• মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:০৩ পূর্বাহ্ন

ভুল ট্রেনে চড়ে ঢাকায় অঞ্জনা, সাত বছর পর ৯৯৯ এর কলে উদ্ধার

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : বৃহস্পতিবার, ১ জুন, ২০২৩

ভুল ট্রেনে চড়ে ঢাকায় অঞ্জনা, সাত বছর পর ৯৯৯ এর কলে উদ্ধারনির্যাতনের শিকার অঞ্জনা ও বাসার গৃহকর্ত্রী

সাত বছর আগে ভুল ট্রেনে চড়ে চেপে বসেছিলেন শিশু অঞ্জনা। কিন্তু সেই ট্রেন তাকে ঢাকায় নিয়ে আসে। এরপর ঢাকায় এক গৃহকর্ত্রীর বাসার রান্নাঘরে সাত বছর ধরে বন্দী জীবন চলছিল। অবশেষে এক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সহযোগিতায় মিলেছে তার মুক্তি। সেই অঞ্জনাকে জাতীয় জরুরী সেবা-৯৯৯ এর কলে উদ্ধার করেছে পুলিশ। তবে অঞ্জনার শরীর জুড়ে শুধু আঘাতের চিহ্ন আর ক্ষত। আর এই দীর্ঘসময়ে অঞ্জনা তার বাড়ী যাওয়ার পথটুকুও ভুলে গেছে।

বুধবার রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ডি ব্লকের ২ নম্বর রোডের একটি বাসা থেকে উদ্ধার করে ভাটারা থানা পুলিশ।

যেভাবে অঞ্জনার মুক্তি মিললো:

পুলিশ জানিয়েছে, রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাসার তিন তলায় এরিক ও শর্মি দম্পতির বাসায় সাত বছর ধরে আটকে রাখা হয়েছিল অঞ্জনাকে। তাকে ঠিকমতো খাবারও দেয়া হতো। কোন ভুলে হলেই কাটা চামচ, তালা ও ভারী জিনিসপত্র দিয়ে মারধর করা হতো। খাবার চাইলে আবারও চলতো মারধর। এভাবে দীর্ঘদিন ধরেই চলছিল এমন কাহিনী। কিন্তু অঞ্জনাকে নিযাতনের দৃশ্যটি ওই ভবনের পাশের ভবনের এক বিশ্ববিদালয় ছাত্র সজল শেখের নজরে আসে। তার কাছে অঞ্জনা সাহায্য চান। প্রথম দিকে সজল গুরুত্ব দেননি। পরে একদিন তার ওপর হওয়া নির্যাতনের কথা তুলে ধরে উদ্ধারের আকুতি জানান। এরপর সজল বিষয়টি তার বাসার অন্যদের ও বাড়ির মালিককে জানান। আজ বুধবার ভোর ৫টায় পড়তে উঠে সজল দেখেন অঞ্জনা তখনও কাজ করছে। কারণ বাসায় অতিথি আসবে। তখনই জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ কল করেন এবং বিষয়টি পুলিশকে অবগত করেন। এরপর পুলিশ গিয়ে দুই ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে সেই বাসা থেকে অঞ্জনা উদ্ধার করে।

মেয়েটির সাহায্যে এগিয়ে আসা সজল বলেন, মানবিক কারণে মেয়েটিকে উদ্ধারে এগিয়ে এসেছি। বিষয়টি ৯৯৯ কে জানালে সেই বাসায় পুলিশ যায়। কিন্তু বাসার ‍গৃহকর্ত্রী প্রথমে অস্বীকার করেন। পরে মেয়েটি চিৎকার দিয়ে উঠলে তাকে পুলিশের সামনেই মারধর করা হয়। তবে গৃহকর্ত্রী শর্মির দাবি, তিনি মেয়েটিকে কখনোই মারধর করতেন না।

ভাটারা থানার ওসি মো. আসাদুজ্জামান জানান, বুধবার ভোরে ৯৯৯ এ কল পেয়ে তারা মেয়েটিকে উদ্ধার করেন। তবে মেয়েটি তার ঠিকানা ভালভাবে বলতে পারছে না। ঠিকানা কখনো সুনামগঞ্জ আবার কখনো হবিগঞ্জ। বাবা মারা গেছে সেটি তার মনে আছে কিন্তু পরিবারের কারো ঠিকানা জানা নেই। তবুও তারা খোঁজ করছেন।

তিনি বলেন, বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি। অভিযোগ পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

যেভাবে ভুল ট্রেনে ঢাকায় আসে অঞ্জনা:

অঞ্জনার গ্রামের বাড়ী সিলেটের ভৈরবে। কিন্তু আজ থেকে সাত বছর আগে অঞ্জনা ট্রেনে চড়ে ভেবেছিল ট্রেনটি আবারও তাকে এসে নামিয়ে দেবে। কিন্তু সেই ট্রেনতাকে ঢাকায় নিয়ে আসে। পরে সে নিজেকে ঢাকায় আবিস্কার করে। সেদিন মন খারাপ করে অঞ্জনা কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ছিল। ওই সময় শর্মী নামে এক নারী তাকে বাসায় পৌছে দেয়ার কথা বলে আরেক নারীর কাছে বিক্রি করে দেন। এরপর থেকে সেই বাসার রান্নাঘরেই সাত বছর কেটে তার।

নির্মম অত্যাচারের বর্ননা অঞ্জনা মুখে:

অঞ্জনা বলেন, এক বেলা খাবার দিলে অন্য বেলা দিতো না। দিন রাত কাজ করাত। কোনো ভুল হলেই কাটা চামচ, খুন্তি, রুটি বানো বেলন, চাকু দিয়ে আঘাত করা হত। এমন কি তালা দিয়ে আঘাত করে সামনের দাত ভেঙ্গে দিয়েছে।

তার পা ফুলে গেছে, বাম হাতে বুড়ো আঙ্গুলের ওপর দগদগে রক্তাক্ত ক্ষতে এখনো আছে। সে অসুস্থ হলেও তাকে কোন ওষুধ দেয়া হতো না। এমনকি বাসা বাহিরেও আসতে দিতো না বাসার লোকজন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ