ক্যালশিয়াম, দেহের অন্যতম প্রয়োজনীয় একটি খনিজ। তবুও খনিজ সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার দিকে আমাদের তেমন একটা ঝোঁক নেই। ফলে বয়স একটু বাড়লেই একাধিক জটিলতা পিছু নেয়। অনেকেই হাঁটু-কোমরে ব্যথা থেকে শুরু করে হাড়ের বিভিন্ন সমস্যায় আক্রান্ত হন। তাই সাবধান থাকা ছাড়া কোনো কোনো গতি নেই।
মুশকিল হলো, ক্যালশিয়াম ঘাটতির কথা উঠলেই সবাই শুধু হাড়ের সমস্যা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। তবে বিষয়টা তো একদমই তেমন নয়। বিশেষজ্ঞদের কথায়, শরীরে ক্যালশিয়ামের মাত্রা প্রয়োজনের তুলনায় কম থাকলে হাড়ের ক্ষয়ক্ষতি হয় ঠিকই, তবে হাড় ছাড়াও দেহের অন্যান্য অঙ্গের উপরও এই সমস্যা প্রভাব ফেলে। তাই এই খনিজের ঘাটতি নিয়ে অবশ্যই সচেতন থাকা দরকার।
তাই আর দেরি না করে বরং দেহে ক্যালশিয়ামের ঘাটতির একাধিক লক্ষণ সম্পর্কে জেনে সঠিক সময়ে ব্যবস্থা নিন। এই কাজটা করতে পারলেই একাধিক জটিল-কুটিল রোগব্যাধির হাত থেকে বাঁচতে পারবেন।
পেশিতেও আঘাত হানে সমস্যা
শরীরে প্রয়োজনের তুলনায় ক্যালশিয়ামের মাত্রা কম থাকলে পেশির সমস্যাও দেখা দিতে পারে। তাই এই লক্ষণগুলো দেখলেই সাবধান হন, যেমন- পেশিতে ব্যথা ও ক্র্যাম্প ধরা, হাঁটাচলার সময় থাইতে এবং হাতে ব্যথা, এমনকি হঠাৎ করেই হাত, পা অসাড় হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
তবে এই সমস্যাগুলো চিরস্থায়ী হয় না। একটু কাজকর্ম করার পরই লক্ষণ কমে যায়। আরও যে লক্ষণ দেখা যায়-
সারাদিন ক্লান্তি
কাজ করার পর ক্লান্তি আসা স্বাভাবিক। কিন্তু অনেকে এমন কিছু পরিশ্রম না করেও সারাদিন ক্লান্ত থাকেন। তাদের এনার্জির কাঁটা সবসময়ই থাকে নীচের দিকে। এমনকি তারা কোনো কাজে ঠিকমতো মন দিতেও পারেন না। এছাড়াও রাতে তাদের দুই চোখের পাতা এক না হতেও পারে।
তাই এই ধরনের সমস্যা একসঙ্গে দেখা দিলে বুঝবেন শরীরে রয়েছে ক্যালশিয়ামের ঘাটতি। তাই চটজলদি চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ফেলাটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
নখ ও ত্বকেও পিছু নিতে পারে সমস্যা
শরীরে ক্যালশিয়ামের ঘাটতি থাকলে নখ ও ত্বকেও জটিলতা দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে শরীরে যেসব লক্ষণ দেখা যায় সেগুলো হলো- শুষ্ক ত্বক, ভঙ্গুর নখ, শুষ্ক চুল, চুল উঠে যাওয়া, একজিমা, এমনকি সোরিয়াসিসও দেখা দিতে পারে।
বিপদের নাম অস্টিওপোরোসিস
হাড়ের শক্তি বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন হয় ক্যালশিয়ামের। এই খনিজের অভাব হলেই ধীরে ধীরে হাড় হয়ে যায় দুর্বল। এই সমস্যার নামই হলো অস্টিওপোরোসিস। এক্ষেত্রে সঠিক সময়ে ব্যবস্থা না নিলে হাড় ভঙ্গুর হয়ে যায়। এমনকি অল্প আঘাতেও রোগীর হাড় ভেঙে যেতে পারে। তাই সাবধান হওয়া ছাড়া আর অন্য কোনো গতি নেই।
এছাড়া অনেক সময় ক্যালশিয়ামের ঘাটতি থেকে অস্টিওপেনিয়ার মতো অসুখও হতে পারে। এই অসুখ হাড়ের মারাত্মক ক্ষতি করে। তাই যেভাবেই হোক হাড়কে সুরক্ষিত রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালশিয়াম খেতেই হবে।
ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়ে দাঁত
ক্যালশিয়ামের অভাব থাকলে তার প্রভাব সরাসরি গিয়ে পড়ে দাঁতের উপর। এক্ষেত্রে এই সমস্যাগুলি দেখা দেয়ার আশঙ্কা থাকে, যেমন- দাঁতের ক্ষয়, ভঙ্গুর দাঁত, মাড়ির সমস্যা, দুর্বল দাঁত ইত্যাদি। এছাড়া গবেষণা বলছে, মনের উপরও প্রভাব ফেলে ক্যালশিয়ামের ঘাটতি। এক্ষেত্রে অবসাদের মতো সমস্যা দেখা দেয়।