সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় মাহবুবা রহমান আঁখি ও তার সন্তানের মৃত্যুর ঘটনার বিচার ও ক্ষতিপূরণসহ চার দফা দাবি জানিয়েছে আঁখির সহপাঠীরা। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এসব দাবি না মানা হলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ঘেরাওয়ের ঘোষণা দিয়েছে তারা।
সোমবার (১৯ জুন) রাজধানীর গ্রীণ রোডে সেন্ট্রাল হাসপাতালের সামনে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন থেকে এই আল্টিমেটাম দেওয়া হয়।
শিক্ষার্থীরা বলেন, মাহবুবা রহমান আঁখি ও তার নবজাতক শিশুর মৃত্যু ভুল চিকিৎসায় নয়। এটি একটি হত্যাকাণ্ড। এর মাধ্যমে একটি পরিবারের সকল আশা-প্রত্যাশা ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। অনাগত সন্তানের আগমনে আনন্দের পরিবর্তে পরিবারটি শোকের সাগরে ভাসছে। এর দায় সেন্ট্রাল হাসপাতালসহ দেশের সমগ্র স্বাস্থ্য ব্যবস্থার।
মানববন্ধনে ঢাকা কলেজের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান বলেন, আঁখির মৃত্যুর জন্য দায়ী সেন্ট্রাল হাসপাতালের সবাইকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এর আগেও তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে ভুল চিকিৎসার মাধ্যমে হত্যা করেছিল। তখন নামেমাত্র ওই হাসপাতালের পরিচালককে বরখাস্ত করা হয়। এর আর কোনো বিচার হয়নি। তখন যদি এর সঠিক বিচার হতো, হাসপাতাল বন্ধ করা হতো তাহলে আজকের এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না।
নানা হুমকি দেওয়া হচ্ছে অভিযোগ করে নাজমুল হাসান বলেন, আঁখির স্বামীকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। আজকের মধ্যে এই হাসপাতালের বন্ধ করতে হবে। অন্যথায় আমরা কঠোর কর্মসূচির দিকে যাব। তারা পেশিশক্তির হুমকি দিচ্ছে। কিন্তু ছাত্রদের শক্তি পেশিশক্তির থেকে অধিক।
ইডেনের শিক্ষার্থী তাসনুমা পিয়া বলেন, ‘আমরা আমাদের বোনকে হারিয়েছি। আমাদের দাবি যারা এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত তাদের শাস্তির আওতায় আনা হোক। অন্যথায় আমরা কঠোর আন্দোলনে যাব।’
এ সময় মাহবুবা রহমান আঁখির সহপাঠীদের পক্ষ থেকে চার দফা দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হলো:
১. ভুল চিকিৎসার মাধ্যমে মাহবুবা রহমান আঁখি ও তার নবজাতককে হত্যাকারী ডা. সংযুক্তা সাহা এবং জড়িত সকল চিকিৎসকের লাইসেন্স বাতিলসহ বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
২. সেন্ট্রাল হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিল এবং হাসপাতালটির পরিচালককে গ্রেফতার করতে হবে।
৩. দেশের সরকারি-বেসরকারি সকল হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত মনিটরিং সেল গঠন করতে হবে।
৪. মাহবুবা রহমান আঁখির পরিবারকে ২ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এসব দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানায় শিক্ষার্থীরা। অন্যথায় আগামীকাল আবার সেন্ট্রাল কলেজের সামনে অবস্থান এবং পরবর্তীতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ঘেরাওয়ের ঘোষণা দেয় তারা।
গত ৯ জুন প্রসবব্যথা উঠলে স্ত্রী মাহবুবা রহমান আঁখিকে সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি করেন স্বামী ইয়াকুব আলী। ডা. সংযুক্তা সাহার অধীনে ভর্তি করা হলেও সেই সময়ে ওই ডাক্তার হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন না। ওই ডাক্তার উপস্থিতি ছাড়া এবং এবং রোগীর কোনোরকম চেক-আপ না করে ডেলিভারির কাজ শুরু করে দেন কয়েকজন ডাক্তার ও সহকর্মীরা। পরে আঁখি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এ অবস্থার মধ্যে নবজাতকের হার্টবিট বন্ধ হয়ে আইসিউতে মারা যায়।
ওই ঘটনায় গত বুধবার ধানমন্ডি থানায় মোট ছয়জনের নাম উল্লেখসহ পাঁচ থেকে ছয়জনকে অজ্ঞাত আসামি করে ‘অবহেলাজনিত মৃত্যুর’ অভিযোগ এনে একটি মামলা করা হয়।
মামলায় হওয়ার পর অভিযুক্ত দুই চিকিৎসক ডা. শাহজাদী ও ডা. মুনাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারা নিজেদের দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- ডা. মিলি, সহকারী জমির, এহসান ও হাসপাতালের ম্যানেজার পারভেজ।
ঘটনার পর পার্শ্ববর্তী ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন মাহবুবা রহমান আঁখি। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল না ফেরার দেশে চলে যান আঁখিও।