রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় করা মামলায় ৯ জনকে আসামি করে ডিবি পুলিশের দেওয়া সম্পূরক চার্জশিট গ্রহণ করেছেন আদালত। একইসঙ্গে মামলাটি বিচারের জন্য প্রস্তত হওয়ায় ঢাকার চিফ মেট্রেপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জাকী-আল-ফারাবীর আদালত এ মামলার চার্জশিট গ্রহণ করে এ আদেশ দেন।
সম্পূরক অভিযোগপত্রে উল্লেখিত আসামিরা হলেন, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের শ্যালক ইশতিয়াক মাহমুদ, নাইমুল হাসান, ফিরোজ মাহমুদ, মীর আমজাদ হোসেন, মো. সাজু ইসলাম, রাজিবুল ইসলাম রাজু, শহিদুল আলম খাঁন কাজল, সিয়াম ও অলি আহমেদ ওরফে জনি।
আদালতের মোহাম্মদপুর থানার সাধারণ নিবন্ধন (জিআর) কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক এশারত আলী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ৯ জনকে আসামি করে আদালতে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করেন। আসামিদের মধ্যে ইশতিয়াক মাহমুদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয়। অন্য আসামিরা জামিনে রয়েছেন। এছাড়া মুজাহিদ আজমির তানহা মারা যাওয়ায় তাকে মামলার অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করা হয়।
এরপর গত ৪ অক্টোবর চার্জশিটভুক্ত আসামি ইশতিয়াক মাহমুদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। পরদিন এ মামলায় তাকে গ্রেফতারের পর আদালতে তুলে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। অপরদিকে আসামিপক্ষে জামিনের আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ নুরুল হুদা চৌধুরীর আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন।
এর আগে গত ১ জানুয়ারি ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রেজাউল করিম চৌধুরীর আদালত এ মামলাটি অধিকতর তদন্তের আদেশ দেন।
আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ২৮ মার্চ এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। সবশেষ গত ৪ ডিসেম্বর এ মামলায় ছয় জনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়। পরবর্তীতে দেখা যায়, এদের মধ্যে সাক্ষী ড. বদিউল আলম মজুমদার, খুশি বেগম ও মাহবুবুল আলম মজুমদার তাদের জবানবন্দিতে জনৈক ইশতিয়াক মাহমুদের নাম উল্লেখ করেন। পরবর্তী সময়ে গত ২৭ ডিসেম্বর আদালত এ মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায় থেকে উত্তোলন করে অধিকতর তদন্তের স্বার্থে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য ঢাকার সিএমএম বরাবর প্রেরণ করেন।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, মার্শা বার্নিকাটের গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় ২০১৮ সালের ১০ আগস্ট রাতে ড. বদিউল আলম মজুমদার বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। ২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. আব্দুর রউফ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে ১৯ জনকে সাক্ষী করা হয়।
২০২২ সালের ১ মার্চ ৯ আসামির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় আদালত অভিযোগ গঠন করেন।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২০১৮ সালে ৪ আগস্ট রাতে সুজনের (সুশাসনের জন্য নাগরিক) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের ইকবাল রোডের বাড়িতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের বিদায়ী নৈশভোজের আয়োজন করেন। ওই রাতে নৈশভোজের নামে তিনি গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনসহ আরও কয়েকজনের সঙ্গে ‘সরকার বিরোধী ষড়যন্ত্র করছিলেন’ বলে খবর পায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা। এরপর আনুমানিক রাত ১১টায় ছাত্রলীগের নাইমুল হাসান ওরফে রাসেলের নেতৃত্বে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের একটি দল ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। তারা মাশা বার্নিকাটের গাড়ি ধাওয়া করলে রাষ্ট্রদূত দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
এ সময় সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের বাড়িতেও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। দলটি বাড়ির জানালার গ্লাস ভাঙচুর করে বদিউল আলম, তার স্ত্রী ও তাদের ছেলে মাহবুব মজুমদারকে প্রাণনাশের হুমকি দেন। পরে মাহবুবকে ধাক্কা দিয়ে আঘাত করেন। একপর্যায়ে তারা বাড়ির প্রধান গেট ধাক্কাধাক্কি করে, ভয়-ভীতি দেখিয়ে চলে যান।