দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারাদেশের মতো রংপুরেও প্রচারণা জমে উঠেছে। রংপুরের ৬টি সংসদীয় আসনের অন্যান্য আসনে প্রচারণায় মুখরিত পাড়া-মহল্লা। তবে প্রচারণায় পিছিয়ে রংপুর-৩ সদর আসনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। নির্বাচনী প্রচারণায় নীরব জাপা প্রার্থী গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের ও জাতীয় পার্টি। অপরদিকে প্রচারণায় অনেকটাই সরব স্বতন্ত্র প্রার্থী আনোয়ারা ইসলাম রানী (ঈগল) মার্কা।
দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত চলছে গণসংযোগ। লিফলেট বিতরণ আর মাইকিংয়ের পাশাপাশি জোরেসরে চলছে গণসংযোগ। পাড়া মহল্লার প্রতিটি বাসা ও দোকানে গণসংযোগে চাওয়া হচ্ছে ভোট। স্থানীয় প্রার্থী দাবি করে দোয়ার পাশাপাশি ঈগল মার্কায় ভোট চাচ্ছেন তিনি। চষে বেড়াচ্ছেন রংপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ড ও পাড়া মহল্লা।
সরেজমিনে দেখা যায়, ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পরপরই শুরু হয়েছে নির্বাচনী প্রচারণা। রংপুরের ৬টি আসনের ৫টি সংসদীয় আসনে প্রচারণা শুরু হলেও দৃশ্যমান প্রচারণা চোখে পড়েনি এখনও। রংপুর নগরীর কোথাও এখন পর্যন্ত কারো পোস্টার দেখা যায়নি। শুধুমাত্র জাপা, জাসদ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী রানীর মাইকিং করতে দেখা গেছে নগরীতে। দৃশ্যমান প্রচারণায় লিফলেট বিতরণ কিংবা আনুষ্ঠানিক প্রচারণায় শুধু দেখা গেছে তৃতীয় লিঙ্গের ঈগল প্রতীকের প্রার্থী আনোয়ারা ইসলাম রানীকে।
অন্যদিকে এই আসনের অন্যতম প্রার্থী জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের নির্বাচনে মনোনয়ন সংগ্রহ, জমা, প্রতীক বরাদ্দ পর্যন্ত রংপুরে আসেননি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে ভোটারদের। এই আসনে আসন ভাগাভাগির কারণে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী তুষার কান্তি মন্ডল। যার কারণে জমে উঠেনি এই আসনের নির্বাচন।
আনোয়ারা ইসলাম রানী বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে মানুষ নির্বাচন বিমুখ। নির্বাচনে ভোট দিতে আসতে চায় না। কিন্তু আমি যেখানেই যাচ্ছি, ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। ভোটারদের একটাই কথা, এবার ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার কোনো ইচ্ছে ছিল না। কেবল রানী আপাকে ভোট দিতেই কেন্দ্রে যাব। ভোটারদের আক্ষেপ, এখন পর্যন্ত কোনো প্রার্থীকে তারা দেখেননি। তাই মানুষের মাঝে একঘেয়েমি এসেছে। মানুষ এখন পরিবর্তন চাচ্ছে। এমপি নির্বাচিত হলে কৃষিভিত্তিক শিল্প কলকারখানা স্থাপন ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাসহ রংপুরের উন্নয়নে ২১টি প্রস্তাব বাস্তবায়নে জোর দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন, মনোনয়ন জমা দেয়া থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত এই আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী জিএম কাদের রংপুরে না আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করে রানী বলেন, ওনারা এখনই আসার সময় পান না, তাহলে নির্বাচনের পর কখন আসবেন? আর কি সেবা করবেন, কি উন্নয়ন করবেন, তা বোঝা যায়।
এ বিষয়ে জাপা প্রার্থী গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের নির্বাচনে সমন্বয়কারী সদস্য ও কেন্দ্রীয় জাতীয় পার্টির সাংস্কৃতিক সম্পাদক আজমল হোসেন লেবু জানান, ২১ ডিসেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণা শুরু হবে। আজকে নির্বাচনী এলাকায় পোস্টার সাটানোর জন্য বিতরণ করা হবে। তবে কবে নাগাদ প্রার্থী জিএম কাদের প্রচারণায় যুক্ত হবেন সে বিষয়ে তিনি জানাননি।
উল্লেখ্য রংপুর-৩ (সিটি করপোরেশন-সদর) আসনে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন ৬ জন প্রার্থী। এরমধ্যে ঈগল প্রতীক নিয়ে লড়ছেন তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধি হিসেবে আনোয়ারা ইসলাম রানী, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের লাঙ্গল, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির আব্দুর রহমান রেজু, বাংলাদেশ কংগ্রেসের একরামুল হক, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সহিদুল ইসলাম এবং ন্যাশনাল পিপলস পার্টির শফিউল আলম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৯৪ হাজার ৭৬৮ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৪৭ হাজার ৪৭২ জন এবং মহিলা ভোটার ২ লাখ ৪৭ হাজার ২৯৪ জন, আর হিজড়া ভোটার মাত্র ২ জন। এবারে কেন্দ্র সংখ্যা ১৭৫ এবং ভোটকক্ষ ১ হাজার ১৬টি।