের ক্ষেত্রে কৃষক যাতে অর্থের অভাবে পড়ে ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সে বিষয়ে ব্যাংকগুলো এগিয়ে আসছে। আর ব্যাংকগুলোর সহযোগিতার মনোভাব থাকায় এখন কৃষি ঋণ প্রাপ্তি অনেক সহজ হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষি ঋণ বিতরণ বিভাগ বলছে, কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জোর তত্পরতা এবং ব্যাংক গুলোর উদ্যোগের কারণে এটা সম্ভব হয়েছে। অগ্রাধিকার খাত হিসেবে এ খাতে ঋণ বিতরণ বাড়াতে বিভিন্ন সময়ে ব্যাংকগুলোর প্রতি নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। আর ব্যাংকগুলোর দেওয়া লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ঋণ বিতরণ না হলে জরিমানারও ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তফসীলি ব্যাংকগুলোর ২০ হাজার ৪০০ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বাইরে বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক ২০ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি) ৭২০ কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণ করবে বলে কৃষি ঋণ নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের কৃষিঋণ নীতিমালা ও কর্মসূচি অনুযায়ী, শস্য বা ফল চাষের জন্য সর্বোচ্চ আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত কৃষিঋণের ক্ষেত্রে সিআইবি প্রতিবেদন ও তদন্তের প্রয়োজন হবে না।
প্রসঙ্গত, দেশের মোট দেশজ উত্পাদনে (জিডিপি) কৃষি খাতের অবদান প্রায় ১৫ শতাংশ। দেশের প্রায় ৪৩ শতাংশ শ্রমজীবি মানুষ প্রত্যক্ষভাবে এবং ৮৫ শতাংশ জনসাধারণ জীবন-জীবিকা ও কর্মসংস্থানের জন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল।