আসন্ন ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। গত দুই দিনের ব্যবধানে আরেক দফা বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির দর। প্রতি কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে গতকাল রাজধানীর খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। আর আমদানিকৃত পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৪২ থেকে ৪৫ টাকায়। সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসেবেও দাম বাড়ার এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। সরকারের এ সংস্থাটির হিসেবেই মাত্র এক মাসের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের দাম ২৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ আর আমদানিকৃত পেঁয়াজ ১৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ বেড়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলেছেন, দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ কম। এছাড়া ভারতে বৃষ্টির জন্য পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে। এতে ভারতের ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের রপ্তানিমূল্য বাড়িয়েছে। এসব কারণে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে।
এদিকে ঈদে চাহিদা থাকায় পেঁয়াজের আমদানি বেড়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে ভারত থেকে প্রতি টন পেঁয়াজ ২০৫ ডলারে আমদানি করা হচ্ছে। এতে প্রতি কেজি পেঁয়াজের আমদানি খরচ পড়ছে ১৮ টাকা। এরসাথে অন্যান্য খরচ মিলিয়ে বেনাপোল স্থলবন্দর পর্যন্ত পৌঁছাতে প্রতি কেজি পেঁয়াজের খরচ পড়ছে ২০ থেকে ২২ টাকা। পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩১ থেকে ৩৫ টাকা। রাজধানীর খুচরা বাজারে আমদানিকৃত এই পেঁয়াজই বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। এছাড়া দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ কম। দেশি পেঁয়াজের মৌসুম শুরু হবে ডিসেম্বরে। ফলে দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। গতকাল রাজধানীতে পেঁয়াজের পাইকারী বাজার শ্যামবাজারের প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৪৬ থেকে ৪৭ টাকা ও আমদানিকৃত পেঁয়াজ মানভেদে ৩১ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হয়।
হাকিমপুর (দিনাজপুর) সংবাদদাতা জাহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, গত কয়েক দিনে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি বেড়েছে। আর পেঁয়াজের দামও কেজিতে এক/দুই টাকা কমেছে। তাহলে খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে কেন?
হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারক হারুন উর রশীদ ইত্তেফাককে বলেন, প্রায় এক সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি পেঁয়াজের পাইকারি দর ছিল ২৮ টাকা। এখন বিক্রি করছি ২৫ টাকা। আরেক আমদানিকারক মোবারক হোসেনও একই কথা জানিয়ে বলেন, প্রতিদিন এই স্থল বন্দর দিয়ে ৭০ থেকে ৮০টি পেঁয়াজের ট্রাক খালাস করা হচ্ছে। তিনি বলেন, সারাদেশে চালকের লাইসেন্স ও ফিটনেস সনদ পরীক্ষা করার কারণে তুলনামূলক ট্রাক কম পাওয়া যাচ্ছে। এতে পণ্যের পরিবহন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এর চাপ পড়ছে পণ্যের দামের ওপর। এছাড়া শুকিয়ে ও নষ্ট হওয়ার কারণেও পেঁয়াজের ঘাটতি হয়ে থাকে।
দেশে প্রতি বছর পেঁয়াজের চাহিদা ১৯ লাখ টন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, দেশে বছরে ১৮-১৯ লাখ টন পেঁয়াজ উত্পাদিত হয়। এছাড়া ভারত থেকে ৭-৮ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। এ হিসেবে দেশের পেঁয়াজের কোনো সংকট নেই।
গতকাল রাজধানীর কাওরান বাজারে বাজার করতে আসা ক্রেতা নাজমুল আলম বলেন, কোরবানির ঈদকে উপলক্ষ করে একটি অসাধু চক্র পেঁয়াজের দাম বাড়িয়েছে। সরকার বাজারে কঠোর নজরদারি করলে দাম বাড়ত না।
তবে গত রবিবার সচিবালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সাংবাকিদের বলেছেন, ভারতে অতিবৃষ্টির কারণে অনেক পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া সামনেই ঈদ। আশা করছি ঈদের পর পেঁয়াজের দাম কমে যাবে।