বিটিআই আমদানিতে প্রতারণায় অভিযুক্ত মার্শাল অ্যাগ্রোভেটের কীটনাশকেই চলছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির মশা মারার ফগিং। অথচ জালিয়াতি করে সিঙ্গাপুরের নামে চীন থেকে আনা বিটিআইয়ের ঘটনায় প্রতারণার সব প্রমাণসহ প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে কয়েকটি। সরেজমিন অনুসন্ধানে পাওয়া গেল, কালো তালিকাভুক্ত করে আবার সেই প্রতিষ্ঠানের আনা আরেক কীটনাশক দিয়ে ফগিং চলছে দুই সংস্থার ওয়ার্ডগুলোয়। তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার প্রকোপ সামাল দিতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) উদ্যোগে সিঙ্গাপুর থেকে জৈব কীটনাশক বা বিটিআই আমদানির প্রতিটি ধাপে বেরিয়ে আসছে একের পর এক জালিয়াতির তথ্য। সিঙ্গাপুরের যে প্রতিষ্ঠান থেকে এ পণ্য এনেছেন বলে দাবি করেছিলেন আমদানিকারক, সেই প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে জানিয়েছে বাংলাদেশে আনা বিটিআই তাদের উৎপাদিত নয়। ওই প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ও বিটিআই বিশেষজ্ঞ পরিচয় দিয়ে লি শিয়াং নামে যে চীনা নাগরিকের মাধ্যমে এ পণ্য আমদানি করা হয়েছে তার সঙ্গে কোনো সম্পর্কও নেই বলে দাবি করেছে সিঙ্গাপুরের ওই প্রতিষ্ঠান। এ ঘটনায় চীনের ওই নাগরিকসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। একই সঙ্গে মশা নিধনে ব্যাকটেরিয়া আমদানিতে উত্থাপিত জালিয়াতির অভিযোগ, টেন্ডার প্রক্রিয়া, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণসহ সার্বিক বিষয়ে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে ডিএনসিসি। এ ছাড়া বিটিআই আমদানির কাগজপত্রে চীনের ওই নাগরিকের সঠিক নাম পর্যন্ত ব্যবহার হয়নি। একই সঙ্গে জালিয়াতি করা মার্শাল অ্যাগ্রোভেটের দেওয়া ওষুধ ব্যবহার করছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। উত্তর সিটি করপোরেশন ওই কোম্পানির দেওয়া বিটিআই প্রয়োগ বন্ধ রাখলেও বিকালে ফগিং করা ওষুধ (মিথিন) ব্যবহার করছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। যদিও মশার বিস্তার কমছে না। তবে কীটনাশক ও প্রয়োগপদ্ধতি কোনোটাই বৈজ্ঞানিক নিয়মে হচ্ছে না। এ বিষয়ে কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. জি এম সাইফুর রহমান বলেন, ফগিংয়ের মাধ্যমে ২০ শতাংশ মশা মারা সম্ভব নয়। কারণ তাপমাত্রা ও বাতাসের আর্দ্রতা। একই সঙ্গে মশক কর্মীদের প্রশিক্ষণ। যেহেতু ফগিংয়ে কম মরে সেখানে ইউআরভি ফর্মুলার মাধ্যমে অ্যাডাল্ট মশা মারতে হবে। এটা খুবই কার্যকর। তবে বিটিআইও কার্যকর। কিন্তু সিটি করপোরেশনের আনা বিটিআইয়ের জালিয়াতির কারণে সমস্যা হয়েছে। তিনি বলেন, যেহেতু ডেঙ্গুরোগী শুধু সিটি করপোরেশনের ভিতরে আবদ্ধ নয়, দেশে ছড়িয়েছে; সেজন্য সরকারকে এখানে উদ্যোগ নিতে হবে। ডেঙ্গু মশা নিয়ন্ত্রণে ডাক্তারের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে যারা মশা নিয়ে কাজ করেন তাদের দায়িত্ব দিতে হবে। তারা মশা পরীক্ষা করে ভাইরাস আছে কি না দেখবেন এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন। এ প্রসঙ্গে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা বলেন, ‘দীর্ঘদিন থেকে আমরা এই কীটনাশক ব্যবহার করে আসছি। যেহেতু আগের চুক্তি ছিল, নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত তাদের ওষুধ স্প্রে করব। তার পরও আমরা এ বিষয়ে একটা সভা করব। সভায় বিস্তারিত আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ওষুধ আমরা এককভাবে স্প্রে করতে পারি না। সেটা যাচাইবাছাই করে দেখা হয়। একই সঙ্গে চারটি সংস্থা ওষুধ টেস্ট করে ফলাফল পেয়ে আমরা আমদানি করি। সে ক্ষেত্রে জালিয়াতির আশঙ্কা নেই।’ এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘আমরা কারও মাধ্যমে (কীটনাশক) আমদানি করি না। ২০১৯ সালের পর থেকে আমরা সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী উৎপাদনকারীর কাছ থেকে সরাসরি আমদানি করি। সেই প্রতিষ্ঠানও কিন্তু সরকার কর্তৃক নির্ধারিত। সেখানে সব অনুমতি যেমন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অনুমতি, কীটনাশক যারা নিয়ন্ত্রণ করেন তাদের অনুমতি নেওয়া রয়েছে এবং আমাদের কীটনাশক কমিটি আমাদের যে কীটনাশক নির্ধারণ করে দেয় এর বাইরে আমরা কোনো কীটনাশক ব্যবহার করি না। আমরা শুধু (আমদানিকৃত কীটনাশকের) মিশ্রণটা উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে করে থাকি। উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে যথাযথভাবে এবং আমাদের নির্ধারিত মূল্যের চাইতে কম মূল্যে তারা কাজ পেয়েছে। আমাদের সঙ্গে তাদের যে চুক্তি এখন পর্যন্ত আমরা তার কোনো ব্যত্যয় লক্ষ্য করিনি। সুতরাং অন্য কোথাও ঘটনা ঘটলেও আমাদের এখানে এ ধরনের (ঘটনা ঘটানোর) কোনো সুযোগ নেই।’