জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির পদে ফের আসীন হয়েছে রাশিয়া। দেশটি যাতে পরিষদের নেতৃত্বে আসতে না পারে, সেজন্য যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য সদস্যদের প্রতি বাধা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিল ইউক্রেন। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি। কারণ, এটি একটি পালাক্রম প্রক্রিয়া। পরিষদের ১৫ সদস্যের প্রত্যেকেই এক মাসের জন্য কাউন্সিলের সভাপতিত্ব গ্রহণ করার নিয়ম রয়েছে। এর আগে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে হামলা শুরুর সময়ও সভাপতি ছিল রাশিয়া। খবর বিবিসি ও আলজাজিরার।
আন্তর্জাতিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানার মুখে থাকা প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের রাশিয়ার হাতেই গেলো নিরাপত্তা পরিষদের নেতৃত্ব। গত মাসে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত পুতিনের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করে। এদিকে, দায়িত্ব গ্রহণ করায় এটিকে রুশ প্রেসিডেন্টের ‘এপ্রিল ফুল দিবসের সর্বকালের সবচেয়ে জঘন্ন তামাশা’ বলে অভিহিত করেছে ইউক্রেন। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা বলেছেন, নিরাপত্তা কাউন্সিলের কাজের ধরনে ভুল আছে। আর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা মাইখাইলো পোডোলিয়াক বলেছেন, এই পদক্ষেপ ‘আন্তর্জাতিক আইনের আরেকটি ধর্ষণ…। কারণ, যে দেশ আক্রমনাত্মক যুদ্ধ চালাচ্ছে, মানবিক ও ফৌজদারি আইন লঙ্ঘন করছে, জাতিসংঘের সনদকে ধ্বংস করছে, পারমাণবিক নিরাপত্তাকে অবহেলা করছেুসেই দেশ বিশ্বের প্রধান নিরাপত্তা সংস্থার নেতৃত্বে আসতে পারে না।
গত বছর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার আগ্রাসন ঠেকাতে যথেষ্ট পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগ তুলেছিলেন নিরাপত্তা পরিষদের বিরুদ্ধে। একইসঙ্গে তিনি সংস্থাটিতে সংস্কারেরও আহ্বান জানিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, রাশিয়াকে সদস্য পদ থেকে বাদ দেওয়ার আহ্বানও জানান জেলেনস্কি। তবে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তাদের হাত বাঁধা ছিল। কারণ, জাতিসংঘের সনদ অনুযায়ী কোনো স্থায়ী সদস্যকে বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই। এদিকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের একটি ডিক্রির উদ্ধৃতি দিয়ে জইক পোর্টালের খবরে বলা হয়, রাশিয়া বাহিনীতে বসন্তের নিয়মিত নিয়োগ শুরু হয়েছে। জেনারেল স্টাফ রিয়ার অ্যাডমিরাল ভ্লাদিমির সিমলিয়ানস্কির মতে, ৭ লাখ সম্ভাব্য নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে প্রায় ১ লাখ ৪৭ হাজার জনকে ডাকা হয়েছে। তবে এদের কাউকেই যুদ্ধ করতে ইউক্রেনে পাঠানো হবে না বলেও জোড় দেন তিনি।
এই সপ্তাহেই যুদ্ধের একটি নতুন পর্যায় শুরু হতে পারে। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী গত সপ্তাহে এপ্রিলের শুরুতে বসন্তের পাল্টা আক্রমণ শুরুর আভাস দিয়েছিলেন। ওয়াশিংটন-ভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক দ্য ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার মনে করে, ইউক্রেনকে যুদ্ধের ময়দানের ভালো ফল পেতে একটি নয়, সিরিজ পাল্টা আক্রমণ শুরু করতে হবে। এছাড়া, পুতিনকে সমঝোতায় আসতে রাজি হয় এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে।
লন্ডনের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক চ্যাথাম হাউসের রাশিয়া ও ইউরেশিয়া প্রোগ্রামের পরিচালক জেমস নিক্সি বলেছেন, শীঘ্রই যুদ্ধে জিততে পারবেন না বুঝতে পেরে পুতিন কিয়েভের প্রতি পশ্চিমা সমর্থন শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ করার আশায় লড়াইকে দীর্ঘ করার চেষ্টা করছেন। অবশ্য, ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনী শক্তিশালী অস্ত্র প্রাপ্তির মধ্য দিয়েই বসন্ত মৌসুম শুরু করেছে। এরই মধ্যে জার্মানি, পোল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের ট্যাঙ্ক পেয়েছে কিয়েভ।
পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, ১০০টি রোসোমাক বহুমুখী সাঁজোয়া যানের অর্ডার দিয়েছে ইউক্রেন। এসব যান ফিনল্যান্ডের লাইসেন্সের অধীনে পোল্যান্ডে তৈরি করা হবে।