• মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম:

ভোজ্যতেল রপ্তানিতে হোঁচট, এক বছরে কমেছে ৪০ শতাংশ

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : রবিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

বিদেশ থেকে আমদানি করেই দেশের ভোজ্যতেলের চাহিদার সিংহভাগ মেটানো হয়। প্রতিবছর আমদানি বাড়ছেও। তবে পরিমাণে কম হলেও বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হয় ধানের কুঁড়ার তেল ও শর্ষে তেল। এ ছাড়া সয়াবিন, পামতেল, তিলের তেল, নারকেল তেল, কালিজিরার তেলসহ মোট সাত ধরনের তেল রপ্তানি হয়। এর বাইরে অনিয়মিতভাবে রপ্তানি হচ্ছে ভুট্টা কিংবা তিসির মতো অপ্রচলিত তেলও।

পাঁচ বছর ধরে একটানা এ ধরনের তেল রপ্তানি বাড়ছিল। কিন্তু গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশে উৎপাদিত তেলের রপ্তানি হোঁচট খেয়েছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যে দেখা যায়, গত অর্থবছরে তেল রপ্তানি হয়েছে ১ লাখ ৩ হাজার টন। তাতে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছে সাড়ে ১৩ কোটি মার্কিন ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল ১ লাখ ৫১ হাজার টন তেল। তাতে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছিল ২৩ কোটি ডলার। সেই হিসাবে তেল রপ্তানি কমেছে ৪০ শতাংশ। শুধু রপ্তানি কমেনি, গত অর্থবছরে তেল রপ্তানি থেকে যে আয় হয়েছে, তা ছিল গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

রপ্তানিকারকেরা বলছেন, গত বছর অভ্যন্তরীণ বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় সয়াবিন ও পামতেলের রপ্তানির অনুমোদন বন্ধ করে দেওয়া হয়। আবার ধানের কুঁড়ার তেলের ওপর সাময়িক রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল। তার প্রভাব পড়েছে রপ্তানিতে। আবার বিশ্ববাজারে দাম কমে যাওয়ায় এবং কনটেইনার ভাড়া বৃদ্ধির প্রভাবও পড়েছে রপ্তানিতে।

বাংলাদেশ থেকে তেল রপ্তানিতে শীর্ষে রয়েছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ, সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রি বা এমজিআই, স্কয়ার গ্রুপ, আকিজ গ্রুপ, বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেড, মজুমদার অ্যাগ্রোটেক ইন্টারন্যাশনাল, বগুড়া মাল্টিঅয়েল মিলস, অ্যাগ্রোটেক ইন্টারন্যাশনাল ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান। তেল রপ্তানি কমার মতো রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও কমেছে। যেমন এক বছরের ব্যবধানে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৯০টি থেকে কমে ৭১টিতে নেমেছে।

বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া প্রধান তেল হলো ধানের কুঁড়ার তেল। দেশীয় কাঁচামাল ব্যবহার করে এই তেল উৎপাদন করছে ১৮টির মতো প্রতিষ্ঠান। গত অর্থবছরে ৯২ হাজার ২১৫ টন তেল রপ্তানি হয়। এর আগে ২০২১–২২ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল ১ লাখ ২৬ হাজার টন। অর্থাৎ পরিমাণে ২৭ হাজার টন কমেছে রপ্তানি।

ধানের কুঁড়ার তেলের বড় অংশই রপ্তানি হচ্ছে অপরিশোধিত আকারে। এই তেলের একমাত্র গন্তব্য ভারত। ভারতের বাইরে গত অর্থবছরে জাপানে অর্ধলাখ ডলার মূল্যের পরিশোধিত ধানের কুঁড়ার তেলের দুটি চালান রপ্তানি হয়।

বাংলাদেশ রাইস ব্র্যান অয়েল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আবদুল আজিজ বলেন, বিশ্ববাজারে ধানের কুঁড়ার তেলের রপ্তানিমূল্য কমে গেছে। তাতে উৎপাদন খরচ তুলে আনা যাচ্ছে না। কাঁচামাল-সংকটে প্রায়ই কারখানা বন্ধ রাখতে হয়। আগে মিয়ানমার থেকে কাঁচামাল আমদানি হলেও এখন বন্ধ রয়েছে। এসব কারণেই এই তেল রপ্তানি কমেছে।

এনবিআরের তথ্যে দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রতি কেজি ধানের কুঁড়ার তেল রপ্তানি হয়েছে গড়ে ১ ডলার ৪২ সেন্টে। গত অর্থবছরে গড় রপ্তানিমূল্য ছিল ১ ডলার ১৭ সেন্ট। অর্থাৎ দাম ১৭ সেন্ট কমেছে। তবে এখন ১ ডলারের নিচে নেমেছে রপ্তানিমূল্য। রপ্তানিকারকেরা বলছেন, এটিও রপ্তানি কমে যাওয়ার একটি বড় কারণ।

বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া দ্বিতীয় প্রধান তেল হলো শর্ষে তেল। রান্না ও মানুষের দৈনন্দিন ব্যবহারের কাজে ব্যবহা করার হয় এই তেল। গত অর্থবছরে প্রায় ৪ হাজার ২৪১ টন শর্ষে তেল রপ্তানি হয়েছে, যার রপ্তানি মূল্য ছিল ১ কোটি ২৪ লাখ ডলার। মূলত প্রবাসী বাংলাদেশি ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মানুষ এই তেল ব্যবহার করে।

শর্ষে তেলের প্রধান রপ্তানিকারক প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। গ্রুপটি ২০২১-২২ অর্থবছরে বিশ্বের ৩৩টি দেশে শর্ষে তেল রপ্তানি করেছিল। সেখানে গত অর্থবছরে রপ্তানি করেছে ৪৩টি দেশে। তবু তাদের রপ্তানিও ১ কোটি ২১ লাখ ডলার থেকে কমে ৯৮ লাখ ডলারে নেমেছে।

বাংলাদেশে প্রধান দুই ভোজ্যতেল সয়াবিন ও পাম পুরোপুরি আমদানির ওপর নির্ভরশীল। গত অর্থবছরেও ২৭৬ কোটি ডলারের সয়াবিন ও পামতেল আমদানি হয়। আবার সয়াবিন বীজ মাড়াই করে দেশেও সয়াবিন তেল উৎপাদন করা হচ্ছে। গত বছরের শুরুতে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে এই দুটি তেলের দাম ও সরবরাহের সংকট তৈরি হলে রপ্তানি অনুমতি দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ কারণে এই দুটি তেলের রপ্তানি কমেছে।

এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে ৭৯ টন সয়াবিন তেল রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছে ১ লাখ ৪২ হাজার ডলার। তার আগের অর্থবছরে ১ কোটি ৪৬ লাখ ডলারের ৮ হাজার ৫৯৮ টন সয়াবিন তেল রপ্তানি হয়েছিল। একইভাবে ২০২১-২২ অর্থবছরে পামতেলের রপ্তানি ২ কোটি ৪০ লাখ ডলার থেকে কমে হয়েছে ৫৬ লাখ ডলার।

রপ্তানির তালিকায় থাকা বাকি তিন ধরনের তেল খুব সামান্য পরিমাণে রপ্তানি হয়। এ তিন ধরনের তেলের মধ্যে রয়েছে তিল, নারকেল ও কালিজিরার তেল। তিলের তেল রপ্তানি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ছিল ১ হাজার ৪৬৪ টন। রপ্তানিমূল্য ছিল ৩৩ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরে তিলের তেল রপ্তানি হয়েছিল ২ হাজার ৭২৬ টন। রপ্তানিমূল্য ছিল ৫২ লাখ ডলার। একইভাবে কালিজিরার তেল ৬৩ টন থেকে কমে ২১ টন এবং নারকেল তেল ৮২৩ টন থেকে কমে ৭৯ টনে নেমেছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ