গার্মেন্টস খাতের শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার নতুন করে মজুরি বোর্ড গঠন করেছে। এ খাতে বিদ্যমান মজুরি ৫ হাজার ৩শ’ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৬ হাজার টাকা করার দাবি জানিয়ে আসছে শ্রমিক নেতারা। এ দাবির সঙ্গে এবার একাত্মতা প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের শ্রমিক অধিকার ফোরামও।
শ্রম অধিকার নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান ইউরোপের ক্লিন ক্লথস ক্যাম্পেইন শ্রমিকদের এ দাবির প্রতি একাত্মতা জানিয়ে তাদের সমর্থনের কথা জানিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে। শুধু তাই নয়, গত সোমবার মজুরি বোর্ডের সভায় মালিকপক্ষের প্রস্তাবিত ৬ হাজার ৩৬০ টাকার প্রস্তাবকে শ্রমিকদের প্রতি ‘চূড়ান্ত অবজ্ঞা’ হিসেবে উল্লেখ করে এর নিন্দাও জানিয়েছে। গতকাল প্রকাশিত নতুন আরেকটি বিবৃতিতে বলা হয়, এটি শ্রমিকের বাঁচার মত মজুরি প্রস্তাব নয়। শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি পেতে বাংলাদেশ থেকে পোশাক ক্রয়কারী ব্র্যান্ডগুলোকে ভুমিকা রাখার কথাও বলা হয়।
এর আগে ক্লিন ক্লথস ক্যাম্পেইনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ হওয়া ওই বিবৃতিতে অতিসত্বর গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বাড়িয়ে ১৬ হাজার টাকা করার আহ্বান জানিয়েছে। একই সঙ্গে শ্রমিকের অধিকার রক্ষায় সরকার ও ব্র্যান্ডগুলোকে ভূমিকা নেওয়ার আহ্বানও জানিয়েছে। শ্রমিক নেতারা বলছেন, এর বাইরেও ওয়ার্কার্স রাইটস কনসোর্টিয়াম (ডব্লিওআরসি), ইন্ডাস্ট্রিঅল গ্লোবাল ইউনিয়ন ও ইউনি গ্লোবাল ইউনিয়নও ১৬ হাজার টাকা মজুরির দাবির প্রতি সমর্থন রয়েছে। ১৬ হাজার টাকা সর্বনিম্ন মজুরির দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই সভা সমাবেশ করে আসছে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন। সংগঠনটি আন্তর্জাতিক শ্রম অধিকার সংগঠন ইন্ডাস্ট্রিঅল গ্লোবাল ইউনিয়নের সঙ্গে সংযুক্ত।
সংগঠনের সভাপতি আমিরুল হক আমিন ইত্তেফাককে বলেন, আমরা ঢাকার এক হাজার গার্মেন্টস শ্রমিকের উপর জরিপ চালিয়ে দেখেছি, কোনোভাবে একটা পরিবার নিয়ে থাকতে হলে ১৮ হাজার টাকা প্রয়োজন। দেশের বাস্তবতা ও সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে এটিকে ১৬ হাজার টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছি। এতে ইন্ডাস্ট্রিঅল গ্লোবাল ইউনিয়নের সমর্থন আছে। এর সঙ্গে ইউনি গ্লোবাল ইউনিয়ন, ওয়ার্কার্স রাইটস কনসোর্টিয়াম ও ক্লিন ক্লথস ক্যাম্পেইনের সমর্থনও আছে।
মজুরি বোর্ড এ পর্যন্ত তিনটি সভা করেছে। সর্বশেষ বৈঠক হয়েছে গত সোমবার। ওই সভায় কারখানা মালিকপক্ষ বিদ্যমান ৫ হাজার ৩শ’ টাকা থেকে বাড়িয়ে মাত্র ৬ হাজার ৩৬০ টাকার প্রস্তাব দিয়েছ। অন্যদিকে শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি শামসুন্নাহার ভূঁইয়া প্রস্তাব দিয়েছেন ১২ হাজার ২০ টাকার। এ নিয়ে বেশিরভাগ শ্রমিক সংগঠনের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। তারা মালিক ও শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধির এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে দ্রুত ১৬ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরি ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন।
ক্লিন ক্লথস ক্যাম্পেইনের গতকালের বিবৃতিতে বলা হয়, মজুরি বোর্ডে ‘বিতর্কিতভাবে’ সরকার কর্তৃক শ্রমিক প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বেশিরভাগ শ্রমিক সংগঠন ১৬ হাজার টাকা মজুরির দাবিতে একমত হলেও তিনি শ্রমিকের পক্ষ থেকে ১২ হাজার ২০ টাকার প্রস্তাব করেন।
অবশ্য বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান মনে করেন, শ্রমিকদের প্রয়োজন ও শিল্পের সক্ষমতা অনুযায়ী মজুরি ঘোষণা করা যৌক্তিক হবে। এছাড়া মজুরি বোর্ড গঠনের পর ছয় মাস পার হতে চললেও তিনি মনে করেন, এর পরও মজুরি ঘোষণায় আরো তিন মাস সময়ের কথা আইনেই বলা আছে।