স্মার্ট বাংলাদেশ করতে গিয়ে যেন মানবতা হারিয়ে না যায় সে ব্যাপারে সবাইকে খেয়াল রাখার আহ্বান জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। বিশ্বায়নের যুগে মানুষ যেন মানবিক থাকে, পারিবারিক বন্ধন যেন ভালো থাকে সেটা এ বিষয়ে লেখালেখিতে তুলে ধরার আহ্বান জানিয়েছেন মন্ত্রী।
‘স্বপ্নের স্মার্ট বাংলাদেশ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। মঙ্গলবার (৩০ মে) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মিলনায়তনে বইটির প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ চেয়ারম্যান ও ঢাবি প্রকৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. হাফিজ মো. হাসান বাবু বইটি লিখেছেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি তথ্যমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশের চারটি মূল প্রতিপাদ্যের ওপর ভিত্তি করে এই গ্রন্থ। লেখককে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাই। আজকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে, এর সুবিধা দেশের মানুষ পেয়েছে। করোনায় সব থমকে গেলেও দেশের কার্যক্রম চলমান ছিল। প্রশাসন চলেছে, শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া চালিয়ে গেছে। এসবই সম্ভব হয়েছে ডিজিটালের কারণে। এখন গ্রামেও ব্রডব্র্যান্ড সংযোগ আছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলছি। বিশ্বায়নের এই যুগে সবাই ছুটছে। কেউ খ্যাতির জন্য, বিত্তের জন্য, নানা কারণে ছুটছে।’
বিশেষ অতিথি সাবেক মুখ্যসচিব ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী বইটির লেখককে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, আসলে এটি একটি বড় কাজ করেছেন। এই বইয়ে অনেক বিষয় সন্নিবেশিত করেছেন। স্বপ্নের পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন হয়েছে, এখন স্বপ্নের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে কাজ করতে হবে। আগামীতে যে নির্বাচনি ইশতেহার সেখানেও সেটি ফুটে উঠবে। প্রধানমন্ত্রী যখন ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলেছেন সেটিকে অনেকেই বলেছেন- এটা আবার কী! পদ্মা সেতুর কথা যখন বলেছেন সবাই বলেছে- এটি অসম্ভব। আর এখন সেই সেতু আমরা পার হয়ে যাই। প্রধানমন্ত্রীর চিন্তা এই স্মার্ট বাংলাদেশ হবে, আমরা বিশ্বাস করি। স্মার্ট বাংলাদেশ এটি বোঝার বিষয় আছে, সাধারণ মানুষকে এটি বুঝতে হবে। আমাদের শিক্ষার্থীরা গ্রামে যখন যাবে তাদের মাধ্যমেও এই তথ্য সাধারণ মানুষ পেতে পারে। এই বিষয়ে জানানো দায়িত্ব আমাদের সবার। আমরা স্মার্ট বাংলাদেশের যে স্বপ্নটি দেখছি এটি রাতে ঘুমিয়ে দেখা স্বপ্ন নয়, একটি বাস্তবায়নযোগ্য স্বপ্ন।’
বিশেষ অতিথি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, ‘অনেক কথাই উঠে এসেছে এই বইয়ে। আমরা যেটি চিন্তা করি সেটি আপনি বইয়ে তুলে ধরেছেন। আপনার মতো স্মার্ট মানুষ পেয়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার ধন্য। রূপপুরে যখন পারমাণবিক কেন্দ্র শুরু হয় তখন অনেকেই যারা প্রকৌশলী নয় তারা প্রকৌশলী হয়ে গিয়েছিল, যারা পরিবেশবিদ নয় তারা পরিবেশবিদ হয়ে নানা জ্ঞান দিয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশের কথা প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন, ২০৪১ সালের নাগরিকরা স্মার্ট নাগরিক হবেন। এটি গড়ে তুলতে আমাদের প্রধানমন্ত্রী উপকরণগুলো নিয়ে কাজ করছেন। এই বইয়ে সেসব তুলে ধরা হয়েছে। আগামীতে যে নির্বাচন হবে সেই নির্বাচনে যদি শেখ হাসিনার সরকারকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আনতে পারি তাহলে প্রধানমন্ত্রীর যে রোডম্যাপ, যে পরিকল্পনা সেটি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘এই বইটি খুবই সময়োপযোগী। এরকম একটি বই খুবই দরকার ছিল। ডিজিটাল বাংলাদেশ শেষ করে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিলেন স্মার্ট বাংলাদেশের। স্মার্ট বাংলাদেশের যে চারটি ভিত্তি ধরা হয়েছে এই সব বিষয়ে কিন্তু বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে বইয়ে। নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বাবাহারা মাহারা প্রায় সকল স্বজনহারা শেখ হাসিনা এদেশে ফিরে ১৯৮১ সালে দেশ গড়ার কাজে হাত দিলেন। সেই বাংলাদেশ আজ সারা বিশ্বের কাছে বিস্ময়। শেখ হাসিনার নেতৃত্ব, উনার উদ্ভাবনী আইডিয়ার কারণে সারা বিশ্বের মানুষের আরও আগ্রহ বাড়ে এই বাংলাদেশ বিষয়ে জানতে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কথা বলছি, সেখানে যে ধরনের চ্যালেঞ্জ সেটি মোকাবেলায় সরকারের সাথে জনগণকেও কাজ করতে হবে, জানতে হবে। এই বইয়ে একটি অধ্যায়ে সাইবার সন্ত্রাসের বিষয় আছে। আমরা নানারকমভাবে এর শিকার হই বা হচ্ছি। এ বিষয়েও আমাদের সচেতন হতে হবে।’
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সাদেকুল আরেফিন বলেন, ‘বইটিতে যতটুকু দেখেছি ২৩টি অধ্যায় লিখেছেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পনা নীতি ও বাস্তবায়ন তুলে ধরেছেন। জাতির পিতার সমগ্র বাঙালিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন, একটি স্বাধীন রাষ্ট্র উপহার দিয়েছেন। জাতির পিতার অসমাপ্ত কাজ এগিয়ে বাঙালি জাতিকে আরও সম্মানিত মর্যাদায় নিয়ে গেছেন তারই কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। এই বইটি বর্তমান আগামী প্রজন্মের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, বইটির মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ নিয়ে আরও ধারণা পাবে।’
ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি নিজামুল হক ভূইয়াসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।