=ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার মাত্র তিনদিনের ব্যবধানে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ১২০ টাকা পর্যন্ত। আমদানি করাে পেঁয়াজের সঙ্গে হু হু করে বেড়েছে দেশি নতুন ও পুরাতন পেঁয়াজের দাম।
পাইকারিতেই ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ৮০ টাকা পর্যন্ত। আগে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া পেঁয়াজ এখন বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। তবে দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত। গত সপ্তাহে ভালো মানের দেশি পুরাতন পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকা দরে যা এখন ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বাজারে নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। যা গতকাল ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল।
সোমবার সকালে রাজধানীর খিলগাঁও তালতলা ও রামপুরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।
সব মিলে দেশের বাজারে আবারও ঝাঁজ ছড়াচ্ছে পেঁয়াজ। ১৮০ টাকার নিচে ভালো কোনো পেঁয়াজ কেনা যাচ্ছে না।
পেঁয়াজ রপ্তানিতে ভারত নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার খবর আসে শুক্রবার। এরপর বাংলাদেশের বাজারে হু হু করে বাড়তে থাকে দাম। মাত্র একরাতের ব্যবধানে শনিবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম কেজিতে বাড়ে ৮০ টাকা পর্যন্ত। এরপরের তিন দিনের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের দাম আরও বেড়ে গেলো।
এক্ষেত্রে বিক্রেতারা জানান, বাজারে চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত পেঁয়াজ নেই। পাশাপাশি পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ভারত। এতে নতুন করে বাড়ছে দাম।
তালতলা বাজারে বিক্রেতা ইউনুস হোসেন বলেন, শুক্রবার যে মানের ভারতীয় পেঁয়াজ রাজধানীর শ্যামাবাজারে বিক্রি হয়েছে ১০২ টাকা থেকে ১০৫ টাকা কেজি দরে, আজ তা বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা থেকে ১৮৫ টাকায়। এ দাম গতকালের থেকেও ২০ টাকা বেশি।
আবার দেশি পুরোনো পেঁয়াজের দাম একরাতে ৬০ টাকা বেড়েছিল। কাল (রোববার) আবারও বেড়েছে। পাইকারিতে এখন বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ২১২ টাকা কেজি দরে। দেশি নতুন পেঁয়াজের দাম ১২০ টাকা থেকে ঠেকেছে ১৯০ টাকায়।
তবে বাজারের এ অস্থিরতাকে সাময়িক বলছেন তারা। নতুন পেঁয়াজ পুরোদমে ওঠা শুরু হলে দাম কমে যাবে বলেও মত তাদের।
পুরান ঢাকার শ্যামবাজারে আহসান বাণিজ্যালয়ের আক্কাস জোয়ার্দার বলেন, ভারতে পেঁয়াজের দাম বেশি। শিগগিরই নতুন পেঁয়াজ উঠবে। তাই আমদানিকারকরা পেঁয়াজ আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন। পাশাপাশি পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ভারত। তাই সরবরাহ কিছুটা কম থাকায় পেঁয়াজের দাম সাময়িক বেড়েছে।
তিনি বলেন, দেশি পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করেছে। আবহাওয়ার কারণে কিছুটা বিঘ্ন ঘটেছে। এক সপ্তাহের মধ্যেই দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে গেলে দাম আবার কমে যাবে।
পেঁয়াজ আমদানিকারক ও শ্যামবাজার পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল মাজেদ বলেন, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় এর প্রভাব পড়বে দেশের বাজারে। এমনিতেই বাজারে দাম ঊর্ধ্বমুখী। নিষেধাজ্ঞার এ খবরে দাম আরও বাড়ছে।
তবে পেঁয়াজের এ ঊর্ধ্বমুখী বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের কঠোর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন ক্রেতারা। তাদের দাবি, ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি নিষেধাজ্ঞাকে পুঁজি করে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
অন্যদিকে পেঁয়াজের মূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে ঢাকা মহানগরসহ দেশের সব বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে অভিযান চালিয়েছে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর। রোববার ঢাকা মহানগরীতে অধিদপ্তরের ৪টি টিম বাজার অভিযান পরিচালনা করে। এছাড়া অন্যান্য বিভাগীয় শহরসহ দেশের সর্বমোট ৪০টি জেলায় একযোগে এ অভিযান পরিচালিত হয়।
এতে সারাদেশে ৪৩টি টিম বাজার অভিযানের মাধ্যমে ৮০ প্রতিষ্ঠানকে সর্বমোট ৩ লাখ ৭০ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করে। তার আগের দিনও ১৩৩টি প্রতিষ্ঠান গুনেছিল পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে বিক্রির জন্য জরিমানা।