এক মাসের জন্য গরুর মাংসের দাম নির্ধারণ হয়েছে কেজিপ্রতি ৬৫০ টাকা। সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে কিছু শর্ত। তবে এ দামে অসন্তোষ রয়েছে মাংস ব্যবসায়ীদের একাংশের মধ্যে। তাদের দাবি খামারীরা নিজেদের সুবিধার্থে মাংসের দাম বাড়িয়েছেন। অপরদিকে খামারীরা বলছেন, দাম যৌক্তিক পর্যায়ে রাখা হয়েছে।
বুধবার (৬ ডিসেম্বর) রাতে গরুর মাংসের দাম নির্ধারণ করতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সাদেক এগ্রোতে বৈঠকে বসেন বাংলাদেশ ডেইরি ফার্ম এসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, দাম নির্ধারণ করতে বসার পর দুই পক্ষের মধ্যে বেশ উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। নির্ধারিত দামের পক্ষে স্বাক্ষর করেননি মাংস ব্যবসায়ী সমিতির একাংশ। আবার মাংস ব্যবসায়ীদের একজন বৈঠক ছেড়েও চলে যান।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দোকান মালিক সমিতির নেতারাও। বৈঠক শেষে একেক পর্যায় থেকে মিলেছে একেক রকম তথ্য।
বৈঠক শেষে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, দাম নির্ধারণ করার কিছু নাই। গরুর মাংস তার নিয়ম অনুযায়ী চলবে। কেউ কোনো দাম নির্ধারণ করবে না।
এদিকে মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম দাবি করেছেন, মাংস ব্যবসায়ীদের আপত্তির মুখেও মাংসের দাম বাড়ানো হয়েছে।
তিনি জানান, বর্তমানে বাজারে ৬০০ টাকা কেজি দরে মাংস বিক্রি হচ্ছে। সেই দাম ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৬৫০ টাকা করা হয়েছে। এবং দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্তে স্বাক্ষর করেননি রবিউল আলম।
তিনি বলেন, মিটিংয়ে মাংস ব্যবসায়ীরা অনেকেই ছিল। স্বাক্ষর খুব সম্ভবত সাদেক এগ্রোর কিছু পাতানো মাংস ব্যবসায়ী আছে, ওদেরকে দিয়ে করাইছে। ১০-১২ জন। আমরা যারা মাংস ব্যবসায়ীরা ছিলাম অনেক, আমরা কেউ স্বাক্ষর করি নাই।
খোলা বাজারে ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া মাংস হঠাৎই ৫৯০ টাকায় নিয়ে আসেন শাহজাহানপুরের মাংস ব্যবসায়ী মো. খলিল। দাম নির্ধারণের এই বৈঠকে তিনিও উপস্থিত ছিলেন। তবে তার সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়েছে বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম বলেন, খলিলকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। এ জন্য খলিল মিটিং ওয়াক আউট করছে।
কারা হুমকি দিয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কিছু মাংস ব্যবসায়ী আছে, সাদেক এগ্রোর পাতানো। এগুলোর নাম বলা যাবে না।
তিনি বলেন, ৬০০ টাকার ওপরে মাংস বিক্রি করা যৌক্তিক না। ভোক্তা অধিকারের সহায়তা নিয়ে ফার্মার এসোসিয়েশন ৬৫০ টাকা দাম নির্ধারণ করার পায়তারা করছে এবং অনধিকার চর্চা করছে।
ইমরান হোসেন বলেন, গরুর মাংসের দাম নির্ধারণ নিয়ে আমরা বাংলাদেশ ডেইরি ফার্ম এসোসিয়েশন এবং মাংস ব্যবসায়ী সমিতি বসেছিলাম। ছোট বড় মিলিয়ে দেড়শো জন মাংস ব্যবসায়ী ছিলেন। একটা কন্টোভার্সি আছে, যারা কম দামে মাংস বিক্রি করছে, তাদের একটা শুভঙ্করের ফাঁকি আছে। তারা অতিরিক্ত চর্বি এবং অতিরিক্ত হাড্ডি দিয়ে দিচ্ছে। সব কিছু বিবেচনায় নিয়ে আমরা মাংসের দাম নির্ধারণ করেছি ৬৫০ টাকা কেজি। শর্ত রাখা হয়েছে, এক কেজিতে ৭৫০ গ্রাম মাংস থাকতে হবে। ২০০ গ্রামের বেশি হাড় থাকা যাবে না, ৫০ গ্রামের বেশি চর্বি থাকা যাবে না।
মাথার মাংস, পায়ার হাড়, ভুড়ি এখনও মাংসের সঙ্গে দেওয়া যাবে না বলেও শর্ত রেখে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানান ইমরান হোসেন।
অনেকেই এই প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেননি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি স্বাক্ষর করেছেন। আমি স্বাক্ষর করেছি। যারা গতকাল মাংস ব্যবসায়ীরা এসেছিলেন, তারা সবাই এর সঙ্গে একমত প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে আমরা মাংস ব্যবসায়ীদেরই সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিয়েছি।
এই খামার মালিক জানান, এই দাম আগামী এক মাসের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এরপর বাজার দেখে দাম কমানো বা বাড়ানো হবে।